২০০৫ সালে টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন মুশফিকুর রহিম। পরের বছর ওয়ানডেতেও অভিষেক হয় তাঁর। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়ানোর পর থেকে মুশফিক ধীরে ধীরে নিজেকে পরিণত করেছেন ভরসা করার মত একজনে। বর্তমান সময়ে নিজের ব্যাটিং পজিশনে মুশফিক বিশ্বসেরাদের একজন – এমনটা বললেও আপত্তি করার কিছু নেই। এবার সম্ভবত সেই ব্যাটিং পজিশনটাও মুশফিকের পাল্টে যেতে পারে। আসছে এশিয়া কাপে তাঁকে দেখা যেতে পারে ওপেনার হিসেবে।
কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের কথা আসলেই চেনা মুশফিক কেমন যেন অচেনা হয়ে যায়। প্রায় একই সময়ে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ক্যাপ পেয়েছিলেন মুশফিক কিন্তু অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ ফরম্যাটে যতটা উন্নতি করেছেন তিনি, ততটাই পিছনে পড়ে গিয়েছেন বিশ ওভারের খেলায়।
সাম্প্রতিক ফর্মের বিবেচনাতেও মুশফিকুর রহিমের পারফরম্যান্সের বিভাজন স্পষ্ট৷ টেস্ট এবং ওয়ানডেতে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান যেখানে ব্যাটিং লাইন আপের কান্ডারি, সেখানে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বলতে গেলে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ব্যাটারদের র্যাংকিংয়ের দিকে তাকালেও সেটা দেখা যায়। ওয়ানডে আর টেস্টে মুশফিকের অবস্থান যেখানে সেরা বিশে, সেখানে টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে তিনি সেরা ১০০ জনের মাঝেও নেই।
এক ফরম্যাটের সাথে অন্য ফরম্যাট গুলিয়ে ফেলাটা নির্বাচকদের বহু পুরোনো অভ্যাস। আর সেই অভ্যাসের প্রভাব পড়েছে মুশফিকের উপরেও। টেস্ট এবং ওয়ানডের পারফরম্যান্সের জোরেই টি-টোয়েন্টি দলে একরকমের অটো চয়েজ হয়ে আছেন তিনি। সেই সাথে নামের পাশে আছে ‘অভিজ্ঞ’ ট্যাগ।
বলতে গেলে, ১০০ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আর অন্য দুই ফরম্যাটের পারফরম্যান্স এবারের এশিয়া কাপেও মুশফিককে জায়গা করে দিয়েছে; খুব সম্ভবত একাদশেও তিনি নিশ্চিত। অথচ শুধু বিশ ওভারের খেলা মুশির ফর্ম বিবেচনা করলে সতেরো সদস্যের দলেই তাঁর জায়গা পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
পুরো ক্যারিয়ারে ১০০টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলা মুশফিকুর রহিম এখনো দেড় হাজার রান করতে পারেননি। ব্যাটিং গড়ও বিশের নিচে, আর স্ট্রাইক রেট মাত্র ১১৫। এমনিতে মুশফিকের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে উত্থান ঘটেছিল ২০১৮ সালে। সেই বছরে ১৩২ স্ট্রাইক রেট আর ৩০ এর বেশি গড়ে ৩৯৭ রান করেছিলেন তিনি। কিন্তু ওই এক বছর বাদ দিলে মুশির টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান আরো বেশি হতাশাজনক।
অন্যদিকে মুশফিকুর রহিম ২০২১ সালে মোট ১৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন। এসময় তিনি মাত্র ১৮ গড়ে মোট ১৮৩ রান করেছেন। ব্যাটিং গড়ের চেয়ে চিন্তার বিষয় তাঁর স্ট্রাইক রেট। খেলাটা টি-টোয়েন্টি অথচ মুশফিক রান করেছেন ৯০ এর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটে। তার উপর সর্বশেষ বিশ্বকাপেও ব্যর্থ হয়েছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
আবার ২০২২ সালে বলতে গেলে টি-টোয়েন্টি দলে ছিলেন-ই না মুশফিকুর রহিম। পুরো বছরে এখন পর্যন্ত মাত্র একটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। অফ ফর্মের একজন ব্যাটসম্যানকে একরকম হুট করেই এশিয়া কাপের জন্য দলে ভিড়িয়েছ নির্বাচকরা। ‘অভিজ্ঞতা’ নামক ফাঁকা বুলির জোরেই এমনটা হয়েছে৷
শুধু যে এশিয়া কাপের বহরে নাম আছে মুশফিকের তা কিন্তু নয় – বাংলাদেশের একাদশে একপ্রকারের অঘোষিত অটো চয়েজ তিনি। কিন্তু টি-টোয়েন্টির সাথে বেমানান অ্যাপ্রোচে ব্যাটিং করা এই ক্রিকেটারকে ঠিক কোন পজিশনে ব্যবহার করবে টিম টাইগার্স সেটা এখনো পরিষ্কার নয়।
মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমের পছন্দের পজিশন ৪ নম্বর। কিন্তু মাঠে নেমে ডট বল দেয়া কিংবা দ্রুত গতিতে রান করতে না পারার জন্য মুশফিক এই পজিশনে দলের ক্ষতি বয়ে আনছেন।
বিকল্প হিসেবে ইতোমধ্যে ইনফর্ম ব্যাটার আফিফ হোসেনকে মিডল অর্ডারের মূল দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, মুশফিকের প্রিয় চার নম্বর পজিশনে ব্যাট করবেন এই তরুণ। কিন্তু তাহলে মুশফিকের কি হবে, তাকে কোন পজিশনে দেখা যাবে। টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্রের খবব হল, এশিয়া কাপে মুশফিককে দেখা যেতে পারে ওপেনার হিসেবে।
স্কোয়াডে এমনিতেই লিটন দাসের ইনজুরি ও মুনিম শাহরিয়ারের অফ ফর্মের কারণে মাত্র দুই ওপেনার দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে একজন এনামুল হক বিজয়, যিনি টি-টোয়েন্টিতে একদমই ফর্মে নেই। অন্যদিকে আছেন পারভেজ হোসেন ইমন, যার অভিজ্ঞতা মাত্র এক টি-টোয়েন্টির। ফলে, মুশফিক ইনিংসের উদ্বোধন করতে নামলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ওপেনার হিসেবে মুশফিক অবশ্য একদম নতুন কেউ নন। এর আগে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে একটি করে ম্যাচে ওপেন করেন মুশফিক।
এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তান। দুই দলেরই শক্তির জায়গা স্পিন। আবার মুশফিক নিজেও স্পিন ভাল খেলতে জানেন। তাছাড়া গ্যাপ বের করার কাজেও দক্ষতা আছে তাঁর। সবমিলিয়ে একটা আভাস পাওয়া গিয়েছে যে, মুশফিক হয়তো এবারের মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্টে ইনিংস শুরু করবেন। আবার পাঁচ নম্বর পজিশনে মুশফিক খেলবেন – সেই সম্ভাবনাও রয়েছে।
নতুন অধিনায়ক আর নতুন প্রত্যাশা নিয়ে এশিয়া কাপ খেলতে যাবে বাংলাদেশ। নতুনত্বের এই জয়গানে মুশফিক নতুন কোন দায়িত্বে থাকবেন কি না সেটা নিশ্চিত নয়। তবে বাংলাদেশের ভক্তরা অন্তত তাকে নতুন রূপে দেখতে চাইবে। তিনি যেই পজিশনেই খেলুন – টি-টোয়েন্টির সাথে ব্যাটিংটাও যেন মানানসই হয়।