আকরাম-নান্নুদের হাত ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ করা সেই বাংলাদেশ বাশার-পাইলটদের সাথে ব্যাটন বদল করা সাকিব-তামিমদের হাত ধরে এখন বিশ্ব ক্রিকেটে মজবুত করে নিয়েছে নিজেদের অবস্থান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এ যাত্রায় বিগত দেড় যুগে সাকিব-মুশফিকদের মতো বিশ্বমানের ক্রিকেটারের যেমন দেখা মিলেছে
এখানে, আবার বেশ কিছু সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারকে ক্রিকেট থেকে দূরে সরে যেতেও দেখা গিয়েছে অসময়ে। তাঁদের মধ্যে কাগজে কলমে হয়তো এখনও টিকে আছেন অনেকে, কিন্তু বাস্তবতার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবারও তাঁদের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই বললেই চলে।
- রবিউল ইসলাম
টেস্ট ফরম্যাটে পেস বোলারদের সংকট নিয়ে যে হাপিত্যেশ দেখা গিয়েছিল টাইগার ভক্তদের মনে, রবিউলের আগমনে তা অনেকটাই দূর হয়ে যাচ্ছিল। অসময়েই ক্রিকেটকে বিদায় বলা এই পেসার আন্তর্জাতিক টেস্ট খেলেছেন মোটে নয়টি, তবে এ অল্প সময়েই জানান দিয়েছিলেন তাঁর সামর্থ্যের। সুইং আর লাইন-লেন্থের মিশ্রণে নজরকাড়া বোলিংয়ে এক আদর্শ পেসার হয়ে উঠছিলেন তিনি।
২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের মাটিতে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক টেস্ট সিরিজটি ড্র করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। সেবারই প্রথমবার জিম্বাবুয়ের মাটিতে তাঁদেরই বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ড্র করতে সক্ষম হয়েছিল টাইগাররা। তবে বিভিন্ন সময়ে কোচের পছন্দের তালিকায় না থাকা ও লম্বা সময় ধরে ইনজুরিজনিত সমস্যা থাকার কারণে নিজের ক্যারিয়ারকে লম্বা করতে পারেননি তিনি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রবিউলের টিকে থাকা হয়তো পেস আক্রমণ নিয়ে আশার আলো দেখাতে পারত টাইগার সমর্থকদের।
- জহুরুল ইসলাম
এ তালিকায় জহুরুলের নাম দেখে ভ্রু কুঁচকে যেতে পারে অনেকের, কারণ জাতীয় দলের দোরগোড়ায় যে কড়া নাড়ছেন এখনও! এই বছর দুই আগেও কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর কাছ থেকে নাগপুর টেস্টের জন্য দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সবুজ সংকেত পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ইনজুরি বাঁধ সাধে তাতে। শুধু এই সিরিজই নয়, পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই ইনজুরির ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাঁকে। একটা সময়ে ক্রিকেট ছাড়ার পরামর্শও এসেছিল চিকিৎসকদের কাছ থেকে। তবে নিজের ক্যারিয়ার লম্বা করতে না পারার পেছনে ইনজুরির পাশাপাশি নিজের ব্যর্থতাকেও স্বীকার করেন তিনি।
সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে না পারার আক্ষেপ এখনও পোড়ায় তাঁকে। এখনও পর্যন্ত ৭টি আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন তিনি, যেখানে তাঁর রানগড় প্রায় ২৭। আর ১৪ ওডিআইতে করেছেন ২৭০ রান। ঘরোয়া আসরে অবশ্য তাঁর পরিসংখ্যান বেশ সমৃদ্ধ। ১৩৯টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে তাঁর রানসংখ্যা চার হাজারের কাছাকাছি। প্রায় ৩৪ বছর বয়সী এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের জাতীয় দলে জায়গা না পাওয়ার পেছনে এখন বয়সও হয়ে দাঁড়িয়েছে আরেকটি বাধা।
