উদার দিলের উদাহরণ

কত পাগলাটে ঘটনাই তো ঘটায় একজন ভক্ত। বিশ্বকাপ এলেই তো এই বাংলাদেশের বুকেই দেখা মেলে কতশত পাগল ফুটবল ভক্তের। কেউ প্রিয় দলের বিশাল লম্বা পতাকা বানাচ্ছেন তো আবার কেউ পুরো বাড়ি রঙ করছেন প্রিয় দলের রঙে।

কত পাগলাটে ঘটনাই তো ঘটায় একজন ভক্ত। বিশ্বকাপ এলেই তো এই বাংলাদেশের বুকেই দেখা মেলে কতশত পাগল ফুটবল ভক্তের। কেউ প্রিয় দলের বিশাল লম্বা পতাকা বানাচ্ছেন তো আবার কেউ পুরো বাড়ি রঙ করছেন প্রিয় দলের রঙে। ফুটবলের আবেগটা ধারক ও বাহক তো এমন সব পাগলাটে ভক্তরাই। এদের ছাড়া ফুটবল ঠিক বনে যেত বর্ষার দিনে খরায় চৌচির হওয়া মাঠের মত।

এমনই এক ভক্তকে অন্যরকমভাবে সম্মাননা দিল ইংল্যান্ডের ক্লাব এভারটন এফসি। মৌসুম শুরু হতে খানিকটা সময় বাকি। এর আগেই ইউরোপের সব ক্লাবগুলোই প্রাক মৌসুম প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতেই ব্যস্ত। তেমনই এক ব্যস্ত সূচিতে এভারটনের মুখোমুখি ইউক্রেনের ক্লাব ডায়নামো কিয়েভ। সেখানেই সমর্থকদের সম্মান জানানোর এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করে এভারটন।

যেহেতু ম্যাচটি ফ্রেন্ডলি, তাই খুব বেশি বাঁধাধরা নিয়ম নেই এখানে। আর সে সুবাদেই নিজেদের এক ভক্তকে মাঠে নামিয়ে দেয় এভারটন। ঘরের মাঠে এমন এক দৃষ্টান্ত সত্যিই বেশ প্রশংসনীয়। পল স্ট্রাটন নামের সে ভক্তকের পেনাল্টি নিতে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নামানো হয়। তিনি গোলও করেন। তবে সেখানে ডায়নামো কিয়েভের গোলরক্ষকের উদারতাও একটা বড় কারণ।

উদারতা দেখানোটা যেন ছিল অবধারিত। কেননা যুদ্ধবিদ্ধস্ত একটা দেশের শরণার্থীদের জন্যে আপ্রাণ কাজ করে যাচ্ছেন পল স্ট্রাটন। নিজের গাড়িতে করে তিনি শরণার্থীদের সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছেন একেবারে যুদ্ধের শুরু থেকে। ম্যাচটির শিরোনাম ছিল ‘ম্যাচ ফর পিস’। অর্থাৎ শান্তির আহ্ববান জানিয়ে এই ম্যাচের আয়োজন। আর এমন এক ম্যাচেই একেবারে সম্পূর্ণ আলাদা এক উদযাপন নিঃসন্দেহে একটা দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।

ডায়নামো কিয়েভের সাথে ম্যাচটি ছিল এভারটনের শেষ প্রাক মৌসুম প্রস্তুতি ম্যাচ। সে ম্যাচটা রীতিমত অবিস্মরণীয় করে রাখল মার্সিসাইড ক্লাবটি। স্ট্রাটনেরও নিশ্চয়ই বাকিটা জীবন অদ্ভুত একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে যাবে। নিজের প্রিয় ক্লাবের হয়ে মাঠের নামার স্মৃতিটা নিশ্চয়ই মুছে যাবে না অতি সহজেই। ক্লাবের প্রতি তাঁর ভালবাসা বেড়ে যাবে বহুগুণে।

বাড়াটাও তো স্বাভাবিক। সব ক্লাব তো আর নিজের সমর্থকে জন্যে এতবড় সুযোগ করে দেয় না। এভারটনের এমন কাণ্ড একটা মাইলফলক, একটা উদাহরণ হয়ে রইবে ইংলিশ ফুটবলে। সে কথা বলতে খুব বেশি ফুটবল বোদ্ধা হবার প্রয়োজন নেই।

ফুটবল খেলাকে ঘিরে যত উন্মাদনা সবতো এই সমর্থকদেরই অবদান। দলের একেবারে করুণ সময়েও কিছু কিছু দর্শক-সমর্থক ছেড়ে যান না ক্লাবকে। পল স্ট্রাটন নিশ্চয়ই তেমন একজন। মাঠের ফুটবলটা ভাল করে খেলে সমর্থকদের উল্লাসে ভাসানো ছাড়া প্রতিদান দেওয়ার মত তেমন কোন রাস্তা খোলা থাকে না। তবে এভারটন দেখিয়ে দিলো ঠিক এমন করেও একজন নিঃস্বার্থ সমর্থক ও একজন প্রকৃত ভাল মানুষকে সম্মান দেওয়া যায়। তাঁর সমর্থন আর ভাল কাজের পুরষ্কার দেওয়া যায়।

পল স্ট্রাটনের এক গোলের সুবাদে ৩-০ গোলের জয় পেয়েছে ইংলিশ ক্লাবটি। এর মধ্যে দিয়ে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের দলটির প্রস্তুতি বেশ ভালই হয়ে গেল নিশ্চয়ই। আসছে মৌসুমে একটা ভাল সময় পার করবার প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নামবে দলটি। সাথে পূর্ণ সমর্থন থাকবে সমর্থকদের।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...