পেসত্রয়ীনামা

বল হাতে এক সময় জুটি বেঁধে দুনিয়া কাঁপিয়ে বেড়িয়েছে কার্টলি অ্যামব্রোস-ইয়ান বিশপ- কোর্টনি ওয়ালশ ও মাইকেল হোল্ডিং-জোয়েল গার্নার- ম্যালকম মার্শাল ত্রয়ী। ফ্লিনটফ-হগার্ড-হার্মিসন ত্রয়ীর সাথে দাপট দেখিয়েছে মরনে মরকেল-ভার্নন ফিল্যান্ডার-ডেল স্টেইনও।

মিশেল স্টার্ক-প্যাট কামিন্স-জশ হ্যাজলউড ত্রয়ীর সাথে বর্তমান প্রতিপক্ষের ত্রাস টিম সাউদি- নিল ওয়াগনার-ট্রেন্ট বোল্ট। খুব পিছিয়ে নেই জেমস অ্যান্ডারসন-স্টুয়ার্ট ব্রড-ক্রিস ওকস ত্রয়ী। অনেকে আবার পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম, শোয়েব আখতার ও ওয়াকার ইউনুসের প্রসঙ্গও টানবেন।

এতো রথী মহারথী পেস ত্রয়ীর ভিতর সর্বকালের সেরা বোলিং আক্রমণ কোনটি ছিলো? অথবা বর্তমান সময়ে বিশ্বের সেরা বোলিং আক্রমণই বা কাদের? এই দুটি প্রশ্নের উত্তর পেতে দেখে নেওয়া যাক কিছু পরিসংখ্যান। দেখি পরিসংখ্যান কি বলে।

এক সময় বিশ্বের সেরা পেস আক্রমণ ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সুইংয়ে তেমন পারদর্শী ছিলেন না; তবে নিয়ন্ত্রণ আর লাইন-লেংথের সঙ্গে গতি মিশিয়ে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিতেন কার্টলি অ্যামব্রোস, ইয়ান বিশপ ও কোর্টনি ওয়ালশরা। এক সঙ্গে ৩৭ টেস্ট খেলে এই পেসার ত্রয়ী উইকেট নিয়েছেন ৪১২ টি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক ত্রয়ী মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নার ও ম্যালকম মার্শালের রেকর্ডও অবিশ্বাস্য। এই তিনজন এক সাথে খেলেছেন মাত্র ২৬ টেস্ট, তাতেই তিন জনের ঝুলিতে আছে ৩৩১ টি উইকেট।

সুইং, রিভার্স সুইং ও গতি দিয়ে প্রতিপক্ষের ত্রাস ছিলেন ইংল্যান্ডের বোলিং ত্রয়ী অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, স্টিভ হার্মিসন ও ম্যাথু হগার্ড। এক সাথে ৩৩ ম্যাচ খেলে তাদের সংগ্রহে রয়েছে ৩৮৩ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার ডেল স্টেইন, ভারনন ফিল্যান্ডার ও মরনে মরকেলের জুটিও বিধ্বংসী ছিলো। এক সঙ্গে ৩১ ম্যাচে ৩৬৮ উইকেট শিকার করেছিলেন তাঁরা।

এক সাথে মাঠে নেমে ২২ ম্যাচে ২৬৫ উইকেট নিয়েছিলেন জেমি অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ড ব্রড ও স্টিভেন ফিন। কিন্তু ফিনের চোটের কারণে এক সঙ্গে আর বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি এই ত্রয়ী। ফিন বাদ পড়লে অ্যান্ডারসন ও ব্রডের সাথে যোগ দেন ক্রিস ওকস। ২৪ ম্যাচে ২৬৫ উইকেট শিকার করেছেন এই পেস ত্রয়ী।

অস্ট্রেলিয়ার স্বর্ণযুগে এক সাথে দুনিয়া কাঁপিয়েছে জেসন গিলেস্পি, গ্লেন ম্যাকগ্রা ও ব্রেট লি। এক সাথে ২২ ম্যাচ খেলে ২৪৩ উইকেট সংগ্রহ করেছে তারা। পিছিয়ে নেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাখায়া এনটিনি, শন পোলক ও আন্দ্রে নেল। ১৯ ম্যাচ খেলে ২২৮ উইকেট নিয়েছিলেন এই তিনজন।

অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিংয়ের মূল শক্তি এখনো তাদের পেসাররা। ইদানিং এদের সাথে যোগ হয়েছে ভারতের নামও। বর্তমান টেস্টে মিচেল স্টার্ক-প্যাট কামিন্স-জশ হ্যাজলউড, জিমি অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রড, ক্রিস ওকস, টিম সাউদি,ট্রেন্ট বোল্ট, নিল ওয়াগনাররা দুনিয়া কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে।

বর্তমানের সেরা পেস ত্রয়ীর আলোচনাতে অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স ও জশ হ্যাজলউড জুটিকে এগিয়ে রাখবেন বেশীর ভাগ মানুষ। এরপর আসবে ইংল্যান্ডের জেমস অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ড ব্রড ও ক্রিস ওকস ত্রয়ীর নাম। নিউজিল্যান্ডের তিন পেসার টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, নিল ওয়াগনারের নাম দেরিতে আসলেও ইতিমধ্যে তারা রেকর্ড গড়ে বসে আছেন। ছাড়িয়ে গেছেন সব কিংবদন্তিদের। শুধু সময়েরই সেরা নয়, পরিসংখ্যান বলছে ইতিহাসের সেরা পেস ত্রয়ী বোল্ট, সাউদি ও ওয়াগনার।

টেস্ট ইতিহাসে এক সাথে জুটি বেঁধে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেছেন এই তিনজন। এক সাথে ৩৬ ম্যাচ খেলে ৪৯০ উইকেট শিকার করেছেন এই পেস ত্রয়ী। যা দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা অ্যামব্রোস, বিশপ, ওয়ালশ জুটির থেকেও ৭৮ উইকেট বেশী। স্টার্ক, কামিন্স ও হ্যাজলউড জুটি ১৭ ম্যাচে নিয়েছে ২২৩ উইকেট এবং অ্যান্ডারসন, ব্রড, ওকস ২২ ম্যাচে নিয়েছেন ২৬৫ উইকেট।

এদের ভিতর এখনো খেলে যাচ্ছে শুধু মাত্র ইংল্যান্ডের অ্যান্ডারসন, ব্রড, ওকস জুটি, অস্ট্রেলিয়ার স্টার্ক, হ্যাজলউড, কামিন্স জুটি ও টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, নিল ওয়াগনার জুটি। ক্যারিয়ারের শেষ গগণে অবস্থান করছে অ্যান্ডারসন ও ব্রড। এই জুটি হয়তো আর দেখা যাবে না বেশি দিন।

স্টার্কের বাঁহাতি অ্যাঙ্গেল ও নতুন বলের সুইং এবং ছোট ছোট সুইংয়ে কামিন্স ও হ্যাজলউডের নিয়ন্ত্রণ দেখা যাবে আরো অনেক দিন। নিশ্চিত ভাবেই এই জুটি ছাড়িয়ে যাবে অনেক জুটিকে। তবে শীর্ষে অবস্থান করা নিউজল্যান্ডের পেস ত্রয়ীর ঝুলিতে আরো কত উইকেট জমা পড়বে সেটা সময়ই বলে দেবে। সাউদির আউট সুইং, বোল্টের ইন সুইং আর ওয়াগনারের গতির সাথে বাউন্সার বৈচিত্র্য নিয়ে এই জুটি নিজেদের অবিশ্বাস্য উচ্চতায় তুলবে এটা অনেকটাই নিশ্চিত।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় পেসাররাও নিজেদের সুদিনে আছেন। এখানে অবশ্য নির্দিষ্ট করে কোনো ত্রয়ীর নাম নেওয়া যাচ্ছে না। আক্রমণটা উইকেট-কন্ডিশন ও প্রাপ্যতা সাপেক্ষে সামাল দিচ্ছেন মোট পাঁচজন – জাসপ্রিত বুমরাহ, ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব, মোহাম্মদ শামি ও ভূবনেশ্বর কুমার। ক্রিকেট বোদ্ধারা এক্ষেত্রে প্রায়ই বলেন – ভারতীয় ক্রিকেটে পেস বোলিংয়ের এমন সুদিন ইতিহাসে আর কখনোই আসেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link