একটা গুঞ্জন কিংবা গুজব দিয়ে ইতোমধ্যেই সরগরম হয়ে উঠেছে ভারতীয় ক্রিকেট অঙ্গন। আসন্ন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মেগা নিলামের আগেই লোকেশ রাহুলের নতুন ফ্রাঞ্চাইজির সাথে যুক্ত হবার গুঞ্জনের সত্যতা মেলেনি। তবে বাকি ফ্রাঞ্চাইজি গুলোর ধরে রাখা খেলোয়াড়দের সংখ্যা এবং তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। মোট ৩২ জন খেলোয়াড়কে ধরে রাখার সুযোগ ছিল আটটি ফ্রাঞ্চাইজিদের। তার মধ্য থেকে ২৭ জন খেলোয়াড়কে নিজেদের ডেরায় রেখে দিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজিগুলো।
রেখে দেওয়া ২৭ খেলোয়াড়দের আটজন কেবল বিদেশি এবং বাকিরা সকলে ভারতীয় খেলোয়াড়। অতএব বোঝাই যাচ্ছে আসন্ন মেগা নিলামে বেশ ভাল দর উঠতে চলেছে বিদেশি খেলোয়াড়দের। যেসকল ভিনদেশি খেলোয়াড়দের নাম নিলাম ঘরে অর্থের ঝড় তুলবে – এমন খেলোয়াড়দের ছোট্ট একটি তালিকা থাকছে আপনাদের জন্যে।
- ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)
গত মৌসুমটা হয়ত ভুলে যেতে চাইবেন ডেভিড ওয়ার্নার। ব্যাট হাতে একেবারেই নিষ্প্রভ থাকা ডেভিড ওয়ার্নারকে এবার ছেড়ে দিয়েছে তাঁর সাবেক ফ্রাঞ্চাইজি সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। কারণ ভেঙ্গে বলার মতো কিছুই নেই। সেই খারাপ পারফর্মেন্সই মূল কারণ।
তবে আইপিএল পরবর্তী সময়ে ডেভিড ওয়ার্নার নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। হয়েছেন দ্বিতীয় সেরা রান সংগ্রাহক। তাছাড়া আইপিএল ইতিহাসের পঞ্চম সেরা রান সংগ্রাহক ডেভিড ওয়ার্নার যে এবছর বেশ চড়া দামেই যাবেন কোন এক দলে তা মোটামুটি নিশ্চিত। ৪১.৫৯ গড়ে প্রায় ৫৫০০ রান করা ওয়ার্নার যে দলের প্রয়োজনে অবদান রেখেছেন বহুবার। সুতরাং তাঁর মতো একজন ব্যাটারকে দলে নিতে আগ্রহী হবে বেশ কয়েকটি দল, তাতে তাঁর দর উর্ধ্বগামী হবে তাতে সন্দেহ নেই।
- রশিদ খান (আফগানিস্তান)
রশিদ খানের মতো একজন মানসম্মত লেগ স্পিনারকে ছেড়ে দিয়েছে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। স্বাভাবিকভাবে একটু আশ্চর্য হবারই কথা। ফ্রাঞ্চাইজিদের সাথে মনোমালিন্যের কারণবশত তাঁর এই দলত্যাগ। তবে তাঁকে রেখে দিতেই চেয়েছিল বলেই জানায় সানরাইজার্স কর্তৃপক্ষ। কেননা গেলো মৌসুমেও রশিদ ১৪ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়েছিলেন।
তবে এর ফলে কপাল খুললো বাকি ফ্রাঞ্চাইজিদের। রশিদ খানকে অন্য এক জার্সিতে আইপিএল মাতাতে দেখা যাবে তা প্রায় নিশ্চিত। বর্তমানে স্পিনারদের মধ্যে রশিদ খান যে অন্যতম এ বিষয়ে তর্কের বিশেষ কোন জায়গা নেই। রশিদ খান একটি ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো সামর্থ্য রাখেন। তাঁর স্পিন ঘূর্ণিতে কুপকাত হওয়া যেন অবধারিত। লেগ স্পিন ও গুগলির মিশেলে তিনি যেন বনে যান দূর্ভেদ্য। তাঁকে দলে ভেড়াতে নিশ্চয়ই কার্পণ্য করবে না ফ্রাঞ্চাইজিগুলো।
- ট্রেন্ট বোল্ট (নিউজিল্যান্ড)
বর্তমান বিশ্বক্রিকেটে সেরা পেস বোলারদের মধ্যে অন্যতম ট্রেন্ট বোল্ট। নিউজিল্যান্ডের এই বা-হাতি পেস বোলার আইপিএলেও বেশ জনপ্রিয় এবং নিয়মিত পারফর্মার। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বোলিং আক্রমণের নির্ভরযোগ্য অস্ত্র বোল্টকে ছেড়ে দিয়েছে ফ্রাঞ্চাইজিটি।
আগামী বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে অনুষ্ঠিতব্য মেগা নিলামে তিনি বেশ চড়া দামেই বিক্রি হবেন তা বলাই যায়। এখন পর্যন্ত ৬২টি আইপিএল ম্যাচের খেলে তিনি উইকেট নিয়েছেন ৭৬টি। ইকোনমি রেট আটের ঘরে। শেষ আইপিএল মৌসুমে তিনি নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট, ইকোনমি আটের নিচে। মুম্বাই ইন্ডিজও হয়ত চাইবে তাঁকে আবার দলে ফেরাতে।
- ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একমাত্র হ্যাট্রিক করা বোলার লঙ্কান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। পুরো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জুড়েই লঙ্কানদের বোলিং আক্রমণের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন উদীয়মান এই লেগ স্পিনার। তাছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকদের তালিকায় হাসারাঙ্গা রয়েছেন শীর্ষে। আট ম্যাচ থেকে ১৬ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।
নিসঃন্দেহে তিনি এবারের মেগা নিলামে চাহিদার শীর্ষের দিকে থাকবেন। এখন পর্যন্ত ৩৩টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে হাসারাঙ্গার দখলে রয়েছে ৫২ উইকেট। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাঁর ইকোনমি রেট। মাত্র ৬.২১ ইকোনমি রেট টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট বিবেচনায় প্রশংসনীয়।
- জনি বেয়ারস্টো (ইংল্যান্ড)
২০২১ আইপিএল আসরে বেশ ভাল একটা মৌসুমই পার করেছিলেন জনি বেয়ারস্টো। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে তিনি সাত ম্যাচ খেলেছেন। ৪১.৩৩ গড়ে রান করেছেন ২৪৮। মেগা নিলামকে সামনে রেখে তাঁকেও ছেড়ে দিয়েছে হায়দ্রাবাদ ফ্রাঞ্চাইজি।
আইপিএলে তাঁর রেকর্ডও আশাব্যঞ্জক। তিনি এখন পর্যন্ত ২৮ ম্যাচ খেলে হাজারের অধিক রান করা বেয়ারস্টোর স্টাইকরেট ১৪২ এর একটু বেশি। তাছাড়া ওপেনিং এবং মিডেল অর্ডারে সমানতালে ব্যাট করবার দক্ষতা বিদ্যমান তাঁর মধ্যে। সুতরাং জনি বেয়ারস্টো পেতে পারেন নজড়কাড়া পারিশ্রমিক।