ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ

এবাদতের বলে স্লিপে লিটনের ক্যাচ মিস। এরপর সেই বলে ওভার থ্রো থেকে এলো ঠিক ৭ রান। হতাশ হয়ে মাটিতে শুয়ে বলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন লিটন দাস। এটিই যেনো ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশের চিত্র। হ্যাগলি ওভালের সবুজ পিচে টস জেতাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেটা ঠিকই জিতেছিলেন মুমিনুল হক। তবে টম লাথাম, ডেভন কনওয়েদের সোজা ব্যাটে প্রথমদিনে পথ হারানো বাংলাদেশ।

আজ ক্রাইস্টচার্চে শুরু হওয়া সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটা অবশ্য বাংলাদেশের জন্য বিশেষ এক ম্যাচ। কেননা সিরিজের প্রথম ম্যাচে অসাধারণ ক্রিকেট খেলে ইতোমধ্যেই আশা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন লিটন, এবাদতরা। এই ম্যাচে তাই অন্তত ড্র করতে পারলেও প্রথমবারের মত নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট চ্যাম্পিয়ন দলটাকে সিরিজ হারানো যাবে। এই সিরিজ থেকেই হয়তো টেস্ট ক্রিকেটের নতুন এক দুয়ারে প্রবেশ করতে পারে বাংলাদেশ।

এছাড়া এই টেস্ট বিশেষ আরো একটি কারণে। প্রথম টেস্টেও তথাকথিত সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে মুশফিক ছাড়া কেউ ছিলেন না। মুশফিক ব্যাট হাতে রান না পেলেও তরুণ ক্রিকেটারদের অসাধারণ পারফর্মেন্সে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্টে ইনজুরির কারণে ছিটকে গেছেন সেই মুশফিকও। ফলে কিউইদের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে এক কচিকাচার বাংলাদেশ। নতুন দিনের বাংলাদেশ, ভবিষ্যতের বাংলাদেশ।

২০০৬ সালে সর্বশেষ এই পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাউকে ছাড়াই টেস্ট খেলতে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। এরপর ১৬ বছর কেটে গিয়েছে। এই পঞ্চপান্ডবের কেউ না কেউ সবসময়ই টেস্ট একাদশে ছিলেন। তবে আজ সেই দীর্ঘ যাত্রাটা শেষ হলো। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নতুন মাত্রা এনে দেয়া এই সিনিয়র ক্রিকেটারদেরও যে একদিন জায়গাটা ছেড়ে দিতে হবে সেই বার্তাটা আরো জোরালো হলো।

এই পাঁচ ক্রিকেটার বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে এরপর এগিয়ে যেতে হলে দায়িত্বটা যে নিতে হবে নতুনদের এই উপলব্ধিও জরুরি। আমরা আমাদের তরুণ ক্রিকেটারদের এতদিন একটা আড়ালের মধ্যে রেখেছিলাম। তবে এখন তাঁরা সেই খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসছেন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও দলটাকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। প্রথম দিকেই জয় না পেলেও তাঁরা অন্তত ফরম্যাটের মেজাজটা ধরতে পারছেন। সাফল্য তো একদিন আসবেই।

টেস্ট ক্রিকেটেও এই সিরিজটা ছিল তরুণদের প্রমাণের মঞ্চ। আসলে ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিনতম মঞ্চ। কিউইদের মাটিতে টেস্টে বাংলাদেশের কোন দলই সেভাবে কখনো লড়াই করতে পারেনি। দুই একটি ব্যক্তিগত ইনিংস নিয়েই খুশি থাকতে হয়েছে। তবে এই তাসকিন, জয়, এবাদত, শরিফুলরা চোখে চোখ রেখে লড়াই করার সাহসটা দেখিয়েছেন প্রথমবার। মাউন্ট মঙ্গানুইতে এক ইতিহাস রচনা করে জয়টা তো তাঁরাই এনে দিলেন।

ফলে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টটাও তাঁদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই টেস্ট গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যেও। নতুন দিনের এই ক্রিকেটাররা যে তিন ফরম্যাটেই রাজত্ব করতে চান সেই বার্তাটা দেয়া যায় এই টেস্টের মাধ্যমেই। যেই কন্ডিশনে গিয়ে ভারত, অস্ট্রেলিয়ার মত দলগুলোও হিমসিম খায় সেখানে তো জয়রা কাজটা একবার করে দেখিয়েছেন। প্রথমবারের মত প্রতিপক্ষ বলেছে বাংলাদেশ ভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলেছে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের ব্র্যান্ডটা যে আসলে এই তরুণরাই হতে চলেছে সেটা সবার মগজে ঢুকিয়ে দেয়া প্রয়োজন। টস জিতেও সবুজ পিচের সুবিধাটা প্রথম দিনে কাজে লাগানো যায়নি। আজকের দিনটা টম লাথাম, ডেভন কনওয়েদের হয়ে থাকলো। তবে আরো চারটা দিন আছে। টেস্টকে বলা হয় প্রতি সেশনের খেলা।

এখনো শরিফুল, এবাদতদের হাতে বারোটা সেশন আছে। আমরা শেষ সেশন পর্যন্ত ওদের প্রতি বিশ্বাস রাখতে চাই। ওরা যদি চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে পারে, আমরা কে পারবো না। আর এবাদত তো বলেছেনই, ‘বাংলাদেশের সব মানুষ যখন বিশ্বাস করবে আমরা জিতবো, তখন সত্যিই আমরা জিতবো।’

আমরা আপনার কথাই বিশ্বাস করি এবাদত।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link