নব্বইয়ের ঘরে আটক ছিলেন অনেকক্ষণ। ৯৮ থেকে তিন অংকের ম্যাজিকাল ফিগারে পৌঁছাতে বেশ খানিকটা সময় দিলেন। গলের আকাশ তখন অন্ধকার হয়ে আসছে। আম্পায়াররাও তাড়া দিচ্ছে, এই বুঝি আলোক স্বল্পতার জন্য খেলা বন্ধ হয়ে যেতে হয়।
মুশফিকুর রহিম দ্বিতীয় দিনের জন্য অপেক্ষায় রাখলেন না। ১২৬ কিলোমিটার গতির গুড লেংথ ডেলিভারিতে কোনোক্রমে লেগে ঠেলে দিয়েই দিলেন ভোঁ-দৌড়। কুশল মেন্ডিস থ্রো করেন বোলারস এন্ডে, ডাইরেক্ট হিট হয়নি, আর তাতেই মুশফিক পৌঁছে যান সেই কাঙ্ক্ষিত মাইলফলকে। ১২তম টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়ে গেলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল।
রাওয়ালপিন্ডিতে ২০২৪ সালের আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচজয়ী ১৯১ রানের ইনিংসের পর জমেছিল শূন্যতার ছায়া। একটার পর একটা হতাশাজনক ইনিংস — সমালোচনার ছুরি হয়ে উঠেছিল ধারালো, চাপ ছিল চরম। সেই চাপটা জয় করলেন মুশফিক।
গলের এই ভেন্যুতেই ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। এবার পেলেন ক্যারিয়ার বাঁচানো সেঞ্চুরি। সকালের সেশনেই যখন ৪৫ রানে তিন উইকেট পতনের পর ব্যাট হাতে ক্রিজে এলেন, চারপাশটা তখনও অস্থির।
কিন্তু অভিজ্ঞ এই ব্যাটার, নিজেকে সাজালেন নতুন করে — কৌশল, অভিজ্ঞতা, ধৈর্য আর শৃঙ্খলায়। অধিনায়ক নাজমুল হোহেসন শান্তর সঙ্গে গড়ে তুললেন আশার এক অবিচল জুটি।
সেঞ্চুরির পর অধিনায়ক শান্ত এসে জড়িয়ে ধরেন মুশফিককে। বন্ধুত্ব, সম্মান, আর কৃতজ্ঞতায় ভরা সেই আলিঙ্গন। তিনি মাথা নত করে চুমু খান গলের ঘাসে। কৃতজ্ঞতা জানান সৃষ্টিকর্তাকে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গেল ম্যাচে ৪০ রানের ইনিংস খেলে ফেরার আভাস দিয়েছিলেন। সেই পূর্ণতা আসল লঙ্কান মাটিতে। অভিজ্ঞতা দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং আক্রমণে ভরসা যোগালেন মুশফিক।
১৪ ইনিংস বাদে বড় ইনিংস পেলেন। শ্রীলঙ্কার প্রতিপক্ষ হিসেবে মুশফিকের জন্য খুবই লাকি। এখনও খেলছেন এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুশফিকের চেয়ে বেশি রান কেবল কেন উইলিয়ামসনের।
আর সর্বকালের তালিকাতেও মুশফিকের ওপর উইলিয়ামসন ছাড়া আছেন আর চারজন। তারা হলেন ইউনুস খান, শচীন টেন্ডুলকার, ইনজামাম উল হক ও রাহুল দ্রাবিড়। মুশফিক এখন তাহলে এই কিংবদন্তিদের পথেই হাঁটছেন!