ক্রিকেটাররা সবসময় রোল মডেল। উঠতি তরুণেরাও ক্রিকেটারদের টিভিতে দেখে পছন্দের ক্রিকেটারকে আদর্শ মানা শুরু করে। সেই আদর্শের মাত্রা শুধু মাঠেই হয়না, ছড়িয়ে যায় মাঠের বাইরেও।
অনুসরণের পরিবর্তে অনেকেই ক্রিকেটারদের রীতিমত অনুকরণ করতে শুরু করেন। কিন্তু, ভাল ক্রিকেটার মাত্রই যে ভাল আদর্শ নয় এমন উদাহরণও আছে ক্রিকেটে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ তো মাঠের বাইরে রীতিমত মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করে মাতাল আচরণও করে ওঠেন। অনেকে তো মারপিটের ঘটনা ঘটিয়ে দল থেকেও নিজের জায়গা হারান, নিষিদ্ধও হন।
মাঠের বাইরে মাতাল হয়ে বিতর্কের জন্ম দেওয়া এমনই কিছু ক্রিকেটারের গল্পের ঝাঁপি খুলে বসেছি আজ। কাকতালীয় ভাবে – এই তালিকায় ইংলিশ ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের পাল্লাই ভারি।
- মন্টি পানেসার (ইংল্যান্ড)
দীর্ঘদিন ধরে পানেসারকে আর ইংল্যান্ডের জার্সিতে দেখা যায়নি। তা না দেখা গেলেও তিনি কিন্তু এখনও অবসর ঘোষণা করেননি। তবে ২০১৩ সালে পানেসারকে নাইটক্লাবে ধরে ফেলে ব্রাইটনের পুলিশ।
পানেসারের দোষ ছিল তিনি শুউষ নাইট ক্লাবের বাইরে মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করে মাতলামি করছিলেন। এ ঘটনার নিশ্চয়তা প্রদান করে পরে সাসেক্স কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব বিবৃতিও দেয়। পরে অবশ্য পানেসার তাঁর কৃতকর্মের জন্যে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন।
- অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ (অস্ট্রেলিয়া)
অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের এই ঘটনা অবশ্য বিখ্যাত ‘পেডালো ইনসিডেন্ট’ নামে পরিচিত। ক্যারিবিয়ানে তখন চলছিল বিশ্বকাপ। এর আগে ফ্লিনটফের অধিনায়কত্বে অ্যাশেজে হোয়াইটওয়াশ হয় ইংল্যান্ড। ফ্লিনটফ তাই খুব করে চাচ্ছিলেন বিশ্বকাপে ভাল করতে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের সাথে প্রথম ম্যাচেই ডাক মেরে আউট হয়ে নিজের প্রতি আরো হতাশ হয়ে পড়েন তিনি।
সেই হতাশার মাত্রা এতটাই ছিল যে টানা আট ঘন্টা তিনি মদ্যপান করেন। এরপর অস্বস্তি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ক্যারিবিয়ান সমুদ্র সৈকতে। ফ্লিনটফের ভাষ্যে তিনি নাকি সেখানে নৌকায় ইয়ান বোথামকে বসে থাকতে দেখেছিলেন। রাত তখন কয়টা জানেন? দেড়টা। ফ্লিনটফ বোথামের সাথে রাত কাটাতে নৌকায় চড়ে বসেন। মাতাল অবস্থায় পরে ফ্লিনটফকে তাঁর সতীর্থরা উদ্ধার করে।
- জেমস ফকনার (অস্ট্রেলিয়া)
জেমস ফকনারের ক্যারিয়ারটা বেশ ভালই চলছিল । কিন্তু সুখে থাকতে যে ভূতে কিলায়, ফকনার প্রমাণ করে দিলেন সেটাই। ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে ম্যানচেস্টারে মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর সময় ধরা পড়েন ফকনার। এরপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ফকনারের প্রতি ১০০০ মিলিলিটার শ্বাসের সাথে ১০০ মিলিগ্রাম অ্যালকোহল ছিল।
যেখানে ইংল্যান্ডের আইন অনুযায় আদর্শ মাত্রার মাপকাঠি ছিল ৩৫ মিলিগ্রাম। এ ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড। ইংল্যান্ড সফরের সীমিত ওভারের দল থেকে বাদ দিয়ে দেয় ফকনারকে। আর এরপর থেকে দলে একরকম ব্রাত্যই হয়ে পড়েন তিনি।
- রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া)
অধিনায়ক আর খেলোয়াড় দুই ক্ষেত্রেই একটা অসাধারণ ক্যারিয়ার কাটিয়েছেন রিকি পন্টিং। তবে এই ক্যারিয়ারেও একটা কালিমার দাগ আছে। ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফোর রিপোর্ট অনুসারে ১৯৯৯ সালে কিং ক্রসের বরবোন অ্যান্ড বিফস্টেক নাইট ক্লাবে দেখা যায় রিকি পন্টিংকে। সেখানে তিনি মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করে ফেলার পর বারের বাইরে মারামারিতেও জড়িয়ে পড়েন।
- জেসি রাইডার (নিউজিল্যান্ড)
প্রতিভাবান এই ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ারটা বড় হতে পারেনি নানারকম বিতর্কে জড়িয়ে। এরমধ্যে তিনি ২০০৮ সালে তিনি টিম প্রটোকল ভেঙে পানশালায় যান। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ির জানালার বাইরে হাত রেখে অনাকাঙ্খিত ইনজুরি ডেকে আনেন। এখানেই শেষ নয়, ২০১২ সালে তিনি আবারও একই কারণে টিম প্রটোকল ভাঙলে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণ দেখিয়ে তাঁকে স্কোয়াড থেবে বাদ দেওয়া হয়।
সেবছরই তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিরতি নেন। উদ্দেশ্য ছিল নিজেকে শুধরানো। তবে, সেটা আর হয়নি। ২০১৩ সালে একটা পানশালায় তিনি মদ্যপ অবস্থায় মারামারি করে আহত হয়ে কোমায় চলে যান।
- ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)
ক্যারিয়ারের শুরুতে বিশৃঙ্খল আচরণের জন্য ‘বিখ্যাত’ ছিলেন ওয়ার্নার। ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চলাকালে বার্মিংহ্যামের এক পানশালায় যান ওয়ার্নার। সেখানে ২২ বছর বয়সী জো রুটও ছিলেন। সেখানে নাকি রুটকে ঘুষি মেরে বসেন ওয়ার্নার। ঘটনাটা এতটাই গুরুতর ছিল যে দল থেকে জায়গা হারাতে হয় ওয়ার্নারকে।
তবে, ওয়ার্নার অবশ্য নিজেকে শুধরে ফেলেছেন। এখন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পুরোদস্তর পারিবারিক জীবন যাপন করেন। মাঠেও তিনি আগের চেয়ে পরিপক্ক।
- বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)
সাম্প্রতিক সময়ে ইংলিশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারিগুলোর একটির সাথে জড়িত ছিলেন বেন স্টোকস। ২০১৭ সালে মদ্যপ অবস্থায় তিনি ব্রিস্টলের এক পানশালার বাইরে মারামারির ঘটনায় জড়ান। সিসি টিভি ফুটেজ তখন বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হয়েছিল। স্টোকসের সাথে তখন অ্যালেক্স হেলসও ছিলেন। ঘটনায় দু’জনকেই সায়মিক ভাবে নিষিদ্ধ করে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। এরপর অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ ও অ্যাশেজ জেতান স্টোকস।