‘এখানকার আকাশ বেশি পরিষ্কার তো, তাই ক্যাচ ধরতে অসুবিধা হয়।‘- এটাই একটা সময় নাসুমের পরিচয় হয়ে উঠেছিল। কত লোকের হাসির পাত্রও বনে গিয়েছিলেন। তবে নাসুম আহমেদের আসল পরিচয়টা তখনো পাওয়া যায়নি। নাসুম তাঁর জাত চেনালেন মিরপুরের মেঘলা আকাশে অজিদের বিপক্ষে।
গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে ধারাবাহিক বোলারটার নাম নাসুম আহমেদ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হোক কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেট সব জায়গাতেই নাসুম নিজেকে বারবার প্রমাণ করছেন। ইকোনমিক্যাল বোলার হিসেবে দেশের ক্রিকেটে নিজের একটা স্থান তৈরি করেছেন। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বড় তারকা হয়ে উঠেছেন নাসুম।
গতবছর অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে আসলো টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে। অজিদের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয় পেল বাংলাদেশ। আর সেই জয়ের নায়ক ছিলেন নাসুম আহমেদ। প্রথম ম্যাচেই নিয়েছিলেন চার উইকেট। এরপর থেকে নাসুম যেন নিজেকে একেবারেই পরিবর্তন করে ফেললেন। নাসুমের বোলিং যেন ব্যাটসমানদের জন্য এক ধাঁধায় পরিণত হলো।
এরপর পুরো অস্ট্রেলিয়া সিরিজ, নিউজিল্যান্ড সিরিজ সবখানেই নাসুম বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের বড় অস্ত্র ছিলেন। হয়তো কখনোই দলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হননি। তবে নাসুম ইকোনমিক্যাল বোলিং করে গেছেন একপ্রান্ত থেকে। ব্যাটসম্যনকে ডট বল খেলতে বাধ্য করেছেন, চাপ তৈরি করেছেন। অন্য ব্যাটসম্যানদের উইকেট নেয়ার কাজটা সহজ করেছেন।
বাংলাদেশের হয়ে এই ছোট ক্যারিয়ারে মোট ১৮ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। সেখানে ১৭.১৩ গড়ে নিয়েছেন ২২ উইকেট। সবচেয়ে বড় কথা তাঁর ইকোনমি রেট মাত্র ৬.৬৩। বাঁহাতি এই স্পিনার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজেকে বাংলাদেশ দলে অপরিহার্য করে গড়ে তুলেছেন।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল) দেখা যাচ্ছে নাসুমের চেনা রূপ। ফ্র্যাঞ্চাইজি এই টুর্নামেন্টেও নিজের পরিচয়টা ভুলেননি। রান দিতে এখানেও কৃপণতার চূড়ান্ত রূপ দেখাচ্ছেন এই স্পিনার। তবে নাসুমের এই পারফর্মেন্সটা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। কেননা তিনি হয়তো ৪-৫ উইকেট নিচ্ছেন না। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হচ্ছেন না।
তবে নিজের দায়িত্বটা ঠিকই পালন করছেন। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে মোট ৬ টি ম্যাচ খেলেছেন। প্রতি ম্যাচেই নিজের কোটার চার ওভার করে বোলিং করেছেন। একটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে মোট ২৪ ওভার বল করার পরেও তাঁর ইকোনমি রেট ছয়ের নিচে। ওভার প্রতি মাত্র ৫.২১ রান খরচ করেছেন এই স্পিনার।
তবে এবারের বিপিএলে আরো বড় সাফল্যও আছে তাঁর। এখন পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি নাসুম আহমেদ। ছয় ম্যাচে এই স্পিনার নিয়েছেন মোট ৯ উইকেট। এছাড়া এই বিপিএলে ৯ উইকেট নিয়েছেন তাঁরই সতীর্থ মেহেদী হাসান মিরাজও। যদিও মিরাজের ইকোনমি রেট প্রায় ৮ ছুঁই ছুঁই।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সও নাসুমের উপর ভরসাটা রেখেছিল। ফ্র্যাঞ্চাইজিটি এই স্পিনারকে দলে ভিড়িয়েছিল ডিরেক্ট সাইনিংয়ে। তাঁর ফলও পাচ্ছে দলটি। নাসুম শুধু ইকোনোমিক্যাল বোলিং ই করছেন না। বরং নিয়মিত উইকেটও এনে দিচ্ছেন।