আফ্রো-এশিয়া কাপ: একই দলে বাবর-বিরাট, রোহিত-লিটন!

ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বদৌলতে তারকা ক্রিকেটারদের একই সাথে এক দলে খেলতে দেখার দৃশ্য এখন একেবারেই সাধারণ এক ঘটনা। কিন্তু যখন ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট ছিল না, তখন? তখনও বড় বড় ক্রিকেটারদের একই দলে খেলতে দেখা যেত। 

বহু বছর আগে আফ্রো-এশিয়া কাপ নামে একটা সিরিজের প্রচলন ছিল। যেখানে এশিয়া মহাদেশে থাকা দেশগুলোর ক্রিকেটারদের নিয়ে একটা একাদশ আর আফ্রিকার সেরা একাদশের মাঝে সিরিজ হত। আর সে সিরিজের সৌজন্যে শহীদ আফ্রিদি, ধোনিদের একসাথে একই দলে দেখা মিলত। শোয়েব আখতার বল করছেন। ধোনি উইকেটের পিছনে থেকে সেই বল গ্লাভসে বন্দী করছেন।

কিংবা নিজেদের মাঝে চরম বৈরিতা নিয়েও কাঁধে কাঁধ মিলিয়েও এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বে অক্ষুণ্ণ রাখার দিকে চোখ থাকত ভারত আর পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের। সেই শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে সামিল হয়েছিলেন বাংলাদেশের মাশরাফি, আশরাফুল, মোহাম্মদ রফিক, তামিমরাও। তবে সেই সব দৃশ্য এখন সোনালি অতীত। আফ্রো-এশিয়া কাপ বন্ধ হয়ে যায় শুরু হওয়ার বছর দু’য়েক পরেই।  

মূলত রাজনৈতিক এবং সম্প্রচারগত জটিলতার কারণেই হারিয়ে গিয়েছিল আফ্রো-এশিয়া কাপ। ভারত-পাকিস্তানের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক বৈরিতাও ছিল বড় একটি কারণ। ২০০৫ এবং ২০০৭ সালে এই টুর্নামেন্টের দুটি আসর অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দুই মহাদেশের সেরার সেরাদের লড়াইয়ের রোমাঞ্চ ছিল তুঙ্গে। কিন্তু নানা জটিলতায় ২০০৭ সালের পর আর মাঠে গড়ায়নি এই টুর্নামেন্ট।

তবে আশার খবর হচ্ছে, ১৬ বছর পর আবারো শুরু হতে পারে আফ্রো-এশিয়া কাপ। এ বছরের মাঝামাঝিতে এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) হেড অব কমার্শিয়াল প্রভাকরণ থানরাজ ইংলিশ সাময়িকী ফোর্বসকে বলেছেন, ‘এখনও বোর্ডগুলোর আনুষ্ঠানিক সম্মতি পাইনি। তবে আশা করি এ বছরেই আমরা এ সিরিজটা আয়োজন করতে পারব। বোর্ডগুলো সম্মতি দিলে আমরা স্পন্সরশীপ ও সম্প্রচার সত্ত্ব নিয়ে বসবো। ভারত ও পাকিস্তান থেকেই বেশিরভাগ ক্রিকেটারদের একাদশে নেওয়া হবে। আশা করছি একটা ধামাকা আসতে যাচ্ছে।’

সব কিছু ঠিক থাকলে তাই বাবর আজম, বিরাট কোহলি, লিটন দাসদের একই একাদশে দেখার সুযোগ পাচ্ছে এশিয়ার ক্রিকেট সমর্থকরা। আফ্রো-এশিয়া কাপকে নিয়ে এশিয়ার একাদশ নিয়ে তাই এরই মধ্যে শুরু হয়েছে জল্পনা কল্পনা। 

এশিয়া একাদশে টপ অর্ডারের দায়িত্বে থাকতে পারেন বাবর আজম, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, মোহাম্মদ রিজওয়ান আর লিটন দাসরা। তবে ৫০ ওভারের ফরম্যাট হলে রিজওয়ানকে সরিয়ে লিটন দাসেরই একাদশে থাকার সম্ভাবনা বেশি। তাই এশিয়া একাদশে ব্যাটিং লাইন আপটা হতে পারে অনেকটা এমন। রোহিত শর্মা ও লিটন দাস ওপেনিংয়ে। এরপর তিনে বিরাট কোহলি। আর চারে বাবর আজম। 

এশিয়া একাদশে মিডল অর্ডার সামলাতে পারেন তিন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, হার্দিক পান্ডিয়া আর দাসুন শানাকা। পান্ডিয়া আর শানাকা দুজনই বল করতে পারেন। আর অলরাউন্ডার সাকিব তো একজন পুরোদস্তুর স্পিনারও। তাই সাকিবকে বাদ দিয়ে এশিয়ার একাদশ ভাবা যায় না বললেই চললে। তবে দাসুন শানাকার জায়গায় দলে থাকতে পারেন রবীন্দ্র জাদেজাও। এই মুহূর্তে ভারতীয় অলরাউন্ডার যেমন ফর্মে আছন, তাতে তাকে এশিয়ার একাদশে অগ্রাহ্য করা বেশ কঠিনই। 

এশিয়া একাদশের বোলিং ইউনিটে থাকতে পারেন দুই পেসার আর দুই স্পিনার। পেস ইউনিটে শাহিন শাহ আফ্রিদির সাথে যুক্ত হতে পারেন দারুণ ফর্মে থাকা তাসকিন আহমেদ। জাসপ্রিত বুমরাহ এই একাদশে অনায়াসেই সুযোগ পেতে পারতেন। তবে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এই সিরিজে বুমরাহকে না দেখার সম্ভাবনায় বেশি। 

স্পিন বোলিং ইউনিটে অটোমেটিক চয়েস রশিদ খান। আর তাঁর সাথে দলে থাকতে পারেন লঙ্কান স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। এ দুই স্পিনারই অবশ্য দলের প্রয়োজনে টুকটাক ব্যাটিংও করতে পারেন। তাই এশিয়ার এই দলটা দারুণ বোলিং আক্রমণের পাশাপাশি ব্যাটিং গভীরতাও থাকছে বেশ। তো, আসন্ন আফ্রো-এশিয়া কাপের জন্য এশিয়ার একাদশ হতে পারে অনেকটা এরকম – রোহিত শর্মা, লিটন দাস/মোহাম্মদ রিজওয়ান, বিরাট কোহলি, বাবর আজম, সাকিব আল হাসান, হার্দিক পান্ডিয়া, দাসুন শানাকা/রবীন্দ্র জাদেজা, রশিদ খান, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, শাহীন আফ্রিদি ও তাসকিন আহমেদ।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link