একটা স্লো ডেলিভারি। তাতে তাসকিন আহমেদের ব্যাটের হালকা খোচা। জ্বলজ্বল করে উঠল স্ট্যাম্প। সেখানেই সম্ভবত আফগানিস্তানের জয়ের হাসিটা প্রবল হতে শুরু করল। নাভিন উল হক আফগান রুপকথার নায়ক বনে গেলেন এদিন। অবশ্য এই যাত্রা তো তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষের ম্যাচ দিয়েই শুরু করেছেন।
বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের সমীকরণ ছিল পানির মতই সরল। ম্যাচ জিতলেই মিলবে স্বপ্নের সেমিফাইনালের টিকিট। সে ম্যাচে আগে ব্যাটিং করবার সিদ্ধান্ত নেন রশিদ খান। সেই সিদ্ধান্ত খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। মাত্র ১১৫ রানে থমকে যায় আফগানদের ইনিংস।
সেই সময় বাংলাদেশের চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। ১২.১ ওভারে টার্গেট পূরণ করতে পারলেই নাজমুল হোসেন শান্তর দল চলে যাবে সেমিফাইনালে। কিন্তু বাংলাদেশের সেই স্বপ্নের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান নাভিন-উল হক। প্রথমেই তিনি তুলে নেন বাংলাদেশের অধিনায়কের উইকেট। আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে খেলতে থাকা শান্ত ক্যাচ দিয়ে ফেরেন প্যাভিলিয়নে।
এরপরের বলেই সাকিব আল হাসানকে কট অ্যান্ড বোল্ড করে শূন্যরানে ফেরান নাভিন। বাংলাদেশের সেমিফাইনালে যাওয়ার স্বপ্নতে জোরালো ধাক্কা দিয়ে বসেন নাভিন। এরপর অবশ্য আফগান স্পিনাররা সেই স্বপ্নের গলা টিপে মেরেছে। ক্রমশ হেটেছে নব্য এক আফগান রুপকথার দিকে।
শেষ অবধি অবশ্য ম্যাচটা আফগানিস্তানের হাত থেকে ফসকে যেতে শুরু করেছিল। জয় আসি আসি করেও যেন ধরা দিচ্ছিল না। মাঝে বৃষ্টির বাঁধা, অভিনয়ের মঞ্চায়ন। কত ঘটনাই না ঘটে গেল। তবুও নাভিন নিজের লক্ষ্যে ছিলেন স্থির। তিনি জয় ব্যতীত আর অন্য কোন কিছুতেই মনোযোগ দিতে চাননি।
বল হাতে ইনিংসের ১৮ তম ওভারটা করতে এলেন। কার্যত সেটাই ইনিংসের দ্বিতীয় শেষ ওভার। বৃষ্টির বাঁধায় ১ ওভার কাটতে বাধ্য হয়েছিলেন আম্পায়াররা। সেই ওভারেই নাভিন করলেন বাজিমাত। প্রথমে তাসকিনের উইকেট নিলেন। এরপর মুস্তাফিজুর রহমানকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেললেন। আম্পায়ার তর্জনী তোলা মাত্রই ভো দৌড় দিলেন সকলে মিলে।
যে পাদশেষে বারুদের গন্ধ এখন প্রবল, সে পাহাড় জুড়েই বয়ে গেল আনন্দের উচ্ছ্বাস। আফগানরা লিখে ফেলেছেন ইতিহাস। নিজেদের রুপকথার যাত্রায় সম্ভবত সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায় যুক্ত করে নিল রাশিদ খানের দল। আর কলম হয়ে সে অধ্যায়ের পাতা ভরে দিলেন নাভিন-উল হক।