ক্রমশ উত্তেজনা বাড়ছে। বাংলাদেশের তাপ প্রবাহের মত করে বিশ্ব ক্রিকেটাঙ্গনেও কিঞ্চিৎ তাপপ্রবাহ চলমান। সেটার কারণ ভারত-পাকিস্তান রাজনৈতিক ইস্যু। সেটা নতুন কিছু নয়। দু’টি দেশের জন্মলগ্ন থেকেই এই দ্বৈরথের সূত্রপাত। দুই দেশের রাজনৈতিক মতাদর্শের বিবাদ যেন বিস্তৃতি লাভ করে ছড়িয়ে যাচ্ছে বহুদূর অবধি।
ক্রীড়াঙ্গনে রাজনৈতিক বৈরিতার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বহু আগে থেকেই। তবে বিষয়টা যেন এখন ধারণ করছে বিরাট আকার। দুই দেশের ক্রিকেট মুখোমুখি অবস্থানে। ভারত পাকিস্তানে খেলবে না এশিয়া কাপ। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও হুমকি দিয়ে রেখেছে ওয়ানডে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ না করবার।
শেষ অবধি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আখেরে লোকসানটা হবে ক্রিকেটের। ফুটবল বা অনান্য খেলার মত ক্রিকেট খুব দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে যেতে পারেনি পৃথিবীর আনাচে-কানাচে। তবে আইসিসি চাইছে সে পথে হাঁটতে। কিন্তু পাকিস্তান শেষ অবধি ওয়ানডে বিশ্বকাপে অংশ না নিলে ব্যাঘাত ঘটবে ক্রিকেটে বিশ্বায়নে সে কথা হলফ করে বলে দেওয়া যায়।
ভারত-পাকিস্তানের মাঠের লড়াইটা বেশ বিনোদনের খোরাক মেটায়। একটা ইতিবাচক উত্তেজনার সঞ্চার ঘটায়। প্রতিদ্বন্দ্বিতার সৌন্দর্য্য ফুটে ওঠে ডিম্বাকার সবুজ গালিচায়। তবে সে আয়োজনে বাঁধা হয়ে বারেবারে দাঁড়িয়েছে দুই দেশের রাজনীতি। অবশ্য এই বিষয়টি সবসময়ই সম্পর্কিত। তেমনটাই মত প্যারিসের এসকেএমইএ বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক সাইমন চ্যাডউইকের।
ক্রীড়া ও ভূ-রাজনীতি বিষয়ক এই অধ্যাপক এশিয়ান এক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই বিষয়টা স্রেফ দু’টি দেশ আর একটি টুর্নামেন্টের নয়, বরং কারা ক্রিকেট খেলে, কোথায় খেলে এবং কারা এই খেলাটার উপর ছড়ি ঘোরায় সবকিছুর সাথেই সম্পর্কিত।’ বৈশ্বিক কোন ক্রীড়া আয়োজন থেকে একটি দেশের রাজনৈতিক হর্তাকর্তাদের বাদ রেখে কার্যসিদ্ধি করা সম্ভব নয়। পাকিস্তান-ভারত বৈরিতা স্রেফ একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে নয়। সেখানে আরও বহু বিষয় জড়িয়ে আছে।
পাকিস্তানের নীতি-নির্ধারকদের অভিমত, ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট নিয়ে তৈরি হওয়া এই নতুন ইস্যুর জন্য দায়ী ভারতের প্রধানমন্ত্রী। নরেন্দ্র মোদি রীতিমত অনমনীয় ভারতকে পাকিস্তানে খেলতে যেতে দেওয়ার বিষয়ে। যদিও পাকিস্তানের দাবি তাঁরা কখনোই ভারতে খেলতে যেতে অস্বীকৃতি জানায়নি বরং সবচেয়ে বৈরি পরিস্থিতিতেও পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দল সিরিজ খেলতে গিয়েছিল ভারতে।
সে স্মৃতি রোমন্থন করেন পাকিস্তানের বিখ্যাত দ্য ডন পত্রিকার ক্রীড়া বিভাগীয় প্রধান আবদুল গাফফার। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান কখনোই ভারতে ক্রিকেট খেলতে যাওয়ার সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেনি। এমনকি নয়া দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামের পিচ বিনষ্ট করার পরও ১৯৯৯ সালে ভারতে খেলতে গিয়েছিল পাকিস্তান।’
অন্যদিকে, বোর্ড ফর ক্রিকেট কন্ট্রোল ইন ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এখন অবধি নেওয়া হয়নি কোন সিদ্ধান্ত। বিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি রাজীব শুকলা ভারতীয় এক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ভারত-পাকিস্তান প্রতিপক্ষ দুই দেশে খেলতে যাবে কিনা সে বিষয়ে এখন অবধি কোন সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত করা হয়নি। তাছাড়া ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের আরেক সদস্য জানিয়েছেন ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলো কোথায় খেলবে সে সিদ্ধান্ত কেবল এসিসি ও আইসিসি নিতে পারে। এখানে বিসিসিআইয়ের করার তেমন কিছু নেই।
এই কাঁদা ছোড়াছুড়ি বিষয়টি চলমান রয়েছে বিগত বেশকিছুদিন ধরে। তবে বাস্তব চিত্র বেশ ভিন্ন। পাকিস্তান হাজারটা হুঙ্কার দিলেও শেষ অবধি তাদের কাছে বিশ্বকাপ না খেলবার কোন পথ খোলা নেই। পাকিস্তান চাইলেই আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপ বয়কট করতে পারবে না। পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তাদেরকে সে সুযোগটুকু দিতে চাইবে না। তাছাড়া বিশৃঙ্খল পাকিস্তানকে একত্রিত করতে পারবে ক্রিকেট সেটাও অবিশ্বাস করাবর মত নয়।
চ্যাডউইক মনে করেন, ‘ক্রীড়া সফলতা একটি গোটা দেশকে ভাল লাগার জায়গা তৈরি করে দিতে পারে পাশাপাশি জাতীয় সংহতি বাড়াতেও সাহায্য করে। একই সময়ে দেশের ব্র্যান্ড ভ্যালুও বাড়াতেও ভূমিকা রাখে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের সফলতা।’ পাকিস্তানের পক্ষে এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করা হবে নেহায়েত বোকামি হবে বলেও মনে করেন চ্যাডউইক।
২০২৫ সালে পাকিস্তান আয়োজন করবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এই মুহূর্তে পাকিস্তান বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ না নিলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজনেও ভাটা পড়তে পারে। এমনটাই মত আবদুল গাফফারের। বরং পাকিস্তান নিশ্চিত হয়ে নিতে পারে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত পাকিস্তানের মাটিতেই খেলবে, এই পরামর্শও দিয়েছেন আবদুল গাফফার।
শেষ অবধি জল কতদূর গড়ায় সেটা হয়ত সময়ই বলে দেবে। তবে পাকিস্তানের কাছে পথ খোলা নেই। পাকিস্তান চাইলেই আগ্রাসী কোন পদক্ষেপ এই মুহূর্তে করতে পারছে না। তবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড তথা সরকারকেও একটু নমনীয়তা দেখানো উচিত বলে মত বহু ক্রিকেট বোদ্ধাদের।