অনেক আলোচনা হয়েছে, হয়েছে অনেক তর্ক-বিতর্ক। জল ঘোলাও কম হয়নি। আর সে সময়টাতে শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা করে বসেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা। শেষপর্যন্ত এই অপেক্ষা ফুরিয়েছে, এশিয়া কাপের জন্য দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
এবং সেই সাথে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের নেতৃত্বভার তুলে দেয়া হয়েছে সাকিব আল হাসানের হাতে। অফ ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহকে সরিয়ে নতুন কাউকে অধিনায়ক করা সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে আরো একবার দেখা যাবে অধিনায়ক রূপে।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ সবসময়ই খর্বশক্তির দল; তাই অধিনায়কত্বে পরিবর্তন আসলেই দলের চেহারা একেবারে বদলে যাবে সেই আশা করাটা অমূলক। তারপরও আসন্ন এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপলক্ষে দ্রুতই কয়েকটি চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে হবে সাকিবকে। তাহলে আহামরি কিছু না হোক, অন্তত মেজর টুর্নামেন্টগুলোতে ভাল কিছু করতে সক্ষম হবে টিম টাইগার্স।
- পুরো দলকে এক সুতোয় গাঁথা
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের অফ ফর্মের বড় একটি কারন দলীয় বিশৃঙ্খলা। সত্যি বলতে একাদশের অধিকাংশ সদস্যের মাঝেই টিম হয়ে খেলার মানসিকতা অনুপস্থিত ছিল। এমনকি গত জিম্বাবুয়ে সিরিজেও যে যার মত খেলার চেষ্টা করেছে এবং বাংলাদেশ ‘একটা দল’ হিসেবে খেলতে ব্যর্থ হয়েছে।
খেলোয়াড়দের সামর্থ্য যেমনই হোক, ঐক্যবদ্ধ হয়ে খেলতে পারলে যেকোনো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পারবে বাংলাদেশ – এমনটা জানা আছে সবার। তাই এই মুহূর্তে সতীর্থদের একতাবদ্ধ করা অধিনায়ক সাকিবের প্রাথমিক কাজ। আর এমন চ্যালেঞ্জে সাকিব অনুসরণ করতে পারেন মাশরাফিকে।
অধিনায়ক থাকাকালীন মাশরাফি যেভাবে দলকে একটা পরিবারের মত সাজিয়েছিলেন, ঠিক সেই কাজটা করতে পারলেই সাকিবের নেতৃত্বে সাফল্যের মুখ দেখবে বাংলাদেশ।
- মাঠের বাইরের অধিনায়কত্ব
একজন অধিনায়ককে মাঠে এবং মাঠের বাইরে দুই জায়গাতেই নেতৃত্ব দিতে হয়। ক্রিকেটের বাইরের ইস্যুগুলো বিশেষ করে ড্রেসিং রুমের পরিবেশ মাঠের পারফরম্যান্সেও প্রভাব রাখে। তাই খেলার বাইরেও নিঁখুতভাবে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করাটা আবশ্যক। এক্ষেত্রে ড্রেসিংরুমে সাকিব আল হাসানকে একজন অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে হবে। সতীর্থদের আত্মবিশ্বাস জোগানো কিংবা তরুণদের গাইডলাইন প্রদানের জন্য সাকিবের সরব উপস্থিতি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আবার দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে কোন খেলোয়াড় পারফর্ম করতে ব্যর্থ হলে তাঁর পাশে অধিনায়ক সাকিবের দাঁড়ানো উচিত।
- নির্দিষ্ট প্লেয়িং স্টাইল নির্বাচন
ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা মোটামুটি জানেন কার কি দায়িত্ব, কিভাবে খেলতে হবে। এই ব্যাপারটা টি-টোয়েন্টিতে অনুপস্থিত। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে বাংলাদেশের আসলে নির্দিষ্ট কোন খেলার ধরন নেই। এমনকি কোচিং প্যানেলেরও এই বিশ ওভারের খেলাটা নিয়ে বিশেষ কোন পরিকল্পনা নেই।
কিন্তু ভাল কিছু অর্জন করতে হলে নির্দিষ্ট একটি প্লেয়িং স্টাইল ঠিক করতে হয়। একজন ক্যাপ্টেন হিসেবে সাকিব আল হাসানকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে। বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত সেরা ক্রিকেট মস্তিষ্ক সাকিবের – এটা নিয়ে খুব একটা সন্দেহ নেই। তাই এই চ্যালেঞ্জ সাকিব উতরে যাবেন সেটা আশা করাই যায়।
- একাদশ নির্বাচন
বাংলাদেশের বর্তমান টি-টোয়েন্টি দল বেশ এলোমেলো। টপ অর্ডারের একসময়ের ভরসা তামিম ইকবাল অবসরে আছেন, এছাড়া ইনফর্ম ব্যাটসম্যান লিটন দাসও ইনজুরির কারনে দলের বাইরে। এছাড়া নাইম শেখ, মুনিম শাহরিয়ারদের অফ ফর্মের কারনে তাদের বাদ দিয়ে মাত্র দুই ওপেনার নিয়ে এশিয়া কাপে খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
অবশ্য দুই ওপেনারের একজন এনামুল হক নিজেও এই ফরম্যাটে কিছুটা ম্লান এবং অন্যজন পারভেজ ইমনের সম্বল মাত্র এক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা।
আবার মিডল অর্ডারে মুশফিক, মাহমুদউল্লাহর স্লো ব্যাটিং, ফিনিশারের অভাবের কারনে টি-টোয়েন্টি দল সাজানো বেশ কঠিন। এজন্য কাদের নিয়ে মাঠে নামবেন সাকিব সেটা তাকেই ঠিক করতে হবে; সেই সাথে কোন খেলোয়াড়ের কি দায়িত্ব, কোন পরিস্থিতিতে কেমন খেলবে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে বাংলাদেশের পোস্টার বয়কে।
- ক্যাপ্টেন লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট
অন্য যেকোনো অধিনায়কের জন্য এটাই হয়তো সবচেয়ে কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। সাকিব আল হাসানের জন্যও অধিনায়ক হিসেবে পারফর্ম করাটা জরুরি তবে তাঁর জন্য এই কাজ খুব একটা কঠিন নয়। অতীতে নেতৃত্বের চাপ কখনোই সাকিবকে ম্লান করেনি; কখনো ব্যাট হাতে কখনো বল হাতে আবার কখনো কখনো ব্যাটে-বলে তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। একজন ইনফর্ম ক্যাপ্টেন দলকে উজ্জীবিত করার কাজ ভাল করতে পারেন, সাকিবের জন্য এটাই শক্তির জায়গা।
সাকিব আল হাসান নিজে পারফর্ম করবেন; দলকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে – আপাতত এমন অপেক্ষাতেই আছে লাল-সবুজের কোটি ভক্তরা।