খেলোয়াড়দের ফিটনেস ট্র্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রযুক্তি হচ্ছে ‘জিপিএস টেকনোলজি’। প্লেয়ার লোড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নামক এই প্রযুক্তি ইউরোপের সিংহভাগ ফুটবল ক্লাবগুলোই ব্যবহার করে থাকে। সেই তুলনায় ক্রিকেট দলগুলোতে এর ব্যবহার বেশ কম।
যদিও শেষ ৪ বছরে ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলো জিপিএস টেকনোলজি ব্যবহার শুরু করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) হেড অব প্রোগ্রাম ডেভিড মুরের পরামর্শে জিপিএস টেকনোলজির যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। সম্প্রতি জনপ্রিয় ক্রিকেট গণমাধ্যম ক্রিকবাজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন স্বয়ং ডেভিড মুর।
জিপিএস টেকনোলজির মাধ্যমে মূলত খেলোয়াড়দের শারীরিক ক্ষমতা যেমন গতি, দূরত্ব, কাজের পরিমাণ ইত্যাদি মাপা যায়। এখান থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান থেকে বুঝা যায়, একজন খেলোয়াড় এখন কেমন অবস্থায় আছেন। এর ফলে খেলোয়াড়দের উপর বাড়তি চাপ কমানো সম্ভব হবে। আর এতে করে কমে আসবে ইনজুরির আশঙ্কাও।
বিসিবি’র হেড অব প্রোগ্রাম ডেভিড মুর এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমি ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছি। এর মধ্যে খেলোয়াড়দের ডেটা সংগ্রহের কাজও শুরু করে দিয়েছি। আমরা যদি বড় দলগুলোর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই তাহলে এই টেকনোলজি খুব কাজে দিবে।’
অস্ট্রেলিয়াতে এ প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় একটি অ্যাথলেট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম আছে। এখানে একজন স্টেট লেভেলের খেলোয়াড়ও নিজের ফিটনেসের গতিবিধি জানতে পারে। জিপিএস টেকনোলজি দিয়ে একজন খেলোয়াড় নিজেই নিজের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। আমরা সেই প্রযুক্তিই বাংলাদেশ ক্রিকেটে নিয়ে আসতে চাচ্ছি।’
যদিও বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি নিয়ে আসার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে মন্তব্য করে ডেভিড মুর বলেন, ‘আমি বিসিবি ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের প্রধান নাসির আহমেদের সাথে কথা বলেছি। সে এই ব্যাপারে ইতিবাচক। তবে এখনও পুরো প্রক্রিয়াটা সময় সাপেক্ষ। এখানকার কোনো ক্লাবই এটা ব্যবহার করে না। তাই আমাদের বাইরের কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করেছি। ওরা বাংলাদেশে কাজ জিপিএস টেকনোলজির সর্বশেষ সংযোজনটাই দিবে বলে আশা করছি।’
ডেভিড মুর এই মুহূর্তে বাংলাদেশ টাইগার্স ছাড়াও হাই পারফরম্যান্স ইউনিট এবং কোচদের নিয়ে কাজ করছেন। ক্রিকবাজকে দেওয়া এ সাক্ষাৎকারে তিনি এই দলগুলোর অবকাঠামোগত সম্ভাবনার কথাও বলেছেন। তাঁর মতে, খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক মানের কোচ বেরিয়ে আসবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের পাইপলাইন যে বেশ সমৃদ্ধির পথে আছে, তা জানিয়ে মুর বলেন, ‘আমি বিপিএল, ডিপিএল দেখেছি। বাংলাদেশের দারুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে। এখন প্রয়োজন শুধু, ওদের নিয়ে কাজ করা। তবেই ভবিষ্যৎ ক্রিকেটার বেরিয়ে আসবে।’
তবে দীর্ঘমেয়াদের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য ফিটনেসই যে একজন ক্রিকেটারে মূল সম্পদ তা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিজেকে ধরে রাখার জন্য ফিটনেসে আলাদা গুরুত্ব দিতেই হবে। নিজের ফিটনেসের ডেটা মেনে কাজ করতে হবে। একই সাথে, আমাদেরও ওদের প্রতি সতর্ক হতে হবে। আমাদের সেই ধরনের কোচ প্রয়োজন, যারা তাদের ফিটনেস নিয়েও সচেতন থাকবেন।’
বাংলা টাইগার্স একজন ক্রিকেটারের জাতীয় দলের যাওয়ার প্রস্তুতিকরণ পর্ব। এখান থেকেই মূলত একজন ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানিয়ে নেওয়ার সব রসদ পাবে। এমন উদ্দেশ্যেই বাংলা টাইগার্সের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বিসিবি’র হেড অব প্রোগ্রাম ডেভিড মুরও রয়েছেন এই দলটার দেখভাল করার দায়িত্বে।
তো অস্ট্রেলিয়ান সাবেক এ ক্রিকেটার মনে করেন, ‘বাংলাদেশ টাইগার্স প্রোগ্রামের পর ক্রিকেটারদের বেশ উন্নতি হচ্ছে। এখানে থেকে অনেকে এ দলেও সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের প্রস্তুত করার জন্য নিয়মিত বিদেশ ট্যুরেরও আয়োজন করা হয়।’