নো মোর রিয়াদ, প্লিজ

শেষ দশ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ২২ রানের ইনিংস। ব্যাটিং করেছেন ১০০ এর কম স্ট্রাইক রেটে। এমন একজন ব্যাটসম্যানকে আপনি কোন দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে মেনে নিতে পারেন? অথচ বাংলাদেশ এমন একজনকেই অধিনায়ক হিসেবে বহন করে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে মাঠের ক্রিকেটেও। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স, শরীরি ভাষা, ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ সবকিছুই প্রচন্ড দৃষ্টিকটু। এরপরও কী বাংলাদেশ আরেকটি বিশ্বকাপ খেলবে এই অধিনায়কের নেতৃত্বে!

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সর্বশেষ সাফল্যটা আনতে পেরেছিলেন ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে। যদিও সেই দুটি সিরিজের উইকেট ও জেতার ধরণ নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা আছে। তবুও এটাকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের সাফল্য হিসেবে ধরে নেয়া যাক। তবে সেই দুটি সিরিজে যে রিয়াদের অবদান খুব বেশি ছিল তা বলা যাবেনা। ঠিক কোন ম্যাচেই তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারছিলেন না।

সেই সময় থেকেই প্রশ্ন তোলা হচ্ছিল তাঁর ব্যাটিং পারফর্মেন্স নিয়ে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাঁর ব্যাটিং করার ধরণ নিয়ে। এছাড়া ফিটনেসও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জন্য একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মিরপুরে ফিল্ডিং অনুশীলন কিংবা মূল ম্যাচ দুই জায়গাতেই অসংখ্য ক্যাচ ফেলেছেন তিনি। ফলে ফিল্ডার রিয়াদকে লুকানোর জায়গা পাচ্ছিল না বাংলাদেশ। তখনই আসলে রিয়াদের অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার কথা ছিল, তবে তরতাজা দুটি সিরিজ জয়ের স্মৃতি নিয়ে সেই সাহস অনেকেই দেখাননি।

এরপর ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থতার চূড়ান্ত দেখেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে খেলা মোট আট ম্যাচের ছয়টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। দুটি জয়ও এসেছে ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির মত দলের বিপক্ষে। এছাড়া সেই বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের কাছেও হেরেছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। ফলে সেই বিশ্বকাপের পরই অধিনায়ক রিয়াদের ইতি হয়ে যাবার কথা ছিল।

ওদিকে মাঝে টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাট হাতে পারফর্ম করতে পারছিলেন না মুমিনুল হক। যদিও এবছরের শুরুতেই তিনি নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়ের স্বাদ এনে দিয়েছিলেন। তবুও নিজের ব্যাটিং ব্যার্থতার দায় নিয়ে তিনি অধিনায়কত্বের আসন ছেড়ে গিয়েছেন। টেস্টে অধিনায়ক পরিবর্তনের ব্যাপারেও বেশ সরব ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বেলায় যেন উল্টো চিত্র। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দেশের ক্রিকেটের বড় নাম বলেই কী এমন দ্বৈত আচরণ।

সঠিক কারণ অজানা তবে যেভাবেই হোক টি-টোয়েন্টি  ফরম্যাটে রিয়াদকে টেনেই চলেছে বাংলাদেশ। অথচ অধিনায়কত্ব তো হারানোর কথাই এমনকি একাদশে তাঁর জায়গা পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠাটা স্বাভাবিক। রিয়াদকে দিয়ে হচ্ছেনা হচ্ছেনা করতে করতেই দরজায় কড়া নাড়ছে আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এছাড়া এবারের এশিয়া কাপও হবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। ফলে বিশ্বকাপের আগে হাতে খুব বেশি সময়ও নেই।

এই সময়ে বোধহয় রিয়াদের ব্যাপারে কোন একটা সিদ্ধান্তে আসার কথা ভাবছে বিসিবি। অনেক দেরি হয়ে গেলেও বিসিবি এই বিষয়ে অবশেষে ভাবতে পারছে। আর যদি সত্যিই রিয়াদকে সরানোর সিদ্ধান্ত আসে তাহলে পালটা প্রশ্ন আসে কে হবেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। এই প্রশ্নের সবচেয়ে সহজ উত্তর সাকিব আল হাসান। কেননা দলে সিনিয়র ও অভিজ্ঞ বলতে এখন এই একটা নামই আছে।

তামিম ইকবাল টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। অধিনায়কত্ব হারালে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদেরও একাদশে ঠাঁই হবার কথা না। আবার মুশফিকুর রহিমও এই ফরম্যাটে খুব একটা নিয়মিত নন। এছাড়া তাঁর ব্যাটিং নিয়েও প্রশ্ন তোলার অবকাশ আছে। ফলে বাকি থাকেন সেই সাকিব আল হাসানই। ফলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে কোনরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষায় না গিয়ে দ্রুত তাঁর হাতেই দায়িত্ব তুলে দেয়া উচিৎ।

যদিও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলবেন না সাকিব আল হাসান। ফলে এই সিরিজ থেকেই তাঁকে অধিনায়ক করার সুযোগ নেই। সে কারণে হয়তো এটাই অধিনায়ক হিসেবে রিয়াদের শেষ সিরিজ হতে পারে। তবে এশিয়া কাপ থেকে নিশ্চয়ই নতুন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক দেখতে চাইবে বাংলাদেশ।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link