চারু শর্মা: একটা নাম, কত স্মৃতি!

বহুদিন পর চারু শর্মাকে দেখে একটু স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লাম। অবশ্য বহুদিন না বলে বহুবছর বলাটাই শ্রেয়। কেননা চারু শর্মাকে আবারো টিভি পর্দায় দেখলাম প্রায় পনেরো বছর পর।

২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় সঞ্চালক হিসেবে তৎকালীন সেট ম্যাক্সে তাঁকে শেষবারের মতো দেখেছিলাম। যদিও গেল বছর ভারতের শ্রীলঙ্কা সফরে ধারাভাষ্য প্যানেলে থাকার পরেও দেখার সুযোগ হয়নি। তবে চলতি টাটা আইপিএলের নিলামকারী হিউ এডমিডস হঠাৎ অসুস্থ হওয়ার পর খণ্ডকালীন নিলামকারী হিসেবে যোগ দেওয়ায় তাঁকে দেখা বা উপভোগ করার সুযোগটা আর হারাচ্ছি না এবার।

চারু শর্মাকে ঘিরে আবর্তিত আমার ছেলেবেলার অনেক স্মৃতি। ২০০৪-০৫ এর দিকে যখন বাড়িতে ডিশ ছিল না তখন ভারতের খেলা দেখতাম ডিডি ন্যাশনাল চ্যানেলে। সে সময় ম্যাচের আগে, মধ্যবর্তী বিরতি এবং ম্যাচের পর ‘ফোর্থ আম্পায়ার’ নামে একটা আলোচনা অনুষ্ঠান হতো যার দীর্ঘদিনের সঞ্চালক ছিলেন চারু শর্মা। সেখানে আলোচক হিসেবে নিয়মিতই চেয়ারে বসতেন বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় নারী ধারাভাষ্যকার আনজুম চোপড়া।

তো এই ডিডি ন্যাশনাল টিভিতে পেতে কত ঝুটঝামেলা যে পোহাতে হতো তা বলে শেষ করার মতো নয়! ডিশ না থাকায় তখন একমাত্র ভরসা ছিল ছাদে লাগানো অ্যান্টেনা। তাই অনেকটা ঝিরঝিরের মাঝেই দেখতে হতো খেলা। দেখা যেত, শচীন ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে কিংবা সৌরভ অফসাউডে শট খেললেন ঠিক তখনই পর্দাটা পুরোপুরি ঝিরঝির হয়ে গেল। তখন আবার ছাদে গিয়ে অ্যান্টেনা ডান-বাম করে ঠিক করতে হতো। একটা সাড়ে সাত ঘণ্টার ওয়ানডে ম্যাচে এরকম কতবার যে ছাদে ওঠতে হতো তার হিসাব মেলানো ভার।

তবে ২০০৬-০৭ এর দিকে ডিশ পাওয়ার সময়টায় বিসিসিআইয়ের ব্রডকাস্টিং পার্টনার হিসেবে নিম্বাস কমিউনিকেশন, নিও স্পোর্টস যোগ দিলে ধীরে ধীরে ডিডি ন্যাশনালে খেলা দেখাটা বন্ধ হয়ে যায় আমার। এভাবে একটা সময় চারু শর্মা নামটাও মুছে যায় স্মৃতি থেকে।

আমার খেলা দেখার শুরুর সময়টায় ক্রিকেট-সঞ্চালক হিসেবে সর্বপ্রথম চেনা লোকটাও এই চারু শর্মা। তিনি সে সময় ধারাভাষ্য দিতেন কি না জানা নেই। তবে সঞ্চালনে তিনি আমার বেশ পছন্দের একজন ছিলেন। সেটা বলতে গেলে এখনও। যদিও এখন তিনি নিয়মিত নন, তারপরেও আমার দেখা সেরা কয়েকজন ক্রিকেট-সঞ্চালকের তালিকায় তিনি সবসময়ই উপরের দিকে থাকবেন।

আর আইপিএলের চলতি নিলামটাই দেখেন না! কী সুন্দর ও সাবলীলভাবে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে খণ্ডকালীন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি! বহু, বহু বছর পর সেই পুরোনো চারু শর্মাকে টেলিভিশনে দেখে তাই একটু স্মৃতিকাতর হয়ে গেলাম। দীর্ঘজীবী হোক চারু শর্মা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link