শুরু থেকেই সমালোচনা শুনতে হয়েছে তাঁকে। প্রিমিয়ার লিগে কিছু করতে পারবে না, ওভারহাইপড ফুটবলার – জার্মানির বুন্দেসলিগায় ভুরি ভুরি গোল করলেও তাঁর সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ ছিল অনেকের। সংশয় ছিল ইংল্যান্ডের তীব্র প্রতিযোগিতামূলক লিগে তাঁর পারফরম্যান্স নিয়ে। কিন্তু কয়েকটা ম্যাচ পেরুতেই ভোজবাজির মত অদৃশ্য হয়ে গেল সব কটু কথা।
বলা হচ্ছে নরওয়েজিয়ান সুদর্শন তরুণ আর্লিং হাল্যান্ডের কথা। বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেয়ার পরেই ফুটবল বিশ্লেষক আর সমর্থকদের বড় একটি অংশ তাঁকে নিয়ে সমালোচনায় মেতে উঠেছিল। অভিষেক ম্যাচটাও ভাল যায়নি, সহজ গোল মিস করেছেন। তাতে বিদ্রুপের পালে আরো হাওয়া লেগেছিল।
কিন্তু নিজের উপর বিশ্বাস হারাননি আর্লিং হাল্যান্ড, নিজের নবাগত শিষ্যের উপর ভরসা করতেও কার্পণ্য করেননি পেপ গার্দিওলা। আর সেটারই ফল দেখা গিয়েছে মাঠে। এই স্ট্রাইকার রীতিমতো গোল মেশিনে পরিণত হয়েছেন। লিগের প্রথম পাঁচ ম্যাচে নয় গোল; পরপর দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক। আর্লিং হাল্যান্ডের প্রতিভা কিংবা প্রতিভার প্রতিফলন নিয়ে আর কোন সংশয় থাকার কথা নয়।
প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে প্রথম পাঁচ ম্যাচে নয় গোল করেছেন। এর আগে আর কেউই প্রথম পাঁচ ম্যাচে এত গোল করতে পারেনি। অথচ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ওয়েইন রুনি, দিদিয়ের দ্রগবা, সার্জিও আগুয়েরোর মত কিংবদন্তি ফুটবলাররা খেলেছেন এই লিগে। আর্লিং হাল্যান্ডের দাপুটে শুরু বোঝাতে এরচেয়ে ভাল রেকর্ড বোধহয় হতে পারে না।
তবে এরই মাঝে আরো রেকর্ড গড়েছেন ২২ বছর বয়সী এই ফুটবলার। পরপর দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছেন এমন খেলোয়াড়দের ক্লাবে সপ্তম সদস্য হিসেবে প্রবেশ করেছেন তিনি। তবে এই কীর্তি একবারের বেশি করেছেন শুধু হ্যারি কেইন। হয়তো হল্যান্ড নিজেও অদূর ভবিষ্যতে আরো অনেকবার এমন কিছু করবেন।
এছাড়া একের বেশি হ্যাটট্রিক করে ম্যানচেস্টার সিটির রহিম স্টার্লিং এবং কার্লোস তেভেজের পাশে বসেছে আর্লিং হল্যান্ডের নাম। এখন তাঁর সামনে শুধু চারটি হ্যাটট্রিকের মালিক সার্জিও আগুয়েরো। নরওয়েজিয়ান তারকা স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলে সিটি ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিকের রেকর্ড করা তাঁর জন্য মোটেও কঠিন কিছু নয়।
বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, নরওয়ের হয়ে যা করেছেন আর্লিং হাল্যান্ড ঠিক সেটাই করছেন সিটিজেনদের হয়ে। প্রিমিয়ার লিগে লম্বা সময় ধরে থাকলে সম্ভবত সব গোল স্কোরিং রেকর্ড নিজের করে নেবেন তিনি। নিজের শিষ্যের এমন পারফরম্যান্সে পেপ গার্দিওলা যে বেজায় খুশি সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এই স্প্যানিশ কোচ রেকর্ড ভাঙ্গা-গড়ার চেয়ে শিরোপা জয়ের দিকেই মনোযোগী হতে বলছেন হাল্যান্ডকে।
সেই সাথে মনে করিয়ে দিয়েছেন আর্লিং হল্যান্ডের সঙ্গে সার্জিও আগুয়েরোর তুলনা দেয়ার কিছু নেই। সাবেক বার্সা কোচের মতে, “সার্জিও অ্যাগুয়েরো একজন ক্লাব কিংবদন্তি। ম্যানসিটি ভক্তদের হৃদয়ে অ্যাগুয়েরোর জায়গা কেউ দখল করতে পারবে না।” ক্লাব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল করা আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে তাই গোলসংখ্যায় ছাড়িয়ে যেতে পারলেও কিংবদন্তির তালিকায় হয়তো পেছনে থাকতে হবে আর্লিং হাল্যান্ডকে।
তবে আর্লিং হাল্যান্ড নিজের মত করেই আরেকজন কিংবদন্তি হয়ে উঠবেন সেটা প্রত্যাশা করাই যায়। এখন পর্যন্ত তিনি যেভাবে পারফর্ম করছেন তাতে মনে হতেই পারে যে, এই তরুণকে বোধহয় থামানোর কেউ নেই। সাবেক ওয়েলশ ডিফেন্ডার অ্যাশলে উইলিয়ামসের কাছে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে কমপ্লিট স্ট্রাইকার হাল্যান্ড।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে কমপ্লিট স্ট্রাইকারের তকমা হয়তো একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়েছে। কেননা করিম বেনজেমা, রবার্ট লেওয়ানডস্কির মত নাম্বার নাইনেরা এখনো নিজেদের সেরা ছন্দে আছেন। তবে এটা মানতেই হবে, আর্লিং হাল্যান্ড সম্পূর্ণ অনন্য। এই বয়সে অনেক শ্রেষ্ঠ ফুটবলাররা যা অর্জন করতে পারেননি সেটাই করেছেন তিনি।
সময়ের সাথে সাথে আরো পরিপক্ব হবেন আর্লিং হাল্যান্ড। পেপ গার্দিওলার মত মাস্টারমাইন্ডের অধীনে নিজেকে আরো শাণিত করবেন হাল্যান্ড। হয়তো ক্যারিয়ার শেষে সর্বকালের সেরাদের কাতারেই নাম থাকবে তাঁর।