মোহাম্মদ পরিবার, পাকিস্তান ক্রিকেটের পারিবারিক জাল

পাকিস্তান ক্রিকেট আর মোহাম্মদ পরিবার একটি আরেকটির পরিপূরক। দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অধ্যায় এই মোহাম্মদ পরিবার। পাকিস্তানের হয়ে টেস্ট খেলেছেন এই মোহাম্মদ পরিবারের পাঁচ ভাইয়ের চার ভাই। শুধু সেই প্রজন্মই নয়, পরের দুই প্রজন্মতেও মোহাম্মদ পরিবার ক্রিকেটার দিয়েছে পাকিস্তানকে।

পাকিস্তানের কায়েদি আজম ট্রফির ম্যাচ চলছে। সাল ২০১৮।

করাচি হোয়াইটসের হয়ে মুলতানের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করলেন শেহজার মোহাম্মদ। খালি চোখে এটা আপনার কেবল একটা ডাবল সেঞ্চুরি মনে হলেও এই ডাবল সেঞ্চুরি আসলে একটা ইতিহাসের সাক্ষী। শেহজার মোহাম্মদ ডাবল সেঞ্চুরি করার পর ব্যাটটি হানিফ মোহাম্মদ স্ট্যান্ডের দিকে উঁচিয়ে ধরলেন।

শেহজার মোহাম্মদ আসলে কি বুঝাতে চাইলেন? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। শেহজার মোহাম্মদ তার এই ডাবল সেঞ্চুরির মূহুর্তে স্মরণ করতে চাইলেন তাঁর দাদা কিংবদন্তি হানিফ মোহাম্মদকে। ডাবল সেঞ্চুরির পর শেহজার বলেছিলেন, ‘এটি আমার এবং আমার পরিবারের জন্য একটি দুর্দান্ত অর্জন এবং আমি এই রেকর্ডটি নিয়ে গর্বিত। আমি প্রতিনিয়ত হানিফ মোহাম্মদ স্ট্যান্ডের দিকে চেয়েছিলাম। আমার ইনিংসের সময় এটি আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছিল।’

হানিফ মোহাম্মদ

পাকিস্তান ক্রিকেট আর মোহাম্মদ পরিবার একটি আরেকটির পরিপূরক। দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অধ্যায় এই মোহাম্মদ পরিবার। পাকিস্তানের হয়ে টেস্ট খেলেছেন এই মোহাম্মদ পরিবারের পাঁচ ভাইয়ের চার ভাই। তবে সবচেয়ে চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হানিফ মোহাম্মদ। যিনি পাকিস্তানের হয়ে ৫৫ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। ১২ টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৪৩.৯৮ গড়ে ৩৯১৫ রান করছেন।

সবাই বিখ্যাত হানিফ মোহাম্মদকে চিনলেও তাদের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় ওয়াজির মোহাম্মদ। তিনিও পাকিস্তানের হয়ে টেস্ট খেলেছেন। অন্য ভাইয়ের মধ্যে একমাত্র রাইস মোহাম্মদ ছাড়া বাকি দুই ভাই সাদিক মোহাম্মদ এবং মোহাম্মদও দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। রাইস মোহাম্মদ ৩০টা প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেললেও দেশের হয়ে টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় নি। যদিও ১৯৫৫ সালে ভারতীয় দলের পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) সফরের সময় ডাক্কা (বর্তমান ঢাকা) টেস্টের দ্বাদশ ক্রিকেটার ছিলেন। যদিও ঢাকা টেস্টের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিল রাইসকে। শেষ পর্যন্ত দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বাদ পান নি।

হানিফ মোয়াম্মদ, মোস্তাক মোহাম্মদ, সাদিক মোহাম্মদ তিনভাই একসাথে ১৯৭৯ সালে করাচিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে খেলেছিলেন। হানিফের শেষ ম্যাচ ছিল আর সাদিকের অভিষেক হয়েছিল সেই ম্যাচে। ওপেন করতে নেমেছিলেন হানিফ এবং সাদিক দুইভাই। এটাও টেস্ট ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বারের মত ঘটেছিল। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল পাকিস্তান দলের প্রথম ১০০ টেস্টে এই চার ভাইয়ের কোন না কোন ভাই খেলেছেন। এক ইনিংসের দুই ভাই সাদিক মোহাম্মদ এবং মুশতাক মোহাম্মদের সেঞ্চুরির ঘটনাও আছে।

মুশতাক মোহাম্মদ

এই পাচ মোহাম্মদ ভাইয়ের মা’ও ছিলেন টেনিস প্লেয়ার। তাই খেলাটা আসলে তাদের রক্তের মধ্যেই ছিল। শুধুমাত্র তাদের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যেই ক্রিকেট থেমে থাকে নি, হানিফ মোহাম্মদের ছেলে শোয়েব মোহাম্মদ এবং শোয়েব মোহাম্মদের ছেলে শেহজার মোহাম্মদও দেশটির ঘরোয়া লিগে নিয়মিত ক্রিকেট খেলেন। শোয়েব পাকিস্তানের হয়ে ৪৫ টি টেস্ট ও ৬৩ টি ওয়ানডে খেলেছেন।

পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে দেশের হয়ে টেস্ট খেলতে না পারা একমাত্র রাইস মোহাম্মদের তিন ছেলেও দেশটির হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন তাঁরা হলেন – শহীদ মোহাম্মদ, আসিফ মোহাম্মদ,তারিখ মোহাম্মদ। সাদিক মোহাম্মদের ছেলে ইমরান মোহাম্মদও দেশের হয়ে টেস্ট খেলতে না পারলেও খেলেছেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট। ক্রিকেট ইতিহাসে এক পরিবার থেকে ১০ জন প্র‍থম শ্রেণির ক্রিকেটার বেরোনোর আর কোনো উদাহরণ নেই।

প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে হানিফ মোহাম্মদের সেই ৪৯৯ রানের অমর কীর্তি যেমন তাঁকে যুগ যুগ বাঁচিয়ে রাখবেন তেমননিভাবে পাকিস্তান ক্রিকেটে এই মোহাম্মদ পরিবার বেঁচে থাকবেন ক্রিকেট যতদিন থাকবে।

হানিফ, শেহজার ও শোয়েব মোহাম্মদ

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...