স্টেপ আউট করে ছক্কা হাঁকালেন, বল চলে গেল স্টেডিয়ামের ছাদ পেরিয়ে মাঠের বাইরে। প্রিয়ানশ আরিয়া দেখালেন, নিজের পেশিশক্তি। কিন্তু শুধুই কি পেশিশক্তির বলে তিনি টিকে আছেন পাঞ্জাব কিংসের একাদশে? মোটেও না। বরং দৃঢ়তা আর সাবলীলতার জন্যেই তিনি দেদারছে রান তুলে যাচ্ছেন। তবে এই সাবলীল ইনিংসের শুরুতে তিনি ছিলেন স্নায়ুচাপের গ্যাস চেম্বারে।
পাঞ্জাব কিংসের টপ অর্ডার ভারতীয় খেলোয়াড়দের দ্বারা তৈরি। তাদের একাদশের ভারসাম্য বজায় রাখতেই দেশীয় খেলোয়াড়দের টপ অর্ডারকে পারফরম করতেই হতো। সেখানে অভিষেক মৌসুমে প্রিয়ানশ আরিয়ার উপর ছিল ওপেনিং পজিশন সামলানোর গুরুদায়িত্ব। সেই দায়িত্বে তিনি ফেল করতে পারতেন। কিন্তু একটা দলের পুরো প্রত্যাশার উপর দাঁড়িয়ে তিনি অবলীলায় বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করেছেন।
ফ্রি-ফ্লোয়িং ব্যাটার। অনর্থক কোন বাড়তি প্রচেষ্টা নেই। ব্যাটের সাথে বলের সংযোগ ঘটাতে পটু। বলের সাথে দ্বিগুণ গতিতেও রান তুলে পাঞ্জাবকে পুরো মৌসুম জুড়েই রেখেছেন নির্ভার। ৪১৭ রান করেছেন। দু’টো ফিফটি আর একটি সেঞ্চুরি এসেছে তার ব্যাট থেকে। তবে সেসব ছাপিয়ে তিনি প্রতি ম্যাচেই দলকে এনে দিয়েছেন প্রত্যাশিত ফ্লায়িং স্টার্ট।
প্রায় ১৯৫ স্ট্রাইকরেটে তিনি ব্যাটিং করে যাচ্ছেন ১২ ম্যাচ শেষেও। আগ্রাসনের এমন ধারাবাহিকতা বেশ বিরল। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষেও প্রায় ২০০ স্ট্রাইকরেটে ফিফটি তুলে নিয়েছেন। শেষ অবধি ৭০টি রান তুলে দিয়েছেন দলের স্কোরবোর্ডে। প্রায় প্রতি ম্যাচে তার এমন ব্যাটিং দলকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করে তুলছে। আর দলও ফুরফুরে মেজাজে জয়ের অন্বেষণে এখন অবধি সফলতার পথ ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে।
টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগেই মানসিক চাপ ছিল। সেই চাপকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন প্রিয়ানশ আরিয়া। এতেই বরং তার দৃঢ় মানসিকতা ফুটে ওঠে। তাছাড়া তিনি প্রতিপক্ষের মনোবলে আঘাত করতে জানেন। প্রতিপক্ষের সেরা বোলারকে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে ব্যাকফুটে ঠেলে দিতে জানেন। এই যেমন দিল্লির কুলদ্বীপকে রিভার্স সুইপ চার হাঁকানো কিংবা স্টেপ আউট করে ছক্কা মারা- এসব সেই মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের নিদর্শন।
নিজের উপর তার অগাধ আত্মবিশ্বাস। মানসিক দৃঢ়তা, আর মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে জেতার দক্ষতা- এসব কিছুর মিশেলে পাঞ্জাবকে তিনি দিচ্ছেন উড়ন্ত সূচনা। প্রাভসিমরান সিংকে সাথে নিয়ে তাই গড়তে পেরেছেন এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা ওপেনিং জুটি।
অভিষেক মৌসুমেই প্রিয়ানশ নিজেকে নিয়ে গেছেন ভিন্ন এক উচ্চতায়। ভরসার প্রতিদান দিয়ে হয়ে উঠেছেন আস্থার স্তম্ভ। ভারতের দারুণ প্রতিযোগিতার মঞ্চে নিজের একটা আলাদা জায়গাও তৈরি করে ফেলেছেন। স্রেফ ধারাবাহিকতাই তাকে বানিয়ে দিতে পারে সময়ের অন্যতম সেরা ওপেনার।