আর মাত্র দিন কয়েক বাকি, এরপরই ৩৫ এর ঘরে পা রাখবেন বিরাট কোহলি। এক যুগের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে কত পরিবর্তন-ই তো দেখেছেন তিনি; দেখেছেন উত্থান পতনও। এই বছর দেড়েক আগেও তো ফর্ম হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন, ক্যাপ্টেন্সি ছাড়তে হয়েছিল চাপের মুখে।
যদিও সব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে বিরাট ফিরেছেন রাজার মতই, এবারের বিশ্বকাপে আছেন দারুণ ছন্দে। তবে তাঁর ব্যাটিং দেখে নতুন প্রশ্ন জেগেছে সমর্থকদের মনে – ক্রিকেট জীবনের সায়াহ্নে এসেও কি সিঙ্গেল, ডাবলস নেয়ার জন্য কোহলি আগের মত দৌড়ান?
এই উত্তর খুঁজতে বিশ্বকাপের দিকে তাকানোই বোধহয় যথেষ্ট। এই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ৩৫৪ রান করেছেন তিনি; এর মাঝে চার মেরে নিয়েছেন মাত্র ১১৬ রান, আর ছক্কা থেকে এসেছে ৩৬ রান। অর্থাৎ বাইশ গজে দৌড়ে ২০০ এর বেশি রান করেছেন এই তারকা।
ফলে স্পষ্ট যে, বয়সটা বেড়ে গেলেও সিঙ্গেল, ডাবলের প্রতি লোভ একটুও কমেনি বিরাট কোহলির। এখনো ফিল্ডারের হাতে বল রেখে এক রান নিয়ে নিতে পারেন তিনি, গ্যাপে বল ঠেলে দিয়ে এক রানের জায়গায় দুই রান তুলে নেন।
বাউন্ডারির চেয়ে প্রতি বলে প্রান্ত বদলের জন্য তাঁর আগ্রাসী মানসিকতাই তাঁকে প্রজন্মের সেরা ব্যাটার হিসেবে গড়ে তুলেছে। শুধু এই প্রজন্মের সেরাই নয়, রান তাড়ার ক্ষেত্রে এই ব্যাটার হয়ে উঠেছেন ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা একজন।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটার কথাই ভাবা যাক। দুই রানে তিন উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়া ভারতকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। সেদিন ৮৫ রানের দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলেছিলেন তিনি; আর এই ৮৫ রান করার পথে চার মেরেছেন মাত্র ছয়টি, আর ছক্কার সংখ্যা শূণ্য। বোঝাই যায়, রিস্কি শট খেলে নয় বরং স্ট্রাইক রোটেট করেই দলকে রক্ষা করেছেন অজিদের গ্রাস থেকে।
প্রায় একই ঘটনা ঘটেছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও। ২৭৪ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে কোহলির ৯৫ রানে ভর করে ম্যাচ জিতেছিল স্বাগতিকরা। সেদিনও বাউন্ডারি থেকে অর্ধেকের কম রান করেছিলেন এই ডানহাতি।
বিরাট কোহলি যখন এক একটা রানের জন্য ছুটতে থাকেন তখন তাঁর চোখেমুখে থাকে প্রচন্ড ক্ষুধা, অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল জেতার জন্য যেই তীব্র আকাঙ্খা নিয়ে দৌড়ান স্প্রিন্টাররা সেই আকাঙ্খা ফুটে ওঠে তাঁর শরীরি ভাষাতে। ক্রমাগত আগুনে পুড়িয়ে নিজের ‘রানিং বিটুইন দ্য উইকেট’ এর সামর্থ্যকে এতটা নিখুঁত করেছেন এই কিংবদন্তি, ৩৫ বছর বয়সের ক্লান্তিও সেটা ছুঁতে পারেনি।