আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামলেন। কিন্তু দেখে কী বোঝার কোন উপায় আছে। এমনকি প্রথম ম্যাচে যখন অভিষেক হলো? মনে হচ্ছিল এই দলটার নিয়মিত এবং অন্যতম অভিজ্ঞ সদস্য তিনি। এমনকি দর্শকরাও যেন ভুলে গেলেন আজ তো নাসুমের অভিষেক ম্যাচ। যদিও নিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে উইকেট নিতে পারেননি। তবে এতে নাসুম আহমেদের কন্ট্রিবিউশনটা বোঝা যায় না। বাংলাদেশকে জয়ের প্রথম ভিত্তিটা করে দিয়েছিলেন তিনিই।
নাসুমের যে মাত্র অভিষেক হলো সেটা বোধহয় অধিনায়ক তামিম ইকবালও ভুলে গিয়েছিলেন। প্রথম ওভারেই বল তুলে দিয়েছিলেন নাসুমের হাতে। নাসুমও অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। সেদিন প্রথম ওভারে বল করতে এসে দিয়েছিলেন মাত্র একরান। তবে এর পিছনের গল্প হচ্ছে নাসুমের ছয়টা বল খেলতে ক্যারিবীয় ওপেনারদের রীতিমত ধুকতে হয়েছে। কোনমতে নিজেদের উইকেট সামলেছেন।
নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে তো উইকেটই তুলে নিয়েছিলেন প্রায়। তবে বিতর্কিত রিভিউ এর সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত উইকেটের খাতাটা খোলা হয়নি তাঁর। তবে পুরো ম্যাচে আট ওভার বোলিং করে খরচ করেছেন মাত্র ১৬ রান। এরমধ্যে তিনটাই আবার মেইডেন। নাসুমের এমন বোলিংয়ে ক্যারিবীয় ব্যাটারদের উপর চাপ পড়েছে। ফলে অন্য প্রান্তের বোলারদের টার্গেট করা ছাড়া তাঁদের উপায় ছিল না।
আর সেখানেই মূলত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচটা হেরেছে। নাসুমের এমন বোলিং দেখে মিরাজ, শরিফুলরাও ছেড়ে কথা বলেননি। তারাও তাঁদের কাজটা নিয়ম মেনে করেছেন। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা রান না পেয়ে হাসফাস করেছে। একটা সময় নিজেদের উইকেট দিয়ে এসেছে। ফলে ক্যারিবীয়দের মাত্র ১৪৯ রানের অল আউট করা গিয়েছিল। বাংলাদেশও সহজেই ম্যাচ জিতেছে।
আজকেও নাসুমের বোলিংয়ে একই ধার। তবে আজ সংখ্যায়ও সাফল্য মিললো। আজ কেউ যদি স্কোরবোর্ডটায় চোখ বুলায় তাহলেও নাসুমের ইমপ্যাক্টটা বুঝতে পারবেন। আর ক্যারিবীয় ব্যাটাররাই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে নাসুমের স্পিন কতটা ভয়ানক হয়ে উঠেছিল। প্রতিটা বল যেন সাপের মত ছোবল দিচ্ছিল।
আজ নাসুম বোলিং করেছেন পুরো দশ ওভার। এরমধ্যে ৪৮ টা বল থেকেই কোন রান বের করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা। এতেই স্পষ্ট হয় এই স্পিনারের বল কতটা অসহায় করে তুলেছিল ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের। এছাড়া নাসুম আহমেদ আজ ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের উইকেটের খাতাও খুলেছেন। এই ফরম্যাটে বল হাতে নাসুমের প্রথম শিকার শামার ব্রুকস। যাকে তিনি আসলে প্রথম ওয়ানডেতেও আউট করে ফেলেছিলেন। যা পরে রিভিউতে বিতর্কিত ভাবে বাতিল হয়।
এরপর ইনিংসের আঠারতম ওভারে নাসুমের জোড়া শিকার। ওই এক ওভারেই ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইন আপের মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছেন। তুলে নিয়েছেন দুই বিগ ফিশ শাই হোপ ও নিকোলাস পুরানের উইকেট। ব্যাস এতেই ক্যারিবীয়দের লেজটা প্রায় বেরিয়ে পরে। এরপর বাকি কাজটা করে দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আজও এই স্পিনারের ঝুলিতে চার উইকেট। নাসুম, মিরাজকে যথাযথ সঙ্গ দিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও।
সবমিলিয়ে এই তিন স্পিনারের ঘূর্ণিতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ওয়ানডে সিরিজ জয়ের দারপ্রান্তে তামিমের দল। এই ম্যাচ ও সিরিজ জিততে হলে বাংলাদেশের করতে হবে মাত্র ১০৯ রান। ফলে এই ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের অন্যতম প্রাপ্তি হয়ে থাকবেন নাসুম আহমেদ। যদিও এই সিরিজে তাঁর খেলারই কথা ছিল না।
বছরখানেক ধরেই টি-টোয়েন্টি দলের নিয়মিত সদস্য তিনি। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটে আসাটা নাসুমের জন্য কঠিনই ছিল। কেননা এই ফরম্যাটে সাকিব-মিরাজের দারুণ বোলিং জুটি। এই সিরিজে সাকিব খেলছেন না বলেই নাসুমের একাদশে জায়গা হয়েছে। আবার সাকিব ফিরলেই দলে তাঁর জায়গাটা অনিশ্চিত। তবুও নাসুম বোলিং দিয়ে নিজের একটা ছাপ রেখে যাচ্ছেন। “প্রয়োজন হলে প্রস্তুত আছি” –এমন একটা বার্তাও রেখে গেলেন নাসুম।