নার্ভাস হয়েছিলেন, ভয় পাননি

জীবনে প্রথম অপারেশন।

ছোটবেলা থেকে মানুষের শরীরে দু চারটে ডাক্তারের কাটাকুটির দাগ লেগেই যায়। খেলোয়াড় হলে তো আর রক্ষে নেই। বছর বছর অপারেশন হতে থাকে। এই যেমন মাশরাফির দেহে কতোগুলো অপারেশনের দাগ আছে, গুনে শেষ করা যাবে না। এই দিক থেকে অত্যন্ত ব্যতিক্রম মুমিনুল হক।

২৯ বছরের এই জীবনে কখনো ডাক্তারের ছুরি কাঁচির নিচে এর আগে যেতে হয়নি।

ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রওনা দেওয়ার আগে বুকটা একটু কাঁপছিলো। কথাটা তুলতেই মুমিনুল জোর প্রতিবাদ করলেন। বোঝাতে চাইলেন, তিনি একটুও ভয় পাননি। রীতিমতো জোর দিয়ে এক গাল হেসে বললেন, ‘ভয় পাই নাই। সত্যি। নিজেকে বলছিলা, হোক প্রথম অপারেশন। ভয় পাবো না। আরেহ, আঙুলের অপারেশনে কী কেউ মরে যায় নাকি! বুকের, মাথার অপারেশন হলে কিন্তু ভয় পেতাম। আঙুলের বলে আর ভয় পাইনি।’

এখন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। অনেকদিন ধরেই দেশের সেরা ব্যাটসম্যান। কিন্তু মানুষটা সেই আগের মতোই আছেন: রসিক, সহজ এবং মজার।

মুমিনুলের সাথে একটু যার মেশার অভিজ্ঞতা আছে, তিনি জানেন, নিজের কষ্ট চেপেও কেমন রসিকতা করতে পারেন এই ব্যাটসম্যান। তাই একদিকে হাসছিলেন, আরেকদিকে আঙুলের ব্যাথা নিয়ে বেড়াচ্ছেন।

করোনা থেকে সেরে উঠে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট শুরু করতে যাচ্ছিলেন মুমিনুল। কিন্তু গত ২৮ নভেম্বর জেমকন খুলনার বিরুদ্ধে ম্যাচে ফিল্ডিংয়ের সময় আঙুলে ব্যথা পান মুমিনুল। এরপর সেই আঙুলে অস্ত্রপচার করাতে হয়েছে তাকে। এই অপারেশনটা হয়েছে দুবাইতে।

অপারেশনের কথা শুনে ভয় না পেলেও নার্ভাস হয়েছিলেন, সেটা স্বীকার করতে একটুও দ্বিধা নেই এই বাহাতি ব্যাটসম্যানের। বলছিলেন, ‘একটু নার্ভাস লাগছিলো। বিশেষ করে আঙুলটা ব্যাটিংয়ের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন তো। তাই কী হয়, এ নিয়ে বেশ টেনশনে ছিলাম। পরে ওখানে গিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলার পর নিশ্চিন্ত হয়েছি। উনি বললেন, কোনো ঝুকি নেই এই অপারেশনে। তাই ফুরফুরেই ছিলাম।’

অবশ্য একেবারে নির্ভার তিনি থাকতে পারছেন না। বেশ সতর্ক একটা জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

হাত বেশির ভাগ সময় ঝুলিয়ে রাখতে হচ্ছে স্লিংয়ে। খুব সতর্কও থাকতে হচ্ছে, ক্ষতে ঘাম লাগলে ইনফেকশন হতে পারে। আঙুল নাড়ানো বা ঝাঁকুনি লাগানো যাবে না কোনোমতেই। অস্বস্তির উপকরণ প্রচুর।

তার পরও মুমিনুল হকের মনে স্বস্তির কমতি নেই। অস্ত্রোপচার খুব ভালো হয়েছে। সেরে ওঠার গতি ভালো। দুবাইয়ের ডাক্তার বলেছেন, সপ্তাহ পাঁচেকের মধ্যে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজটা মিস না হওয়ারই কথা। আশা নিয়েই টেস্ট অধিনায়ক বলছিলেন, ‘ডাক্তার তো বলেছে, ৫ থেকে ৬ সপ্তাহ লাগতে পারে। বিসিবির ডাক্তার, দেবাশীষদার সাথে ওই ডাক্তারের যোগাযোগ হয়েছে। আসল অবস্থা আমি ঠিক জানি না। তবে আমি আশা করছি, যত তাড়াতাড়ি মাঠে ফেরা যায়। ডাক্তার বলেছেন, দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। এটা ধরে রাখতে পারলে আগে আগেই মাঠে ফিরতে পারবো বলে আশা করি।’

যোগাযোগ করা গেলো বিসিবির প্রধাণ চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরীর সাথে। তিনি বললেন, তাদের অনুমান, মাস খানেকের মধ্যে মাঠে ফিরতে পারবেন মুমিনুল। তবে কথা দিতে চান না আগেই, ‘ওর যে ডাক্তার অপারেশন করেছেন, উনি বলেছেন সপ্তাহ পাচেক লাগবে। এখন উনি তো ক্রিকেটার হিসেবে বলেননি। ওকে মাঠে ফিরে অনেক লোড নিতে হবে। ঘন্টায় এক শ কিলোমিটার গতির বল খেলতে হবে। ফলে এখানে একটু হিসাব নিকশান থাকে। ব্যাপারটা নির্ভর করে, ওর সেরে ওঠাটা কি গতিতে হচ্ছে, তার ওপর। তবে আমরা আশা করছি, ও পাচ সপ্তাহের আগেই মাঠে ফিরবে।’

সে জন্যই নিজেকে প্রস্তুত করছেন। আর সেই সাথে সতীর্থদের খেলার খবর রাখছেন।

নিজে খেলতে না পারলেও সতীর্থরা যে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ভালো করছেন, সে খবর আছে মুমিনুলের কাছে। খেলা দেখতে না পারলেও তাই বিশেষ করে জুনিয়রদের নিয়ে খুব উচ্ছসিত, ‘ছোটাছুটির মধ্যে থাকায় খেলা খুব বেশী দেখা হয়নি। তবে খোজ রাখছি। বিশেষ করে জুনিয়ররা খুব ভালো পারফরম করছে। এটা আমাদের ক্রিকেটের জন্য খুব ভালো খবর। আশা করি, ওরা এটা কন্টিনিউ করে যেতে পারবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link