কাগজে-কলমে বাংলাদেশের সফলতার বিশ্বকাপ কেটেছে। তবে সফলতার মানদণ্ড যদি হয় স্রেফ তিন ম্যাচ জয়, তবে নিশ্চয়ই তা ভয়ংকর। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ কোন কোন ক্ষেত্রে মাঝারি মানের দলের থেকেও কম কিছু। এবারের বিশ্বকাপে সেটাই যেন আবার প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা।
গড়পরতার থেকেও নিচের দিকে ছিল অনেকের পারফরমেন্স। তবে সত্যিকার অর্থেই এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের রয়েছে প্রাপ্তি। সেটা রিশাদ হোসেন ও তাওহীদ হৃদয়। পাশাপাশি তানজিম হাসান সাকিবের মত এক আগ্রাসী পেসার পাওয়াও প্রাপ্তির তালিকায় হবে যুক্ত।
তারা যখন নিজেদের নিঙড়ে দিয়েছেন। তখন দুই অভিজ্ঞ পেসারও হাত বাড়িয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান ক্ষেত্র বিশেষে দলের জন্যে পারফরম করেছেন কিংবা করার চেষ্টা চালিয়েছেন।
তবে এসব কিছু ছাপিয়ে বিপরীত চিত্রের অবশ্য অভাব নেই। যার শুরুটাই হয়ত করা যাবে সাকিব আল হাসানকে দিয়ে। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, ব্যাট হাতে ছিলেন নখদন্তহীন। কঠিন সময়ে বল হাতে বাইশ গজের সামনে আসার সাহসও করেননি।
একটি ম্যাচ ছাড়া পুরো বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের কোন ইম্প্যাক্ট নেই। অধিনায়ক হিসেবে নাজমুল শান্ত কিছু ম্যাচে দারুণ করেছেন বটে, কিন্তু পারফরমেন্স বিচারে তিনি রয়ে যাবেন খারাপের কাতারে। ব্যাট হাতে নিদারুণ বাজে সময় পার করেছেন। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক। শান্তর সেই নেতৃত্ব ফিল্ডার সাজানোতেই ছিল সীমাবদ্ধ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ব্যাটার শান্তর যেন নেই কোন অস্তিত্ব।
সেই কাতারে আছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ প্রশ্নবিদ্ধ। গোটা বিশ্বকাপে তিনি পলায়নপর ব্যাটিং প্রদর্শনই করে গেছেন। যদিও টুকটাক বল হাতে ইকোনমিক্যাল ওভার করেছেন। কিন্তু তাতে তো আর আমুল বদলে যায়নি ম্যাচের পরিস্থিতি। তাছাড়া বড্ড গা বাচিয়ে খেলেছেন তিনি। নিজের নামের পাশে সংখ্যা বাড়িয়েছেন। দল তাতে উচ্ছন্নে গেলেও তিনি তা ভ্রুক্ষেপ করেননি।
ব্যর্থদের তালিকায় যুক্ত হবেন, জাকের আলি অনিক ও তরুণ তানজিদ হাসান তামিমও। তারা তো যারপরনাই হতাশ করেছেন সকলকে। আগ্রাসী ব্যাটিং ছিল তাদের কাছে প্রত্যাশিত। কিন্তু আগ্রাসন তো দূরে থাক, ঠিকঠাক ব্যাটিংটাই যেন তারা করতে পারেননি। বড় মঞ্চে বাংলাদেশের পক্ষে অভিজ্ঞতা যেমন কাজ করেনি, তেমনি মুখ থুবড়ে পড়েছে তারুণ্য।
এই দুইয়ের মাঝে থেকেছেন লিটন কুমার দাস। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এতটা অসহায় আর নির্লিপ্ত লিটনকে এত লম্বা সময় ধরে হজম করা কষ্টকর। নিজের খারাপ সময়ের মধ্যেও উইকেটের পেছনে ছিলেন দূর্দান্ত। ব্যাট হাতে ভাল খেলার চেষ্টা করেছেন। দু’টো ইনিংসে ক্লিক করেছেন। বাকিগুলোতে ভাল শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি।
বাংলাদেশের জার্সিতে এবারের বিশ্বকাপের একাদশে সুযোগ পাওয়া শেখ মেহেদী বল হাতে ইকোনমিক্যাল পারফরমেন্স করেছেন বটে। ব্যাট হাতে ঠিকঠাক সুযোগই পাননি। তাকে নিয়ে আলোচনা তাই অমূলক।
একটা দলের অর্ধেকই যখন আন্ডার-পারফরমার, তখন নিশ্চয়ই বড় কিছু অর্জন করবার স্বপ্ন দেখা অনুচিত। তবুও সেমিফাইনাল খেলবার সুযোগ দিয়েছিল হাতছানি। আন্ডার-পারফরমার দিয়ে ঠাসা দলটা সে সুযোগটাও লুফে নিতে পারেনি। ব্যর্থতার ষোলকলা সেখানেই পূর্ণ হয়। ও না, এটা তো সফলতম বিশ্বকাপ যাত্রা!