ম্যাগনিফিসেন্ট মিশেল

জীবন একটা বহমান নদীর মতো। কখনও এটি ধীরে ধীরে বয়ে বেড়ায়, তো কখনো আবার তীব্র স্রোতের মত। কেউ কেউ এই বহমান নদীর মতই ছুঁটতে থাকে মানব জীবনেও, কেউ আবার দমে যায় অল্পতে। নদীর পানির মতই একসময় গিয়ে পড়ে সফলতার বিস্তৃত এক সাগরে।

এই ছুঁটে চলার পথে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অনেকেই জীবনে পেয়েছেন সফলতার দেখা। কেউ আবার অল্পতেই নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়ে থেকেছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।তেমনি আলোচনায় এখন মিশেল। ব্যাট হাতে ক্যারিয়ারে দুর্দান্ত এক সময় পার করছেন নিউজিল্যান্ডের তারকা ব্যাটার ড্যারেল মিশেল। বহমান নদীত মতই ব্যাট হাতে তিনি রানের ফোয়ারা ছুঁটিয়ে চলেছেন। লক্ষ্য স্পষ্ট, তিনি দমে যেতে চান না। এই ছুটে চলার পথটা করতে চান আরও দীর্ঘ। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সফলতাকে রূপ দিতে চান বিশাল সাগরে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদচারণা মাত্র আড়াই বছরের। শুরু থেকেই দলে ব্যাকআপ ক্রিকেটার হিসেবে ছিলেন। বিশেষ করে টেস্ট ফরম্যাটে নিজেকে নিয়মিত মুখ হিসেবে তুলতে পারেননি। তবে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন মিশেল। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি – ব্যাট হাতে তিনি দুর্দান্ত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেছেন বেশ অল্প সময়। এর মধ্যে বনে গেছেন মিডল অর্ডারে নিউজিল্যান্ডের অন্যতম ভরসা।

ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে ইংলিশ বোলারদের বিপক্ষে রানের পাহাড় গড়াটা মোটেও সহজসাধ্য কিছু না। কিন্তু এই পাহাড়সম কঠিন কাজকেই রীতিমতো অভ্যাসের পরিণত করেছেন মিশেল। দলের বাকিরা যেখানে অধারাবাহিকতার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন – মিশেল সেই সাগরে ছুঁটে চলেছেন অদম্য গতিতে।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেডিংলি টেস্ট। দলের বাকিরা উইকেটে থিতু হতে পারছিলেন না। কিন্তু, বিপরীত চিত্র মিশেলের ব্যাটে। ব্রড, অ্যান্ডারসন, পটস, লিচদের তোয়াক্কা না করে দলের বিপর্যয়ে তুলে নেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। সেই সাথে গড়েছেন রেকর্ডও। টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পর পর তিন টেস্টে তিন সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন এই ব্ল্যাকক্যাপস তারকা। নিউজিল্যান্ডের হয়ে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ইংলিশদের বিপক্ষে টানা তিন টেস্টে সেঞ্চুরি করেন তিনি।

জ্যাক লিচকে ছক্কা হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূর্তি। ৩ ছক্কা আর ৯ চারে ১০৯ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। দলের বিপর্যয়ে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় মিশেলের ব্যাট। অবশ্য এটি প্রথম নয়। গেল চার ইনিংসের তিনটিতে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মিশেল।

মাত্র ১২ টেস্টের ছোট্ট ক্যারিয়ার। ১৬ ইনিংসের ৫ ফিফটি আর ৩ সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের শুরুতেই মিশেলের এমন উড়ন্ত ফর্ম মিডল অর্ডারে নিউজিল্যান্ডকে দিয়েছে স্বস্তি। চলতি বছর ষাটের বেশি গড়ে তিনি প্রায় আটশোর বেশি রান করেছেন।

ইংলিশদের ডেরায় ইংলিশ বোলারদের জন্য তো রীতিমতো যমদূত বনে গেছেন তিনি। তিন টেস্টের পাঁচ ইনিংসে তিন সেঞ্চুরি আর এক ফিফটি! দলের বাকিরা যেখানে রান করতে ধুঁকছেন সেখানে স্রোতের বিপরীতে ছুঁটছেন মিশেল। একের পর এক দুর্দান্ত সব ইনিংসে ইংলিশদের ডেরায় শাসন করছেন এই ব্ল্যাকক্যাপ তারকা।

গড়েছেন আরও এক রেকর্ড। ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংলিশদের বিপক্ষে এক সিরিজে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছেন এই তারকা। ১৯৪৯ সালে মার্টিন ডনলির করা ৪৬২ রানের রেকর্ড টপকে ছুঁটছেন মিশেল। চলতি সিরিজে ৫ ইনিংসে ১২০ গড়ে প্রায় পাঁচশো রানের মালিক এই ব্ল্যাকক্যাপস তারকা।

বাইশ গজের যাত্রা তো সবে শুরু। এখনও পাড়ি দিতে হবে লম্বা পথ। নিজের জায়গাটাও পাঁকা লরে ফেলেছেন দলে। তিন ফরম্যাটেই তিনি এখন নিয়মিত মুখ। টেস্টের এই ফর্ম আর ধারাবাহিকতাই নিশ্চয়ই তিনি ধরে রাখতে চাইবেন বাকি দুই ফরম্যাটেও। ইংল্যান্ডের মত শাসন করতে চাইবেন পুরো ক্রিকেট দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link