নান্দনিক ফুটবল মানেই যেন ব্রাজিল। কিন্তু, নান্দনিকতার ধাঁচটা একটু কমই দেখা গেল সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে। যতটুকু দেখা গেছে অন্তত সে টুকুতে আর যাই হোক তৃপ্ত হওয়া যায় না। তারপরও ব্রাজিল কার্যকরী ফুটবল খেললো। দলের সেরা তারকাকে ছাড়াও ঠিকই ম্যাচের ফল বের করে আনলো। দল হিসেবে ব্রাজিলের অনন্যতা বোধহয় এখানেই।
প্রথমত স্কোয়াডে নেইমার, দানিলোর অনুপস্থিতি। তাই তিতেকেও ট্যাক্টিস বদলাতে হয়েছে। ফ্রেডকে উঠিয়ে এনেছিল মাঝ মাঠে। তবে তিতের আস্থার প্রতিদান দিতে খানিকটা ব্যর্থই হয়েছেন তিনি। তবে রক্ষণভাগে ব্রাজিল বরাবরের মতই আধিপত্য দেখাতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে, লেফট ব্যাকে খেলা আলেক সান্দ্রো ছিলেন দুর্দান্ত। আর মিলিটাও, সিলভা, মার্কুনহিস যথারীতি ঠিকঠাক ছিলেন।
ব্রাজিলের রক্ষণভাগ নিয়ে দিন শেষে আসলে প্রন করার সুযোগ নেই। তবে কিছুটা দুর্বলতার জায়গা যদি উঠে আসে সেটি হলো, একজন প্রকৃত নাম্বার নাইনের অভাব। রিচার্লিসন যদিও নাম্বার নাইন হিসেবে গত ম্যাচে দুটি গোল করেছিলেন, তবে তিনিও পুরোদস্তুর নাম্বার নাইনে খেলা স্ট্রাইকার না। এ কারণে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ফিনিশিং দুর্বলতা দেখা গিয়েছে প্রবলভাবে। কারণ সুইসদের দুর্গ ভিনিসিয়াস, রাফিনহা কিংবা রিচার্লিসন ভাঙতে পারেনি। গোলটি এসেছে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারে খেলা ক্যাসেমিরোর পা থেকে।
তবে আক্রমণভাগে তিতের হাতে এ ম্যাচে প্রচুর অপশন ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে তিনি সেটা কিছুটা ব্যবহার করারও চেষ্টা করেছেন। লুকাস পাকেটাকে তুলে নামিয়েছিলেন রড্রিগোকে। আর রিচার্লিসনের পরিবর্তে এসেছিলেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। আর তিতের এই টোটকাতেই বদলে যায় ম্যাচের চেহারা। প্রথমার্ধের মন্থর গতির আক্রমণ রূপ নেয় দুর্দান্ত সব আক্রমণের আগ্রাসনে। আর এতে ফলও মিলে তাড়াতাড়ি। ৮৩ মিনিটে রদ্রিগো আর ক্যাসেমিরোর বোঝাপড়ার মিশেলে গোল পায় ব্রাজিল।
রক্ষণভাগ, আক্রমণ ভাগ এই দুটি জায়গা বাদ দিলে থাকে মাঝমাঠের আক্রমণ। তবে এখানেও কিছুটা দুর্বলতা চোখে পড়ে যায়। এক ক্যাসিমেরো বাদে পাকেটা কিংবা ফ্রেড কেউই তেমন ছন্দে ছিলেন না। তাই তাদের তুলেও নেওয়া হয় ম্যাচের মিনিট ষাটেকের আগেই।
মূলত সুইস গোলবারের বল জড়ানের জন্যই তিতে আক্রমণ ভাগে আরও শক্তি বাড়াতে থাকেন। তাতে ম্যাচে জয় এসেছে ঠিকই তবে মাঝমাঠে এখনও তেমন স্থিতিশীল পারফর্মেন্স নিশ্চিত করা যায়নি তাতে। তাই এখানে কিছুটা পরিকল্পনার প্রয়োজন আছে তিতের।
এখন প্রশ্নটা হল, সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিল দল টিম হিসেবে কতটা ভাল খেলেছে? অবশ্যই ভাল খেলার প্রতিফলন এই ম্যাচ জয়। তবে এ জয়টা ঠিক ব্রাজিল ঘরানার নয়। কার্যকরী জয়, গুরুত্বপূর্ণ তিন পয়েন্ট অর্জিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ব্রাজিল ঠিক ব্রাজিলের মত খেলতে পারেনি। নেইমারের অভাব সেই ভাবে পুষিয়ে দেওয়া যায়নি। প্লেমেকিংয়ের রেশ দেখা গিয়েছে ক্ষীণ।
তবে দিন শেষে ম্যাচ জেতাটা গুরুত্বপূর্ণ। ব্রাজিল সেটা ভাল ভাবেই করতে পেরেছে। ফুটবলে নির্দিষ্ট দিনে ভাল খেলা কিংবা খারাপ খেলার চেয়ে প্রয়োজন হচ্ছে জয়। আর এমন জয়গুলোই শিরোপার পথে একটি দলকে আরও এগিয়ে দেয়।
আরও পুনরুজ্জীবিত করে খেলোয়াড়দের। তাই ব্রাজিলের এমন ছোটখাট দুর্বলতা আমলে নেওয়ার বিষয়, তবে খুব একটা চিন্তার কিছু নয়। যেভাবে ব্রাজিল দলটা এগোচ্ছে, তাতে ঐ দূর পথের স্বপ্ন তারা এবার দেখতেই পারে। স্বপ্নটা আর কিছু নয়, হেক্সা জয়!