- নাজমুল হোসেন
আক্ষেপের এ তালিকায় আরেক নাম নাজমুল হোসেন। ২০০৯ সালে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচটি যাঁদের মনে আছে, নাজমুল হোসেনকেও তাঁদের মনে থাকার কথা। মাত্র ১৫৩ রানের টার্গেটে খেলতে নামা লঙ্কানরা ছয় রানেই হারিয়ে ফেলেছিল পাঁচ উইকেট, যার মধ্যে তিনটিই ছিল নাজমুলের। আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন সর্বসাকুল্যে দুটি, যেখানে উইকেট শিকার করেছেন পাঁচটি।
সে তুলনায় ওয়ানডেতেই বেশি সফল ছিলেন তিনি। ৩৮ ম্যাচ খেলে প্রায় ৩২ গড় নিয়ে ৪৮ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। তবে পরিসংখ্যান দিয়ে হয়তো সবসময় যথাযথ বিচার করা যায় না, অন্তত তাঁর ক্ষেত্রে এ কথা বলাই যায়। ধুমকেতুর মতো আবির্ভাব হওয়া এই প্রতিভাবান পেসার অনেকটা আক্ষেপ নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছেন বছর দুয়েক আগে।
- নাঈম ইসলাম
অনূর্ধ্ব ১৯ দলে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন নাঈম ইসলাম। তবে সেভাবে আলো ছড়াতে পারেননি তিনি। যে কারণে সব ফরম্যাট মিলিয়ে মাত্র ৭৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে না পারলেও ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মারদের একজন তিনি।
১৪৬টি প্রথম শ্রেনীর ম্যাচে ৪২ গড়ে তাঁর রানসংখ্যা নয় হাজার ছুঁই ছুঁই। এসময়ে ২৭টি শতক ও ৩৯টি অর্ধশতকের পাশাপাশি নিজের ক্যারিয়ার সেরা ২১৬ রানের ইনিংসও খেলেছেন তিনি। লিস্ট এ ক্যারিয়ারেও চল্লিশোর্ধ্ব গড় নিয়ে ব্যাট করেছেন নাইম। জাতীয় দলের রাডারে ফিরে আসার খুব একটা সম্ভাবনা না থাকায় কোচিংয়ের দিকে মনোনিবেশ করতে যাচ্ছেন তিনি।
- তালহা জুবায়ের
২০০২ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা এই পেসার দলে এসেছিলেন অপার সম্ভাবনা নিয়ে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সে ম্যাচের মধ্য দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে অভিষিক্ত হন তিনি।
দলে তাঁর সমসাময়িকদের মধ্যে যে ক’জনকে মনে করা হতো ভবিষ্যতের কাণ্ডারি, তাঁদের একজন ছিলেন তালহা। পেস আক্রমণে মাশরাফির যোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠছিলেন তিনি। মাশরাফির মতো তাঁরও মূল অস্ত্র ছিল গতি আর সুইং। কিন্তু ক্যারিয়ার শুরু করতে না করতেই ইন্জুরীর কবলে পড়েন তিনি। যে কারণে মাত্র ৭টি টেস্ট ও ৬টি ওয়ানডে খেলেই ক্যারিয়ার শেষ করতে হয়েছে তাঁকে।
- শাহরিয়ার নাফিস
বাংলাদেশের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা পেসার তিনি। তবে, ২০০৭ বিশ্বকাপে হঠাৎ আসা অফ ফর্মেই ক্যারিয়ারটা প্রায় নষ্ট হয়ে যায় তাঁর। এরপর চলে যান ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ (আইসিএল) খেলতে। এরপর আবারও জাতীয় দলে ফিরেছিলেন। তবে, তখন আর তাঁর ব্যাটে আগের সেই জাদু ছিল না।
সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন ২০১৩ সালে। তখন তাঁর বয়স তখন মাত্র ২৮ বছর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি সব মিলিয়ে সাড়ে তিন হাজার রান করেন। সেখানে ছিল পাঁচটি সেঞ্চুরি ও ২০ টি হাফ সেঞ্চুরি। সর্বশেষ ২০২১ সালেই সব ধরণের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে বিসিবিতে কর্মরত আছেন।