দ্বিধার কোন শেষ নেই। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত নিজের ক্যারিয়ারটা নিয়ে নিশ্চয়ই দ্বিধায় থাকেন। তিনি কখন দলে সুযোগ পাবেন। কখন দলে তাঁর কি রোল হবে এসব কিছুর যেন সঠিক কোন উত্তর তাঁর কাছে কখনোই থাকে না। তবুও তিনি যখন সুযোগ পান, চেষ্টা করেন নিজের সেরাটা দিয়ে যাওয়ার। হোক সেটা বল হাতে অথবা ব্যাট।
এই যে যেমন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজটার কথাই ধরা যাক। এখানটায় তাঁর খেলার কথাই না। কেননা টি-টোয়েন্টি দলে নিয়মিত মুখ মেহেদী হাসান। একজন অলরাউন্ডার হিসেবে মেহেদী নিয়মিত। তাছাড়া একজন স্ট্রাইক বোলার হিসেবেই তিনি খেলে থাকেন। পারফরমেন্সেও তাঁর রয়েছে ধারাবাহিকতা। এমন একজন খেলোয়াড়কে বসিয়ে জাতীয় দলে আসা যাওয়ার মাঝে থাকা একজন খেলোয়াড়কে দলে জায়গা করে দেওয়াটা যেন রীতিমত একটা জুয়া।
তবে সে জুয়ায় ষোল আনা সফল বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। প্রথম ম্যাচে যেখানে বাংলাদেশের মূল স্ট্রাইক বোলাররা রীতিমত তুলোধুনো হয়েছেন। সেখানে মোসাদ্দেক বল হাতে ছিলেন মোটামুটি কম খরুচে। সাতের আশেপাশে রান দিয়েছেন। উইকেটও নিয়েছেন তিনি। ওভার করেছেন তিন খানা। পরের ম্যাচটাও অধিনায়কের ভরসা মোসাদ্দেক। এদিন মেহেদী হাসান ফিরলেও বসে থাকলেন নাসুম আহমেদ।
দ্বিতীয় ম্যাচের প্রথম ওভারটাই নুরুল হাসান সোহান বল তুলে দিলেন মোসাদ্দেকের হাতে। শুরুতেই বাজিমাত। ইনিংসের প্রথম বলেই মোসাদ্দেকের শিকার রেগিস চাকাভা। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান মোসাদ্দেক দিলেন তাঁর হাতেই চাকাভাকে বন্দী করে। সে ওভারেই মোসাদ্দেক প্যাভিলনে ফেরান প্রথম ম্যাচের অর্ধশতক করা ব্যাটার ওয়েসলি মাদিভেরেকে। প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাত।
ভাল ছন্দে রয়েছেন মোসাদ্দেক। তাঁকে সুযোগটা দেওয়া উচিৎ। অন্তত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মত সোহান সরিয়ে নেননি মোসাদ্দেককে। বরং তিনি আস্থা রেখেছেন। পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে মোসাদ্দেককে দিয়ে করিয়ে নেন তিন ওভার। এর আগে অবশ্য মোসাদ্দেক পার্টটাইমার হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছেন। তবে মোসাদ্দেক যেন এদিন ছিলেন অভাবনীয় এক ফর্মে। তিনি যেন বাড়তি কিছু মাথায় আনছিলেন না। নিজের কাজটা ঠিকমত করে যাওয়ার চেষ্টাই করছিলেন।
দল তাঁর উপর আস্থা রেখেছে, অধিনায়ক রেখেছে। তিনি যেন চেয়েছেন নিজেকে প্রমাণ করতে। অন্তত বল হাতে। তিনি সে কাজটাই করলেন। একাহাতে ধসিয়ে দিলেন জিম্বাবুয়ের পুরো টপ অর্ডারকে। নিজের ক্যারিয়ারের প্রথমবারের মত ফাইফার নেওয়ার স্বাদ পেলেন মোসাদ্দেক। একে একে জিম্বাবুয়ের পাঁচটি উইকেট পুরে ফেলেন নিজের পকেটে। জিম্বাবুয়ের প্রথম পাঁচ উইকেটের পাঁচটিই মোসাদ্দেকের শিকার।
এমন প্রতিদানের অপেক্ষাই যেন ছিল গোটা বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে এই পারফরমেন্সেও নিশ্চয়ই মোসাদ্দেক নিশ্চিত নন তিনি দলে টিকে থাকবেন কি-না। নাকি আবার চলে যাবেন দৃশ্যপটের বাইরে। পারফরম করেও মোসাদ্দেকের দ্বিধায় থাকতেই হয়। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে বেশ ভাল মানের একজন পারফরমার হিসেবেই বিবেচিতি হন মোসাদ্দেক।
তবে জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট খেলার সুযোগটা মেলে না। টি-টোয়েন্টিতে তাঁর রোলটা থাকে একজন স্লগার হিসেবে। তবে স্লগার রোলটা নিশ্চয়ই তিনি খুব বেশি একটা উপভোগ করেন না। ইনিংস বিল্ডআপ করার কাজটা তিনি হয়ত সামলে নিতে পারবেন অনায়াসে। তবে থিতুই যেন হওয়া হয় না। এবার অন্তত এমন ভূয়সী পারফরমেন্সের জন্যে তিনি একটা লম্বা সময় ধরে জাতীয় দলে থাকার নিশ্চয়তা পেতে চাইবেন। অন্তত তাঁর পছন্দসই রোলে তাঁকে খেলতে দেওয়া উচিৎ। কেবল তখনই মোসাদ্দেক নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টাটা করতে পারবে।
তবে তাঁকে নিয়ে যে ‘জুয়া’ আরও একদফা হবে না তা বলে দেওয়া দুষ্কর। খুব বেশি প্রতিভাবান তিনি কি না সে নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু নিজের দিনে ঠিক কতটা ভয়ংকর তিনি তাঁর প্রমাণ তো রাখলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে। নতুন দিনের সুবাতাসে অন্তত মোসাদ্দেক স্থায়ী হোক জাতীয় দলে, মোসাদ্দেক নিজেও হয়ত তেমনটাই প্রত্যাশা করেন।