লঙ্কান এক ক্রাইসিসম্যান

ক্রিকেটের তিন অংকের এক মায়া আছে। যে মায়া তৈরি করে রেকর্ড, যে মায়া বাড়ায় ক্রিকেটের আনন্দ। শতক বা ১০০ রানের এক একটি ইনিংস ব্যাটারদের ক্যারিয়ারের শোভা বাড়ায়। ব্যাট হাতে বাইশ গজের নামার আগে প্রতিটা ব্যাটারই হয়ত ভেবে নামেন দলের জন্যে কিছু একটা করে দেখাবেন। আর একটা একশ রানের ইনিংস খেলার থেকে ভাল আর কিই-বা অবদান রাখার পন্থা হতে পারে?

কতসব দৃষ্টিনন্দন শট ও ধৈর্য্যের মিশেলে আসে এক একটি শতক হাঁকানো ইনিংস। ক্রিকেট মাঠে কোন কোন ব্যাটার স্রেফ মজার ছলেই করেছেন শতক। সেদিক থেকে এগিয়ে থাকবেন হয়ত স্যার ডন ব্র্যাডম্যান। তবে তাঁর খেলা দেখার সুযোগ হয়ত হয়নি অনেকের। স্রেফ ক্রিকেট খেলতে গিয়েই এমন সব শতক হাঁকানো আরেক ব্যক্তি শচীন টেন্ডুলকার।

আবার একবারে বোলারদের কোনঠাসা করে মারকাটারি ইনিংস খেলতেও দেখা গিয়েছে। দিনশেষে তাঁদের নামের পাশেও তিন অংক জুড়েছে। ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্সদের কথাই মাথায় আসবে। তবে দলের বিপর্যস্ত মুহূর্তে সব সময়ই হাল ধরে শতক হাঁকানোর মত খেলোয়াড়দের সংখ্যা বেশ কম।

শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দ্বিমুথ করুণারত্নে ঠিক যেন সে দায়িত্বই পালন করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। অধিনায়ক সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া যা বোঝায়। একটা বাজে সময় পার করছে শ্রীলঙ্কা। একটা ট্রানজিশন পিরিয়ড। দলের বাকি সবার যেখানে পারফর্মেন্সের গ্রাফ ক্রমশ নিম্নমুখী। সেদিক থেকে ব্যতিক্রম একমাত্র করুণারত্নে।

সাম্প্রতিক সময়ের সিরিজগুলো পর্যালোচনা করলেই আসলে ঠিক বোঝা যায়  ঠিক কতটা ইমপ্যাক্টফুল ইনিংস খেলছেন দ্বিমুথ করুণারত্নে। শেষ ছয় টেস্ট ম্যাচের চারটি ম্যাচে রয়েছে তাঁর শতক ছাড়ানো ইনিংস। তাছাড়া সেই শতকের একটি আবার দ্বিশতক। ঠিক স্রোতের বিপরীতে একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। করুণারত্নে যেন লংকানদের অ্যাকিলিস।

সেই ছয় ম্যাচের মধ্যে তিনটি জিতেছে শ্রীলঙ্কা। তবে সেখানেও যে একেবারেই অবদান নেই করুণারত্নের তা বলা বেশ মুশকিল। বাংলাদেশের সাথে ড্র হওয়া ও এক জয়ের ম্যাচগুলোতে ছিল তাঁর দুই সেঞ্চুরি। একটি সেই ডাবল সেঞ্চুরি। একম্যাচে হয়েছেন ম্যাচ সেরা।

এরপর ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিমন্ত্রণ জানায়। সেই দুই টেস্টেও হেসেছে দ্বিমুথ করুণারত্নের রয়েছে একটি সেঞ্চুরি। সে সিরিজও তাঁর দলকে জিতিয়েছন। তবে একেবারে যাচ্ছে তাই অবস্থা হয় ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে। ভারতের কাছে বিন্দুমাত্র পাত্তা পায়নি লংকানরা।

দুই ম্যাচের একটিতে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে আরেকটি হেরেছে ২৩৮ রানের বড় ব্যবধানে। এমন বৈরী পরিস্থিতিতে যেখানে দলের সবার রান মিলিয়ে দুই ইনিংসে কোন রকমে তিনশ ছাড়িয়েছে সে পরিস্থিতিতে একাই করুণারত্নে লড়াই করেছেন এবং সেই সাথে তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। নিজেকে একেবারে উজাড় করে দিচ্ছেন করুণারত্নে।

তবে গেল বছর ইংল্যান্ডের জো রুট ঠিক যেমনটা করেছেন। তিনি একাধারে রান করেছেন তবে তাঁর দল তাঁকে ঠিক সে পরিমাণ সহয়তা করেনি কেউ। সাদা পোশাকে সেরা রান সংগ্রাহক হওয়ার পরও এক পঞ্জিকা বর্ষে নয় টেস্ট হারান লজ্জাজনক এক রেকর্ডের অংশীদার হতে হয়েছিল জো রুটকে।

হয়ত অমন কোন এক রেকর্ডের ভাগিদার হতে হবে না দ্বিমুথ করুণারত্নেকে। তবে তাঁর এই যে চোখ জুড়ানো ব্যাটিং প্রদর্শন, তাও আবার দলের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে তা চলতে থাকুক। তবে দল বেগতিক অবস্থানে না থাকুক। দল থেকেও যেন সেই স্বস্তিটা পেয়ে নিজের ক্যারিয়ারটা আরও সমৃদ্ধ করতে পারেন লংকান এই অধিনায়ক প্রত্যাশা হয়ত সেটুকু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link