ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েকে নিয়ে ক্রিকেটার মা হাজির হয়েছিলেন ড্রেসিং রুমে। পাকিস্তানের ক্রিকেটার বিসমাহ মারুফের সেবার তাঁর মেয়ের সাথে তোলা স্নিগ্ধ সব ছবিগুলো যেন এক প্রশান্তির বিস্তার ঘটিয়েছিল পুরো সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। মা-মেয়ের সম্পর্কটা পৃথিবীর অন্য যেকোন সম্পর্কের চাইতেও পবিত্র। তবে নারীদের এই নব জাগরণের যুগে মা-মেয়ের গল্পটা থেমে নেই মায়ের কোল অবধি। তেমনই এক উদাহরণের দেখা মিলল এবারে নারী এশিয়া কাপের আয়োজনে।
মা-মেয়ে জুটির একটি টুর্নামেন্টের একই আসরে অংশ নেয়া ব্যাপারটি এমনিতেই চমকপ্রদ। আর এই চমকপ্রদ বিষয়টি ঘটেছে এবারের এশিয়া কাপের মঞ্চে। কথা হচ্ছিল সালিমা ইমতিয়াজ ও কায়নাত ইমতিয়াজকে নিয়ে। মা সালিমা ইমতিয়াজ দায়িত্বে আছেন আম্পায়ার হিসেবে আর মেয়ে কায়নাত ইমতিয়াজ অংশগ্রহণ করেছেন পাকিস্তান দলের হয়ে। মেয়ে প্রত্যক্ষভাবে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং মা পরোক্ষভাবে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। মা-মেয়ে দুইজনই পাড়ি জমিয়েছেন বাংলাদেশের সিলেটে। ক্রিকেটের দুনিয়া সাক্ষী হয়ে রইলো এমন অদ্ভুত ঘটনার।
এমনিতেও নারীদের এই এশিয়া কাপের বিশেষত্ব অন্যরকম ছিল। কারণ এই প্রথম টুর্নামেন্ট পুরোপুরি পরিচালিত হচ্ছে নারী অফিসিয়ালদের দ্বারা। থাকছে না কোন পুরুষ আম্পায়ার কিংবা রেফারী। এশিয়া কাপের ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ছয়টি দেশের নয়জন আম্পায়ার। কায়নাত ইমতিয়াজের মা তাঁদেরই একজন।
মা সালিমা ইমতিয়াজকে নিয়ে তাই বেশ গর্বিত পাকিস্তান দলের এই অলরাউন্ডার। সিলেট আউটার ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার নারী এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে এশিয়া কাপের এবারের আসরে আম্পায়ার হিসেবে অভিষেক ঘটে সালিমার। আর নিজের মায়ের এমন কীর্তিতে উচ্ছ্বসিত কায়নাত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
যদিও অক্টোবরের দুই তারিখ মালয়েশিয়ার বিপক্ষে পাকিস্তানের উদ্বোধনী ম্যাচে কায়নাত ইমতিয়াজ শুরুর একাদশে জায়গা পাননি। তাতে কি, আপাতত প্রাণভরে মায়ের অর্জন উপভোগ করছেন তিনি। পাশাপাশি মা-মেয়ের পথচলার সঙ্গী বাবাকেও ধন্যবাদ দিতে ভুলেননি কায়নাত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে তিনি লেখেন, ‘এসিসি নারী এশিয়া কাপের একজন আম্পায়ার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি আমার মাকে। তাঁর এই অর্জনে আমি অনেক গর্বিত। তিনি একজন দারুণ উজ্জীবিত ব্যক্তি। পাকিস্তানকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন তাঁর সবসময় ছিল, সে স্বপ্ন লালন করতে তাঁকে এতদিন দেখেছি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে আজ, তিনি পাকিস্তানকে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন। আমরা দুজন একসঙ্গে পাকিস্তানকে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছি। আমি খুবই প্রফুল্লিত, আলহামদুলিল্লাহ!’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবাকে অনেক অনেক অভিনন্দন যিনি আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে সমর্থন জুগিয়েছেন। আমাদের উৎসাহিত করেছেন। আমাদের উপর কখনোই ভরসা হারিয়ে ফেলেননি এবং আমাদের সেরা সমালোচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।’
সালিমা ইমতিয়াজ সেই ছোট্টবেলা থেকেই ক্রিকেটপ্রেমী ছিলেন। কিন্তু নিজে ক্রিকেটার হওয়ার সুযোগটুকু পাননি বলে, অপূর্ণ স্বপ্নটা মেয়েকে দিয়ে পূরণ করেছেন। কায়নাত ইমতিয়াজের ক্রিকেটের দুনিয়ায় পথচলা শুরু হয় এক দশকেরও কিছু সময় আগে। যদিও জাতীয় দলে থিতু হতে পারেন নি।
সবমিলিয়ে পাকিস্তানের হয়ে পনেরোটি ওয়ানডে ও বিশটি টি- টোয়েন্টি খেলেছেন। ত্রিশ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার জায়গা পেয়েছেন এই এশিয়া কাপের স্কোয়াডেও। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বাইশ গজে খেলার সুযোগ পেলে এই আসরে আমরা একই মঞ্চেই এই মা ও মেয়ের জুটিকে ভিন্ন ভূমিকায় দেখতে পাবো। কি দারুণ বিষয়ই হবে তা! ক্রিকেটের দুনিয়া মুখিয়ে থাকবে এই অভূতপূর্ব ঘটনা দেখার জন্য।