এক অখণ্ড মানচিত্রের হয়েছে বহু টুকরো। বেড়েছে কোন্দল, হয়েছে বৈরীতা। সেটা আবার ছড়িয়ে গেছে খেলার মাঠে। গোল টেবিলের রাজনীতির প্রভাবটা খানিকটা ডিম্বাকার মাঠকেও ছুঁয়ে গেছে। তাইতো, এখন আর ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হতে দেখা যায় না সচারচর। তবে একটা সময় দৃশ্যপট ছিল অনেকটাই ভিন্ন। দুই দেশের ক্রিকেট লড়াইটা সীমান্তের উত্তেজনাকে ছাপিয়ে যেত।
তবে এসবই এখন অতীত। রাজনৈতিক বৈরিতা সময়ের সাথে বেড়েছে কয়েকগুণ। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আয়োজনের রাস্তা তাই বন্ধ। তবে আজও যখনই এই দুই দল মুখোমুখি হয় থমকে যায় গোটা বিশ্ব। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে থাকা প্রতিটা ক্রিকেট সমর্থক সবকিছু ছেড়ে বসে পড়েন টিভি সেটের সামনে। সুযোগ পেলে মাঠে। ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেটীয় লড়াইয়ের জনপ্রিয়তায় এতটুকু পরিমাণ ভাটা পড়েনি। বরং আগ্রহ বেড়েছে বহুগুণ।
আর সমর্থকদের আগ্রহ মানেই তো আর্থিকভাবে লাভবান হবার সুযোগ। আর সে সুযোগটা লুফে নিতে চেয়েছিল বেশকিছু দেশের ক্রিকেট বোর্ড। তারা আয়োজন করতে চেয়েছিল ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। এমন কিছু দেশকে ঘিরেই থাকছে আজকের আলোচনা।
- শ্রীলঙ্কা
২০১৭ সালের দিকে শ্রীলঙ্কার তৎকালীন ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি থিলাঙ্গা সুমানাথিপালা ভারত সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আয়োজনের। তিনি সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অনুরোধ করেছিলেন অনুমতির জন্যে। এই দুই দেশের ক্রিকেটীয় লড়াই ক্রিকেটের উত্তেজনা বাড়ায়। তাছাড়া দুই দলেরই ক্ষতি হচ্ছে নিজেদের সাথে খেলতে না পারা সুযোগের কারণে। এমন সব কারণও তুলে ধরেছিলেন থিলাঙ্গা।
তবে তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গলেনি ভারতের প্রধানমান্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন। থিলাঙ্গার পরিকল্পনা বাস্তবে আর কখনোই রুপ পায়নি। এই ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিরপেক্ষ ভেন্যুতেও এই দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আয়োজনে বাঁধা দেয়।
- সংযুক্ত আরব আমিরাত
সেই ১৯৪৭ সাল থেকেই ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বৈরথের শুরু। তবে তখন এই দুই দেশ নিজেদের মধ্যে সিরিজ আয়োজন থেকে বিরত ছিল না। এমনকি একবিংশ শতাব্দী শুরু হবার আগেও নিয়মিত সিরিজি আয়োজিত। নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে আরব আমিরাতে শারজাহতেও আয়োজিত হয়েছিল বেশকিছু সিরিজ।
সময়ের পরিক্রমায় সেই দিন বদলেছে। তবে দুবাই ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আবদুল রহমান ফালাকনাজ হারানো দিন ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। তবে তাতেও আশান্বরুপ সাড়া পাওয়া যায়নি। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের কাছে বাজেভাবে হারার পরই এমন প্রস্তাব ভারতকে দিয়েছিলেন ফালাকনাজ। তবুও ভারত রাজনৈতিকভাবে অটল।
- ইংল্যান্ড
ভারত-পাকিস্তান এই দুই দেশে একটা বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রবাসী হয়ে বসবাস করছেন ইংল্যান্ডের আনাচে-কানাচে। এই দুই দলের মাঠের লড়াই দেখবার জন্যে নিশ্চয়ই ভীড় লেগে যেত ইংল্যান্ডের স্টেডিয়ামগুলোতে। এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে খানিকটা আর্থিক উপার্জনের পন্থা খুঁজে বের করেছিল ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডে ডেপুটি চেয়ারম্যান মার্টিন ডার্লো। তবে এবার অস্বীকৃতি জানায় পাকিস্তান।
তারা ভিন্ন কোন ভেন্যুতে ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আয়োজনে নারাজ। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড নিজেদের মাটিতেই অধিকাংশ ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোকে আতিথিয়েতা দিয়েছে। সুতরাং তাঁরা নতুন করে আবার নিরপেক্ষ ভেন্যুতে যেতে নারাজ। নিজেদের দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি বাচিয়ে রাখার নিমিত্তেই নাকি ইংল্যান্ডের প্রস্তাব নাকচ করে দেয় পিসিবি।