বিরাট কোহলি। নামটা ভারতের ক্রিকেট আকাশের উজ্জ্বল এক নক্ষত্র। তবে নক্ষত্রেরও তো পতন হয়। সেই আশঙ্কাতে শেষ না হওয়ার আগেই অনেকেই তাঁর শেষ দেখে ফেলেছিল। সমালোচনার মহাসমুদ্রে যেন ডুবে যাচ্ছিলেন স্বয়ং বিরাট কোহলি। অবশেষে সেই সমালোচেনার জবাব দিয়েছেন তিনি। হংকংয়ের বিপক্ষে অর্ধশতকের পরে পাকিস্তানের বিপক্ষেও পেয়েছেন ফিফটি। খেলেছেন ৬০ রানের ইনিংস।
ম্যাচ শেষে বিরাট কোহলি যখন প্রেস কনফারেন্সে এলেন, দুবাইয়ের গ্যালারিতে তখনও সেলিব্রেশন চলছে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের মহিমা তো এখানেই। ক্রিকেট ম্যাচে উৎসব কিংবা হতাশা ছাপিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগে না। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের রেশ থেকে যায় পরবর্তী ম্যাচ অবধি। সুপার ফোরের ম্যাচে হারটা ভারতের। তবে কোহলির ৪৪ বলে ৬০ রানের ইনিংসে কি কোনো বার্তা পাওয়া গেল? ‘কিং কোহলি ইজ ব্যাক’? গত কয়েকটা মাসও কি একইরকম ছিল? একেবারেই নয়।
বিরাট কোহলির পাশে হয়তো কেউ ছিল। টিম ম্যানেজমেন্টও হয়তো ভরসা রেখেছিল। তবে সে সবের মাঝেও কোনো একটা ‘কিন্তু’ ছিল। এতো ‘যদি’ ‘কিন্তু’র মাঝে একজন তাঁর পাশে ছিলেন শীতল ছায়ার মতো। যিনি ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতির ব্যাটন দিয়ে গিয়েছিলেন বিরাট কোহলিকে। তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনি।
এই কিছু মাস আগেই বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল দেব বলেছিলেন, ‘এমন নয় যে গত পাঁচ-ছ’বছরে কোহলিকে ছাড়া কোনও দিন ভারত খেলেনি। তবে ওর মতো ক্রিকেটারকে আমি ছন্দে দেখতে চাই। ওকে হয়তো বাদ বা বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও ওর মধ্যে অনেক ক্রিকেট বাকি রয়েছে। আমি চাই ও রঞ্জি খেলে ছন্দে ফিরে আসুক।’
অর্থাৎ কোহলি কেন অটোমেটিক চয়েস হয়ে থাকবেন আবার তার মতো ক্রিকেটারের ছন্দে ফেরারও দারকার। বিশ্বকাপজয়ী গ্রেটের কথায় দুই সুরই স্পষ্ট।
মাঠের বাইরে প্রবল সমালোচনার কিছুই কি কানে আসেনি বিরাটের? অবশ্যই এসেছে। হয়তো এমন একটা দিনেরই অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। একদিন মন খুলে কথা বলবেন তিনি। সেই সুযোগটা পাকিস্তান ম্যাচের পরেই আসলো।
‘এই খারাপ সময়ে আপনার পাশে কে ছিল?’ – একটা প্রশ্ন। একটা দীর্ঘশ্বাস। একটা সরল অভিব্যক্তি। যেন বলতে চাইছেন অনেক জমে থাকা। অনেক বিদ্রুপের প্রত্যু্ত্তর আর পাহাড়সম অভিমানের কথা।
অবশেষে বিরাট বলতে শুরু করলেন, ‘একটা কথা বলতে পারি, যখন আমি টেস্ট নেতৃত্ব ছাড়ি, আমার কাছে একজনেরই মেসেজ এসেছিল। যার সঙ্গে আমি খেলেছি। তিনি এমএস ধোনি। অনেকের কাছেই আমার ফোন নম্বর রয়েছে। টিভিতে অনেকেই অনেক পরামর্শ দেন। তাঁদের কাছে বলার মতো অনেক কিছুই থাকে। আমার নম্বর থাকলেও তাঁদের কোনও মেসেজ আসেনি। কারও সঙ্গে এই যে শ্রদ্ধার সম্পর্ক থাকে, সেটা সত্যিই কী না, এমন পরিস্থিতিতেই বোঝা যায়। একটা নি:স্বার্থ সম্পর্ক। না তিনি আমার কাছে কিছু চান, না আমি কিছু চাই তাঁর কাছে। কেউ কাউকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিনি।’
‘আমি শুধু এটুকুই বলতে চাইছি, কাউকে কিছু বলার থাকলে সরাসরি তাঁকে বলাই পছন্দ করি। কাউকে সাহায্য করার ক্ষেত্রেও। অর্থাৎ, পুরো বিশ্বের সামনে পরামর্শ দিলে আমার কাছে কোনও গুরুত্ব নেই। যদি আমার উন্নতির জন্য কিছু বলার থাকে, সরাসরি আমাকে বলতেই পারেন। এমন নয় যে, আমার কিছু যায় আসে না। সততার সঙ্গে ক্রিকেটটা খেলার চেষ্টা করি। এরকম সময়ে সত্যিটা অনেক পরিষ্কার দেখা যায়।’, যোগ করেন তিনি।
কোহলির আঙুল কাদের দিকে, তা নিয়ে গভীর চিন্তা ভাবনার অবকাশ নেই। একদম স্পষ্ট কথায় স্পষ্ট বর্ণনা। কোহলির কথায় যেন সেই উক্তিটিরই অন্ত:প্রবাহ হলো, সুসময়ে অনেকেই বন্ধু হয় বটে, আর অসময়ে হায় হায় কেউ কারো নয়।