লেখাটার শিরোনাম দেখে বিখ্যাত অফ স্পিনার এরাপল্লি প্রসন্নর আত্মজীবনী ‘ওয়ান মোর ওভার’এর কথা হয়ত অনেকের মনে পড়বে। বইটিতে প্রসন্ন নিজের হতাশা, নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তাঁর হাত থেকে বল কেড়ে নেওয়া হয়েছিল বলে। তবে এই নামের আত্মজীবনী মদনলালও লিখতেই পারেন। কারণ অবশ্য প্রাসের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
ভিভ রিচার্ডস নিজের মেজাজে থাকলে সম্ভবত বিশ্বের সব বোলারই বোলিং থেকে অব্যাহতি চাইত। এবং তার আগের ওভারেই সে যদি মাঠের তিন প্রান্তে তিনটি চার খেয়ে থাকে তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু সব নিয়মেরই ব্যাতিক্রম আছে। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে সেই ব্যাতিক্রমের নাম ছিল মদনলাল শর্মা। কপিল যখন বিভ্রান্ত হয়ে ভিভের লণ্ডভণ্ড করা ব্যাটিঙের সামনে কাকে নিয়ে আসবেন এই চিন্তা করছেন তখন মদনলাল ছুটে এসে কপিলকে বলেন, ‘আরও একটা ওভার দে, একে আমি আউট করব।’
সহজ খাদ্য ভেবে মদনলালের সামান্য শর্ট বলে অলসতার সঙ্গে পুল করেন ভিভ। তারপরের দৃশ্য সম্ভবত ১৯৮৩ বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশিবার রিপ্লে করা দৃশ্য। সামান্য মিসটাইমড হয়ে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে উড়ে যায় ভিভের শট। এবং সেই শটের পেছনে ছোটা আরম্ভ করেন ভারত অধিনায়ক। দ্য রেস্ট ইজ হিস্ট্রি।
তবে শুধু ভিভের উইকেট নয়, পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই দলকে উইকেট তুলে দিয়েছিলেন মদনলাল। ৮ ম্যাচে ১৭ উইকেট – একদিনের ক্রিকেটে যথেষ্ট ভালো সংখ্যা। এর মধ্যে তিনবার ৩ উইকেট, একবার ৪ উইকেট। ফাইনালে ভিভের ছাড়াও আরও দুটি মূল্যবান উইকেট নেন মদনলাল – হেনেস ও গোমসের। ব্যাট হাতে ১৭ রানের একটি প্রয়োজনীয় ইনিংসও খেলেন।
বারবিসের কথা মনে আছে? ঠিক ঠিক, এ সেই ম্যাচ যেটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবার পরাস্ত করে ভারত মূলত সানি এবং কপিলের ব্যাটের ওপর ভর করে। তবে এই ঐতিহাসিক জয়ে মদনলালেরও একটু অবদান ছিল। সেদিনও ভিভ ঠিক করেছিলেন একাই দলকে জেতাবেন। শেষ অব্দি ৫০ বলে ৬৪ করে মদনলালের বলে বোল্ড হন ভিভ। তার আগে লয়েডের উইকেটও নিয়েছিলেন মদনলাল। এই দুজন টিকে গেলে ভারতের জয় সহজ হত না।
আরও একটি ইন্টারেস্টিং তথ্য দিই। বিশ্বকাপের ফাইনালে যে ওভারে ভিভকে আউট করেছিলেন মদন তার আগের ওভারেই ভিভের হাতে তিনটি চার খেয়েছিলেন। বারবিসে আউট হওয়ার আগের ওভারে মদনকে চারটি চার মেরেছিলেন ভিভ। দুবারই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ভিভের পতন ডেকে এনেছিল।
এবার একটা ছোট্ট ট্রিভিয়া– ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রথম বলটি বেরিয়ে আসে এই মদনলালের হাত থেকেই। ঠিক ধরেছেন, ৭ই জুন, ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপের সেই ম্যাচ। অবশ্য সেই ম্যাচ ভারতের পক্ষে স্মরণীয় নয় কারণ ইংল্যান্ড ২০২ রানে জয়ী হয় সেই ম্যাচে। ডেনিস অ্যামিসের দুরন্ত ১৩৭ অবশ্য আজ ঢাকা পড়ে গেছে সানির অপরাজিত ৩৬এর কাছে। ১৭৪ বলে।