শান্ত যেন এক অদৃশ্য মানব

শেষ দশ ওয়ানডে ইনিংসের চারটিতেই হাফসেঞ্চুরি পার করেছেন শান্ত। এর মধ্যে দুই দফা ৭০ এর ঘরে আউট হয়েছেন, ৮০ এর ঘরে ঢোকার আগে।

নাজমুল হোসেন শান্ত অভাগা। তিনি এক অদৃশ্য মানব। তার অবদানগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তার খেলা ইনিংসটি তেমনই এক উদাহরণ। সমালোচনা হতে পারে স্ট্রাইকরেট নিয়ে, কিন্তু তার কি সত্যিকার অর্থেই বাড়তি কিছু করার সুযোগ ছিল?

দলের প্রয়োজনে ওপেনিংয়ে এলেন নাজমু হোসেন শান্ত। ভারতের বিপক্ষে শূন্যরানে আউট হওয়ার বোঝা নিয়েই তিনি মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু বাঁচা-মরার লড়াইয়ে তিনিই শুধু লড়াইটা করতে চাইলেন। খানিকক্ষণ করলেনও বটে। কিন্তু দিনশেষে এই ইনিংসটিও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

কেননা দলকে জয়ের সন্নিকটে নিয়ে যেতে পারেননি। প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়ে আসতে পারেননি । সে দায় কি পুরোপুরি তার? সম্ভবত না। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাদের থেকে প্রত্যাশা একটু বেশি থাকে।

কিন্তু প্রত্যাশাকে মাটিচাপা দিয়ে তারা দুইজনই নির্বোধের মত শট খেলে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন। ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা তাওহীদ হৃদয়ও বল খরচ করে চাপ বাড়িয়েছেন। দারুণ শুরু পেয়েও তানজিদ তামিম উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন।

এসবের মাঝে শান্ত টিকে থাকার চেষ্টা করেছেন। যতদূর অবধি নিজের ইনিংসকে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়- সেই চেষ্টাই করেছেন। কিন্তু অসময়ে তিনিও ফিরে গেছেন। ৭৭ রান করতে ১১০ খানা বল খেলতে হয়েছে অধিনায়ককে। সে দায়ও বাকি ব্যাটারদের উপর বর্তায়। তারা প্রত্যেকেই নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছেন। শান্তর উপর চাপ বেড়েছে।

তিনি সেই চাপ শুষে নিতে চেয়েছেন, কিন্তু শেষ অবধি পারেননি। তবে বাংলাদেশের সংগ্রহ যতটুকুই দাঁড়িয়েছে, তার ভীত একা হাতেই গড়ে দিয়েছেন। সত্যি বলতে ওয়ানডেতে শান্ত এ কাজটায় প্রায় নিয়মিত। শেষ দশ ওয়ানডে ইনিংসের চারটিতেই হাফসেঞ্চুরি পার করেছেন শান্ত।

এর মধ্যে দুই দফা ৭০ এর ঘরে আউট হয়েছেন, ৮০ এর ঘরে ঢোকার আগে। একটা ম্যাচে ১২২ রানে অপরাজিত থেকেছেন, আরেকটা ম্যাচে ৫১ রানে অপরাজিত থেকেছেন। কিন্তু তবুও সমালোচনা পিছু ছাড়ে না শান্তর। মূলত তাকে নিয়ে আলোচনায় সবার সামনে চলে আসে টি-টোয়েন্টি পারফরমেন্স।

ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটের মেজাজ বুঝে শান্ত খেলতে জানেন না বা পারেন না। কিন্তু দীর্ঘ ফরম্যাট গুলোতে এই মুহূর্তে তার থেকে ভাল ব্যাটার বাংলাদেশের রাডারে নেই। ২০২২ সাল থেকে এখন অবধি তিনিই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, ১৪৭২ রান যুক্ত করেছেন তিনি নিজের নামের পাশে।

অতএব অযথাই শান্তকে সমালোচনার উত্তপ্ত তেলে ঠেলে দেওয়া অর্থহীন। তার উপর একটু আস্থা রাখতে হবে। দলের বাকিদেরও তাকে দিতে হবে ভরসা। কেবল তবেই বাংলাদেশের পক্ষে ফলাফল আসা সম্ভব, বাংলাদেশের পক্ষে ম্যাচ জেতা সম্ভব।

Share via
Copy link