টানা দুই টেস্ট ম্যাচে দশ উইকেট বাগিয়েছেন নোমান আলী। কিন্তু তবুও তিনি বড্ড বঞ্চিত এক চরিত্র। ঘরের মাঠে তিনি একাদশে থাকেন, কিন্তু পরের মাঠে তিনি থেকে যান উপেক্ষিত। দুর্ধর্ষ বোলিং পারফরমেন্সের ঠিকঠাক মূল্যায়ন তিনি পাননা। বিদেশের মাটিতে তাকে পাকিস্তান দল বিবেচনাই করে না।
লাহোর টেস্টের চতুর্থ দিনেই জয়ের দেখা পেয়ে গেছে স্বাগতিক পাকিস্তান। সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকাকে তারা হারিয়েছে ৯৩ রানের বেশ বড়সড় ব্যবধানে। আর এই জয় প্রাপ্তির অন্যতম কাণ্ডারি হচ্ছেন ৪০ বছর বয়সী নোমান আলী। প্রথম ইনিংসে তিনি বল হাতে তুলে নেন প্রোটিয়াদের ছয়টি উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনি ফাইফার হয়ত পেতে পারতেন। কিন্তু থাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে চার উইকেট নিয়ে। দুই ইনিংস মিলিয়ে তার ঝুলিতে গেছে দশটি উইকেট। অর্থাৎ তিনি একাহাতেই দক্ষিণ আফ্রিকার সকল প্রতিরোধের অবসান ঘটিয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও তিনি একই কাজ করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
মুলতানে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে নোমান নিয়েছিলেন ছয় উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে গুণে গুণে আবার চারটি উইকেট গেছে তার পকেটে। চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, নিজের খেলা শেষ পাঁচ টেস্টের মধ্যে তিনটি ম্যাচেই তিনিই বাগিয়েছেন দশ বা তার বেশি উইকেট। ২০২৪ সালের ঠিক এই সময়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুলতানে খেলতে নেমেছিলেন বা-হাতি এই স্পিনার।
সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসে নোমানে শিকার ছিল তিন উইকেট। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি একা হাতে ধসিয়ে দেন ইংরেজদের দাপট। ঝুলিতে পুরেন আট উইকেট। সেই সিরিজে তিনি আরও একটি ফাইফার পেয়েছিলেন রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে। প্রথম ইনিংসে তিনটি উইকেট বাগিয়ে নেওয়ার পর, দ্বিতীয় ইনিংসে তার শিকার আরও ছয়টি উইকেট। অল্পের জন্যে সেই ম্যাচটিতে দশ উইকেটের মালিক হতে পারেননি নোমান।
এমন দুর্ধর্ষ নোমান টেস্ট খেলেছেন মোট ২০টি। যার মধ্যে দেশের বাইরে ম্যাচ খেলেছেন মোটে আটটি। তাও সেই অর্থে কঠিন প্রতিপক্ষদের বিপক্ষে নয়। এশিয়ার বাইরে স্রেফ জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন নোমান। জিম্বাবুয়েতে দুই ম্যাচ খেলে আট উইকেট শিকার করেন, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এক ম্যাচ খেলে নেন তিন উইকেট।
এছাড়া শ্রীলঙ্কায় তিন ম্যাচে ১২ উইকেট আছে তার নামের পাশে। তার ক্যারিয়ারের ৯৩টি উইকেটের বাকি সবগুলোই তিনি বাগিয়েছেন পাকিস্তানের মাটিতে। এমন পারফরমেন্সের পরও তাকে শক্ত প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে বিবেচনায় রাখেনি পাকিস্তানের টিম ম্যানেজমেন্ট। তার উপর বাজি ধরার সাহস করেনি কেউ।
বয়সটা ৪০ এর কাছাকাছি। ক্যারিয়ার খুব বেশি লম্বা হয়ত করতে পারবেন না তিনি। তবে সেনা কন্ডিশনে দু-একটি সুযোগ তিনি নিশ্চয়ই প্রত্যাশা করেন। নিজের সামর্থ্য প্রমাণের নুন্যতম সুযোগ তো তার প্রাপ্য। পাকিস্তান দলে এমন ধারাবাহিক পারফরমার খুঁজে পাওয়াও তো দুষ্কর। ধারাবাহিকতার পুরষ্কার কি আদোতে পাবেন নোমান আলী?