রাসেল ডমিঙ্গো যেটা বলেছেন, সেটাকে এক শব্দে বলে – তামাশা।
একটা আর্ন্তজাতিক সিরিজের আগে তিনি বলছেন, তিনি প্রথম চার ম্যাচে দুই দেশসেরা উইকেটরক্ষকের পরীক্ষা নেবেন। যে ভালো করবে, সে পঞ্চম ম্যাচ খেলবে।
আর ইউ কিডিং!
এটা কী পাড়াতো খেলা? তামাশার সব সীমা অতিক্রম করে গেছে এই কথা। আপনি সর্বোচ্চ পর্যায়ের খেলায় এসে দু জন শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়কে পরীক্ষায় নামিয়ে দিতে পারেন না। এ জাতীয় কথাও প্রকাশ্যে বলতে পারেন না।
এই দু’জন খেলোয়াড়ের একজনের নাম মুশফিকুর রহিম।
মুশফিক কখনোই দেশের সেরা উইকেটরক্ষক ছিলেন না। তার প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন খালেদ মাসুদ পাইলটের বদলী। ব্যাটিং দিয়ে পাইলটকে হারিয়েছিলেন। মাঝে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন ধীমান ঘোষ; তিনি নিজে আইসিএলে চলে গিয়েছিলেন। আর গত কয়েক বছর ধরে তার চ্যালেঞ্জার লিটন দাস ও কাজী নুরুল হাসান সোহান।
আমি নিশ্চিত যে, খুব বেশি মানুষ মুশফিককে সেরা উইকেটরক্ষক বলবেন না।
কিন্তু, মনে রাখতে হবে যে, মুশফিক গাঙের জলে ভেসে এখানে আসেননি। তিনি আকাশ থেকেও টপকে পড়েননি। ২০০৫ সাল থেকে এই বাংলাদেশ দলকে সার্ভিস দিচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে সিংহভাগ সময় তিনি উইকেট কিপিং করেছেন।
মুশফিককে কিপিং থেকে সরিয়ে দিন; কোনো আপত্তি আমরা করবো না। কিন্তু এই ১৬ বছর ধরে শীর্ষ পর্যায়ে খেলা একজন খেলোয়াড়কে আপনি মানুষের সামনে এসে পরীক্ষা দিতে বলতে পারেন না। এটা রীতিমতো আদব কায়দার ঘাটতি আছে বলে প্রমাণ করে।
কী হবে?
প্রথম দুই ম্যাচে সোহান খুব ভালো কিপিং করলেন। পরের দুই ম্যাচে মুশফিক কিছুটা খারাপ করলেন। তারপর? আপনি পঞ্চম ম্যাচে সোহানকে ফিরিয়ে আনবেন? ফালতু এই কাজটার ভয়াবহ প্রভাব কল্পনা করেছেন?
এর ফলে মুশফিকের আত্মবিশ্বাস জিনিসটাই শেষ হয়ে যাবে।
এতো সিনিয়র একজন খেলোয়াড় জানবেন যে, তিনি তরুণতর একজন খেলোয়াড়ের সাথে প্রতিযোগিতায় হেরে গেছেন। এর পরিষ্কার ফল পড়বে মুশফিকের ব্যাটিংয়ে। এমনিতেই মুশফিক আবেগপ্রবণ মানুষ। তারপর এভাবে জনসমক্ষে তার সম্মান নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি তো ভেঙে পড়বেনই।
আসলে রাসেল ডমিঙ্গো কী বুঝতে পারছেন যে, তিনি কাকে নিয়ে এই ছেলেখেলা করছেন?
মুশফিক বাংলাদেশের ক্রিকেটের রীতিমতো একজন কিংবদন্তি। তাঁকে নিয়ে এরকম তামাশা করার অধিকার কারো নেই।
এই ধরণের অবমাননা কারোর প্রাপ্য নয়। আজ মাশরাফি দলের বাইরে; সেটা যথার্থ। এই সময়ে মাশরাফির আর জাতীয় দলে জায়গা নেই। কিন্তু আপনি যদি তাকে ডেকে এনে বলেন যে, শরিফুল আর তুমি ২ ওভার করে বল করো; যে ভালো করবে, সে খেলবে। সেটা কত বড় অপদার্থের কাজ, বুঝতে পারছেন?
তামিমকে আমি টি-টোয়েন্টি দলে চাই না। তাই বলে আপনি তামিমের পরীক্ষা নিতে পারেন না। আপনি বলতে পারেন না যে, তামিম আর নাঈমের মধ্যে যে ভালো করবে, সে বিশ্বকাপ খেলবে। এই পরীক্ষা দেওয়ার কাজটা এরা সবাই গত এক যুগ ধরে করেছেন।
এখন তারা চলবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন কোচ ও ম্যানেজমেন্ট। সেই কোচ সংবাদ সম্মেলনে এসে বললেন, তিনি মুশফিক আর সোহানের পরীক্ষা নেবেন।
মানে, তিনি মুশফিককেও চেনেন না, সোহানকেও না। জাতীয় দলের কোচ, তার খেলোয়াড়দের সম্পর্কেই জানেন না আর কী!
আবারও বলি, মুশফিক সেরা কিপার নন। আপনারা যদি মনে করেন যে, সোহানকে দিয়ে কাজটা করাবেন, সেটা পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নিন। মুশফিকের চেয়ে সোহান ভালো উইকেটরক্ষক, এটা বুঝতে আপনার পরীক্ষা নিতে হবে কেন? আপনি অনুশীলন দেখেন না? খেলা দেখেন না?
আবার মুশফিকের সাথে সোহানের ব্যাটিংয়ের পার্থক্য অনেক। ব্যাটসম্যান হিসেবে দু’জনের ভূমিকাও আলাদা। ফলে, দু’জনের মধ্যে আদতে তুলনাই হতে পারে না!
এই পর্যায়ে এসে আপনার পরীক্ষা নিয়ে জানতে হবে যে, মুশফিক চলবে কি না!
তার মানে, আপনি আসলে দলের সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখেন না। আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন মাঠের বাইরে থেকে। নেটে, প্র্যাকটিসে, অতীত পারফরম্যান্সে তাদের যাচাই করবেন। এরপর কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা বাস্তবায়িত করবেন। কিন্তু কাউকে মানুষের সামনে অপদস্ত করতে পারেন না। এই অধিকার আপনার নেই।
শেষ কথা হলো, আমি বিশ্বাস করতে চাই যে, রাসেল ডমিঙ্গো তার স্বভাবসূলভ একটা ব্যর্থ রসিকতা করেছেন। আসলে তিনি এই পরীক্ষা নেবেন না। কেবল মজা করতে চেয়েছেন।
যদি তাও হয়, এটা খুব নিম্নমানের একটা রসিকতা হয়েছে। জাতীয় দলের কে কোন পজিশনে খেলবেন, সেটা বুঝতে আর্ন্তজাতিক ম্যাচকে লক্ষ্য করাটা খুবই নিম্ন বোধের পরিচায়ক।