বাংলাদেশ টেস্ট দলের ওপেনিং পজিশনে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। একের পর এক ব্যাটসম্যান এসেছেন, সুযোগ পেয়েছেন, সাময়িক সময়ের জন্য আলো ছড়ালেও থিতু হতে পারেননি কেউ। এবার সেই প্রতিযোগিতায় যুক্ত হলেন নাঈম শেখ। ৮২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে জানান দিলেন নিজের সক্ষমতা।
টেস্ট ক্রিকেটে ওপেনারদের রোল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নতুন বলে সামাল দেওয়া, সুইংয়ের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে রান বের করা—এসবই লাল বলের ওপেনারদের কাজ। নতুন বল যত পুরোনো করতে পারে একজন ওপেনার, ততটাই স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারে মিডল অর্ডারের ব্যাটাররা।
তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, ওপেনারদের ব্যর্থতা সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়। সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয় কিংবা জাকির হাসানরা অনেক সুযোগ পেয়েও সদ্ব্যবহার করতে পারেননি।
তাই তো তামিম ইকবালের বিদায়ের পর থেকে এই পজিশনে স্থায়ী সমাধান খুঁজছে টিম ম্যানেজমেন্ট। এমন এক সময়ে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে সুযোগ পেয়ে নজর কাড়লেন নাঈম শেখ।
চার দিনের টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত আসে বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন সোহানের কাছ থেকে। একাদশে জয়ের বদলে সুযোগটা পান নাইম শেখ। তবে সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি তিনি।
নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের শক্তিশালী বোলিং অ্যাটাকের বিরুদ্ধে দারুণ শুরু করে নাইম। ওপেনিংয়ে এনামুল হক বিজয়কে সাথে নিয়ে ১৩০ রানের জুটি গড়েন তিনি।
জায়ডেন লেনক্সের বলে আউট হয়ে ফেরার আগে ব্যক্তিগত খাতায় তোলেন ৮২ রান। তবে ১০ চার এবং দুই ছয়ে সাজানো ইনিংসটি সমাপ্তি টেনেছে আক্ষেপ দিয়েই। আরেকটু মনোযোগী হলে হয়তো নাঈম পেতেন সেঞ্চুরির দেখা।
লাল বলে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগটা খুব বেশি আসেনি নাইম শেখের। ক্যারিয়ারে খেলেছেন একটি মাত্র আন্তর্জাতিক ম্যাচ, তাতেও ছিল না সন্তোষজনক কিছু। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে ৫৭ ইনিংসে রানের সংখ্যা ১৫৯৫, ব্যাটিং গড়টাও মানানসই নয়—মাত্র ২৯.৫৩।
তবে খাতা-কলমের হিসাবের বাইরে রেখে এবারে যে ইনিংস নাইম খেলেছেন, তা প্রশংসার দাবিদার। নিজেকে প্রতিনিয়ত তৈরি করছেন। টেকনিকের উন্নয়ন, ইনিংস গঠনে ধৈর্য ও শট সিলেকশনে মনোযোগ বাড়ছে নাঈমের। এই ইনিংস তার বাস্তব প্রমাণ।
টেস্টের মতো ধৈর্যের খেলায় এমন এক ইনিংস ভবিষ্যতের জন্য বড় বার্তা হতে পারে। তবে শুধুমাত্র একটি ইনিংস নয়, ধারাবাহিকতা এখানে সবচেয়ে বড় মূলধন। নাঈম সেটা করতে পারলে আগামী দিনে হতে পারেন লাল বলের ক্রিকেটে ওপেনিং সমস্যার বড় সমাধান।