গায়ের জোরে নয়, মগজের জোরে

মেহেদী হাসান, নাসুম আহমেদ ও এনামুল হক বিজয়রা আজ রাতেই দেশ ছাড়বেন। তবুও আজ দুপুরে টি-টোয়েন্টি দলের এই তিন জনকে দেখা গেল হোম অব ক্রিকেটে। আর তাঁদের দেখা পেয়েই ঝাপিয়ে পড়েছিল গণমাধ্যমকর্মীরা। কেননা বাংলাদেশের নতুন দিনের টি-টোয়েন্টি দলের ঝাণ্ডাটা যে তাঁদের হাতেই। এই ফরম্যাটে নতুন করে এগিয়ে যাবার যে পরিকল্পনা, সেই পরিকল্পনার মূল চরিত্র তো নাসুম, মেহেদীরাই।

নতুন একটা ব্র্যান্ডের টি-টোয়েন্টি দল যাচ্ছে জিম্বাবুয়েতে। দিন দুয়েক আগে সংবাদমাধ্যমে এমনটাই বলেছিলেন ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। তাঁর কথায় এবং কাজে মিলও পাওয়া গিয়েছে। সত্যিই নতুন একটা টি-টোয়েন্টি দল গড়ার সাহসটা অবশেষে দেখাতে পেরেছে দেশের ক্রিকেট। তামিম ইকবাল নিজেই এই ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছেন। এছাড়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অধিনায়কত্ব হারানো ছিল সবচেয়ে বড় ঘটনা। এমনকি দল থেকেও জায়গা হারিয়েছেন এই ক্রিকেটার।

ওদিকে মুশফিকুর রহিমও নেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। আর সাকিব আল হাসান তো আগে থেকেই এই সিরিজে ছুটি নিয়ে রেখেছিলেন। ফলে তথাকথিত কোনো সিনিয়র ক্রিকেটার ছাড়াই মাঠে নামতে যাচ্ছে নতুন একটা টি-টোয়েন্টি দল।

যে দলটা এই ফরম্যাটটা, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মতই খেলতে চায়। কোনো রকম ভয়ডর ছাড়াই মাঠে লড়াই করতে চায়। এই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্যও বাছাই করা হয়েছে সাহসী অধিনায়ককে। মাঠের আগ্রাসী চরিত্র নুরুল হাসান সোহানই আপাতত বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।

আর এই দলটার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শেখ মেহেদী। বছরখানেক ধরেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের আনসাং হিরো তিনি। বল হাতে নিয়িমিত পারফর্ম করে যাচ্ছেন এই ফরম্যাটে। তবে মেহেদীর আরেকটি বড় দিক হচ্ছে তাঁর ব্যাটিং। বাংলাদেশ দল তাঁকে মূলত লোয়ার অর্ডারের ব্যবহার করে।

শেষ দিকে দ্রুত কিছু রান এনে দেয়ার ক্ষমতা তাঁর আছে। আবার ব্যাটিং অর্ডারের যেকোন পজিশনের চাইলে আপনি মেহেদীকে নামিয়ে দিতে পারেন। বাংলাদেশের হয়ে তিনি কখনো ওপেন করেছেন, কখনো তিন নম্বর পজিশনেও খেলেছেন। ফলে প্রতিপক্ষ দলের জন্যও একটি ধাঁধা হিসেবে ব্যবহার করা যায় ব্যাটার মেহেদী হাসানকে।

তবে তাঁর মূল কাজ শেষের দিকে দ্রুত কিছু রান এনে দেয়া। আর সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলছিলেন, ‘দেখুন, আমরা বাংলাদেশি, আমরা কেউই পাওয়ার হিটার না। আমরা চাইলে আন্দ্রে রাসেল বা পোলার্ড হতে পারবো না। আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে যেটুকু আছে তা দিয়ে যতটা উন্নতি করা যায়। আমরা চাইলেই কিন্তু প্রথম বলে গিয়ে ছয় মারতে পারব না। আমাদের ডাবল, সিঙ্গেল এসবের উপর বেশি নজর দিতে হয়।’

মেহেদী হাসানরা নিজেদের দুর্বলতার জায়গাটা বোঝেন। তাঁদের উড়িয়ে মারার মত গায়ের জোর নেই। তবে মাঠের পুরো ব্যবহার করতে চান তাঁরা। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে চান।

ওদিকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স নিয়ে মেহেদী বলছিলেন, ‘আমরা প্রায় ১৫ বছরের মতো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে ফেলেছি। হলে আরও আগেই হয়ে যেত। যেহেতু হচ্ছে না, আমাদের এটা নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। পাওয়ার হিটিংয়ের কথা সবসময়ই আসে। কিন্তু এটা ঠিক না। আমাদের সামর্থ্যের বাইরে চাইলেও করতে পারবো না। এটা আপনাদের সবাইকে বিশ্বাস করতে হবে।’

তাহলে, তাই সই। গায়ের জোর নয়, লড়াইটা হোক মগজের জোরেই। শুধু ফলাফলটা বাংলাদেশের পক্ষে আসলেই হল।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link