ফিক্সিং গন্ধে মৌ মৌ সিলেট

আলোচনা আর সমলোচনার মধ্য দিয়েই চলছে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) অষ্টম আসর। আসরের শুরু থেকেই ডিআরএস সহ বিভিন্ন ইস্যুতে সমালোচনায় মুখর ছিল ক্রিকেটাঙ্গন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সিলেট সানরাইজার্সের কর্মকাণ্ড রয়েছে সবার সন্দেহের তালিকায়।

এর শুরুটা হয় তাসকিন আহমেদকে দিয়ে। সম্প্রতি জানা যায় টুর্নামেন্টের মাঝপথেই চুক্তির পুরো টাকা দেওয়ার জন্য ফ্র‍্যাঞ্চাইজিকে চাপ দিচ্ছেন তাসকিন। পুরো টাকা না পেলে টুর্নামেন্টের বাকি অংশে তিনি খেলবেন না বলেও হুমকি দেন। তবে পরবর্তীতে এই খবর জানাজানি হবার পর তিনি বলেন, ‘এটি শুধু ভুল বুঝাবুঝি ছিলো।’

ঠিক পরের ম্যাচেই ইনজুরির কারণে বাদ তাসকিন! সিলেট ফ্র‍্যাঞ্চাইজির পক্ষ থেকে বলা হয় ইনজুরির কারণে টুর্নামেন্টের বাকি অংশে খেলতে পারবেন না এই পেসার!

তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) মেডিকেল টিমের তথ্য অনুযায়ী বাদ পড়ার ম্যাচেও খেলার মতো ফিটনেস ছিলো তাসকিনের। এমনকি তাসকিনও জানতেন তিনি খেলবেন! তাসকিন ইস্যু না যেতেই নতুন ইস্যু অধিনায়ক পরিবর্তন।

গেল ম্যাচেই খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ম্যাচের আগ মুহূর্তে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের স্থলে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইংলিশ অলরাউন্ডার রবি বোপারাকে! কিন্তু আগের ম্যাচেই বোপারা ছিলেন বেঞ্চে! সেখান থেকে একাদশে সুযোগ পেলেন তাও কিনা অধিনায়ক হিসেবে।

এরপর ইনিংসে নবম ওভারে বোপারার বল টেম্পারিংয়ের কারণে ৫ রান পেনাল্টি পায় খুলনা। এছাড়া নিয়মিত বোলার নাজমুল অপুকে বোলিংয়েই আনেননি সিলেটের এই নতুন অধিনায়ক! শুধু তাই নয় সিলেট সানরাইজার্সের স্পন্সর হিসেবে আছে ভারতের একটি বিতর্কিত তামাক ব্র‍্যান্ড পান বাহার!

এছাড়া গুঞ্জন রয়েছে বিসিবির দুর্নিতি দমন ইউনিটের কাছে কোনো এক ফ্র‍্যাঞ্জাইজির তিন ক্রিকেটার ফিক্সিং সন্দেহে নজরে আছেন! তবে আইসিসি দুর্নিতি দমন ইউনিট (আকসু) বিস্তারিত কিছু না বলা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না তারা কারা। তবে গুঞ্জন আছে এর সাথে সিলেট ফ্র‍্যাঞ্চাইজির সম্পৃক্ততা আছে!

ব্যাপারগুলো আরো জটিল হওয়ার কারণ স্বীকৃত জুয়া কোম্পানি ‘বিটফেয়ার’ ঘোষণা দিয়েছে সিলেট সানরাইজার্সের ম্যাচ নিয়ে তারা আর কোনো অফারই দিবে না! তাদের এমন সিদ্ধান্তে স্পষ্ট যে সিলেট ক্যাম্পে ভিতরের কর্মকাণ্ড সন্দেহজনক।

বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল মল্লিক হায়দার বলেন, ‘এটা খুবই ভয়াবহ অবস্থা। আমি বলবো না যে সবকিছুই সঠিক ভাবে হচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই টুর্নামেন্ট শেষ করার।’

এমনকি প্রগতি গ্রুপ সিলেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কুদরত-ই-ইবতিহাজ নিজেও জানতেন না অধিনায়ক পরিবর্তনের কথা। টসে কিছু সময় আগে তিনি জানতে পারেন অধিনায়কত্বে পরিবর্তন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা টিম ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি টসের আগ মুহূর্তে জেনেছি। শরীরে জ্বর থাকায় করোনার টেস্ট করেছি যার কারণে দলের সাথে আমি সিলেট যাইনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি বিটফেয়ার নিয়ে কিছুই জানি না, বুঝিওনা। আকসু এ ব্যাপারে তদন্ত করছে। তারাই ভালো বলতে পারবে। সত্যি বলতে আমার কোনো ক্রিকেটীয় জ্ঞান নেই। টিম ম্যানেজমেন্ট এবং কোচিং স্টাফরাই সব সিদ্ধান্ত নেয়। আমি তাদের থেকে শিখছি। আর তিন ক্রিকেটার কোন ফ্র‍্যাঞ্চাইজির বা এই তদন্তের ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা।’

সাত ম্যাচে ছয় হার ও এক জয় নিয়ে টেবিলের তলানীতে অবস্থান করছে সিলেট। আর দলটার খেলা দেখেও মনে হচ্ছে জয়ের প্রতি কোনো তারণা যেন কেউই বোধ করছেন না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link