‘গোলিয়াথ’ হয়ে ওঠা ডেভিড

একজন ‘হার্ডহিটার’ হয়েও নিজেকে একজন অসাধারণ টেস্ট ওপেনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা খুব সহজসাধ্য নয়। আর সেটাই তিনি করেছেন নিজের অধ‍্যবসায়ে, নিজের পরিশ্রমে। যেই সীমিত ওভারের ক্রিকেট দিয়ে তিনি বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়েছিলেন তাতেও সাফল্য আসতে থাকে আশা-রূপ ভাবেই।

ডেভিড ওয়ার্নারকে নিয়ে লিখতে বা ভাবতে বসলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর এখনও পর্যন্ত রাস্তাটা সব সময় চমকে দেয়। পাঠকরাও হয়তো তার ব‍্যাতিক্রম নন। একজন ক্রিকেটার যিনি কোনো প্রথম শ্রেণির ম‍্যাচ না খেলেই নিজের দেশের ১৩২ বছরের গৌরবময় ক্রিকেটের ইতিহাসে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিকে অভিষেক হওয়া থেকে শুরু, এরপর যখনই মাঠে নেমেছেন কিংবা মাঠের বাইরেও, সব সময় চর্চার মধ্যে থেকেছেন।

কিশোর বয়সে ওয়ার্নারের কোচ চেয়েছিলেন তিনি যেন বামহাতি ব‍্যাটসম‍্যান থেকে ডানহাতি ব‍্যাটসম‍্যান হয়ে যায়। চেষ্টাও করেছিলেন, কিন্তু কিছুদিন পরেই কোচ নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন, ফিরিয়ে আনেন নিজের স্বাভাবিক অবস্থানেই। তবে সেই ‘পরীক্ষা’ যে একেবারে বিফলে যায়নি তা বর্তমানে তার অসাধারণ ‘সুইচ হিট’ দেখলেই বোঝা যায়।

অস্ট্রেলিয়ার অন‍্যতম বিখ্যাত ঘরোয়া দল নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ২০০৬-০৭ মৌসুম থেকে সুযোগ পেয়ে নিজের নাম করেন একজন ‘ড‍্যাশিং-হার্ডহিটিং’ ওপেনার রূপে। তখন ক্রিকেটের নবতম তথা ক্ষুদ্রতম সংস্করণ সেই ছড়িয়ে পড়তে চলেছে। সেই দেশের হয়ে ক্ষুদ্রতম সংস্করণে যখন দেশের হয়ে প্রথম ম‍্যাচ খেললেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে, নিজের জাত চেনালেন সেই ম‍্যাচেই। ৪৩ বলে ৮৯ রানের ঝড়ো এবং ঝাঁঝালো ইনিংস বুঝিয়ে দিয়েছিল তার আগমন বার্তা।

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সাফল্যের পর যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চে জায়গা পেলেন, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন এই মঞ্চে তিনি হয়তো বেশি দিন টিকতে পারবেন না। কিন্তু সময়ের সাথে নিজেকে সর্বদা বদলেছেন। সবাইকে ভুল প্রমানিত করে বারবার সফল হয়েছেন।

নিজের দ্বিতীয় টেস্টেই চতুর্থ ইনিংসে বিরল চতুর্থ ইনিংসে শতরান সহ ব‍্যাট ‘ক‍্যারি’ করবার কৃতিত্ব করা দিয়ে সেই সফলতার শুরু। পঞ্চম টেস্টেই অন‍্যতম দ্রুততম সেঞ্চুরি কিংবা সিবি সিরিজের দুটি ফাইনালে অসাধারণ সাফল্য তাঁর অর্জনের সিঁড়িকে অন‍্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আরও পরিনত করে তুলছিল।

২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ওয়ার্নার ও তাঁর দলের জন্য অসাধারণ ছিল। বিশ্বকাপ পাওয়া তার কাছে একটি অসাধারণ অর্জন হয়ে থাকবে। এর সাথে রেকর্ডের তো বন‍্যা ছুটিয়েছেন ওই সময়ের আশেপাশে। এক বছরে সাতটি ওয়ানডে সেঞ্চুরি, তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে তিনবার একই টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি, টানা তিন টেস্ট ইনিংসে সেঞ্চুরি কিংবা লাঞ্চের আগেই সেঞ্চুরি, এছাড়াও এশিয়ার মাটিতে টানা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি, রেকর্ড যেনো বারবার এনার পায়ে এসে পদচুম্বন করতো, যা দেখে আমাদের বারবার মনে হয়েছে এই দশকের অন‍্যতম সেরা ব‍্যাটসম‍্যান হয়তো তিনিই।।গোলিয়াথ হওয়ার পথ তখনই শুরু হয়েছিল।

একজন ‘হার্ডহিটার’ হয়েও নিজেকে একজন অসাধারণ টেস্ট ওপেনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা খুব সহজসাধ্য নয়। আর সেটাই তিনি করেছেন নিজের অধ‍্যবসায়ে, নিজের পরিশ্রমে। যেই সীমিত ওভারের ক্রিকেট দিয়ে তিনি বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়েছিলেন তাতেও সাফল্য আসতে থাকে আশা-রূপ ভাবেই। বিরল ১০০ তম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি, টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক থেকে শুরু করে সব ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি তাঁকে বিশ্বের অন‍্যতম ভয়ংকর-সুন্দর ক্রিকেটারের তকমা এনে দিয়েছে। এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন নব‍্য ক্রিকেটের ‘গোলিয়াথ’!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link