নেইমার ফিরলেই ছন্দ ফিরে ব্রাজিলের

চারিদিক থেকে নানানরকম কথা ভেসে আসতে শোনা যাচ্ছে। নেইমারের বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ হয়ে যাবে কিংবা শেষ। এমন সব তথ্যে আবরিত ব্রাজিলের গোটা বিশ্বকাপ যাত্রা। টুর্নামেন্টের আগে ছিলেন দারুণ ছন্দে। টুর্নামেন্টের শুরুটাও করেছিলেন প্রত্যাশা মাফিক। তবে হুট করেই বিশ্বকাপের মাঝপথেই নেইমারের দেখা হয়ে যায় তাঁর পুরনো বন্ধুর সাথে। ইনজুরি! ব্যাস ব্রাজিলের বিশ্বকাপের আকাশে মেঘের ঘণঘটা।

২০১৪ সালে ঘরের মাঠে এই নেইমারের কাঁধে ভর করেই বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল ব্রাজিল। নেইমার সেবার ছিল দলের প্রাণভোমরা। সেই দল আর এই দলের ফারাকটা অনেক। এই দলটা কাগজে-কলমে বেশ শক্তিশালী। দলটা নেইমারকে ছাড়া খেলতে পারবে। দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার মত তরুণরা রয়েছে। তবুও নেইমার যেন গোটা দলের মাঝে আলাদা একটা শক্তির সঞ্চার করে। নেইমার থাকা মানেই যেন খেলোয়াড়দের  মনোবল বেড়ে যায় বহুগুণে।

সেটার আরও একটা প্রমাণ পাওয়া গেল বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডের। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে। দুই ম্যাচ বাদে নেইমার আবার এই ম্যাচ দিয়েই ফিরেছিলেন মাঠে। সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে গোড়ালির ইনজুরিতে পড়েন নেইমার। এই গোড়ালির ইনজুরি তাঁকে ভীষণরকম ভুগিয়েছে। এখনও ভোগাচ্ছে। তবে নেইমার অদম্য। তিনি শত প্রতিবন্ধকতা টপকে খুব করে খেলতে চাইছিলেন এবারের বিশ্বকাপ। কেননা এটাই যে তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। অন্তত সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচারে।

তবুও নেইমারের ইনজুরি নিয়ে ম্যাচে আগে কম জলঘোলা হয়নি। তাছাড়া গোড়ালির ইনজুরিতে কম করে হলেও তিন সপ্তাহ থাকতে হয় মাঠে বাইরে। ততদিনে অবশ্য বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাবার কথা। নেইমার ততক্ষণ অপেক্ষা করবেন কেন? তিনি তো এসেছেন বিশ্বকাপ জিততে। প্রায় প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা রিহ্যাব করে তিনি ফিরলেন। ঠিক কতটা মরিয়া তিনি ছিলেন মাঠে ফেরার জন্যে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। নেইমার ফিরলেন, আর ব্রাজিল দলে ছন্দ ফিরল।

দক্ষিণ কোরিয়াকে স্রেফ উড়িয়ে দিলো গোটা ব্রাজিল দল। ছন্দময় ফুটবল। দলের খেলোয়াড়দের মাঝে দারুণ মেলবন্ধন। দুর্দান্ত সব ফুটবলীয় শৈলি সব। চোখ ধাঁধানো ফিনিশিং। সব কিছুর দেখা মিললো সেলেসাওদের খেলায়। সুইজারল্যান্ড আর ক্যামেরুনের বিপক্ষে যেটা অনুপস্থিত ছিল বলা চলে। দারুণ খেলেও সমন্বয়হীনতার অভাবে ক্যামেরুনের বিপক্ষে হারতেও হয়েছে ব্রাজিলকে। তবে নেইমারের প্রত্যাবর্তনে ঘুরে গেলো পুরো দৃশ্যপট। এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলের অন্যতম সাবলীল আর দৃষ্টিনন্দন ফুটবলের দেখা মিলল।

দলের মধ্যে সেই জাদুকরী শক্তি ছড়িয়ে দেওয়া ছাড়াও তিনি মাঠে প্রমাণ করলেন কেন তিনি বিশ্বসেরাদের একজন। ম্যাচের ১৩ মিনিটের মাথায় ঠাণ্ডা মেজাজের একটা পেনাল্টি শ্যুটে নিজের জাত চেনালেন। হয়ত প্রশ্ন জাগতেই পারে কি এমন ছিল সেই পেনাল্টি শটে? সেখানটায় ছিল অভিজ্ঞতা আর তীক্ষ্ণ এক মস্তিষ্কের সমন্বয়। কোরিয়ান গোলরক্ষক একটা মাইন্ড গেম খেলার চেষ্টা করেন। তিনি একটা পাশে সরে যান। গোল বারের ডানদিকটা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দেন নেইমারের জন্যে।

নেইমার ঠান্ডা মাথায় একেবারে মাটি কামড়ানো এক আলতো টোকার শটে বল চালান করে দেন সেই ডান পাশের কর্ণার দিয়ে। ব্যাস! ঠিক এখানটাই আরও একটিবার প্রমাণিত হয়, নেইমার বিশ্বসেরা। তাছাড়া এদিন অবশ্য নিজের খেলার ধরণেও বেশ পরিবর্তন এনেছিলেন নেইমার। তিনি অ্যাটাকিং মিডফিল্ড পজিশনে খেলছেন নেইমার। প্রথম ম্যাচে তিনি বল নিজের কাছে অধিক সময় রাখার চেষ্টা করেন। যাতে দলের বাকি খেলোয়াড়দের জন্যে স্পেস ক্রিয়েট হয়।

তবে নিজের ইনজুরি প্রবণ বিষয়টি মাথায় রেখে যথাসম্ভব কম বল পায়ে রেখেছেন নেইমার। বল সতীর্থদের সাথে দেওয়া-নেওয়া করে তিনি খেলেছেন। সতীর্থদের খেলিয়েছেন। আর ফলাফলটা পেয়েছে ব্রাজিল। ৪-১ গোলের দাপুটে জয় নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখে সেলেসাওরা। নেইমারের অন্তর্ভুক্তি সেলেসাও সমর্থক থেকে শুরু করে দলেও স্বস্তি জাগায়। আর সেটা কেন হয় তা আর নতুন করে বলবার কিছু নেই।

দুই দশকের অপেক্ষা অবসান ঘটাতে চায় ব্রাজিল। ২০০২ এর পর আরও একটি বিশ্বকাপ জিততে মুখিয়ে আছে লাতিন আমেরিকার দেশটি। তাদের এই স্বপ্নযাত্রায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নেইমার। ব্রাজিলিয়ান প্রিন্স বাকিটা সময় ইনজুরিমুক্ত থাকলে, সাম্বা নৃত্যে মাতোয়ারা হবে গোটা ফুটবল বিশ্ব। উদাহরণ তো চাক্ষুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link