মিলান একাডেমির সেরা আবিস্কার

সাফল্য, ঐতিহ্য কিংবা নান্দনিকতা - যে দিক দিয়েই আপনি ইউরোপীয় ফুটবলের সবচেয়ে সেরা দলগুলোর কথা ভাববেন, এসি মিলানের নাম ভাবনাতে আসবেই। শিরোপা জয় অথবা শৈলী ফুটবল সবকিছু দিয়েই বিশ্বের ফুটবল ভক্তদের মুগ্ধ করে রেখেছে ইতালিয়ান ক্লাবটি। যুগে যুগে অনেক বিশ্বমানের তারকা লাল এবং কালো জার্সিটি গায়ে জড়িয়েছে।

সাফল্য, ঐতিহ্য কিংবা নান্দনিকতা – যে দিক দিয়েই আপনি ইউরোপীয় ফুটবলের সবচেয়ে সেরা দলগুলোর কথা ভাববেন, এসি মিলানের নাম ভাবনাতে আসবেই। শিরোপা জয় অথবা শৈলী ফুটবল সবকিছু দিয়েই বিশ্বের ফুটবল ভক্তদের মুগ্ধ করে রেখেছে ইতালিয়ান ক্লাবটি। যুগে যুগে অনেক বিশ্বমানের তারকা লাল এবং কালো জার্সিটি গায়ে জড়িয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, রোজোনেরিরা শুধু ঘরোয়া লিগে নয়, ইউরোপেও অন্যতম সফল ক্লাব। ১৪ টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা রিয়াল মাদ্রিদ একমাত্র ক্লাব যারা এই রুপালি ট্রফিটি এসি মিলানের চেয়ে বেশি জিতেছে। অবশ্য তাদের সাফল্য শুধুমাত্র বড় বড় সাইনিংয়ের উপর নয়। 

বরং সাফল্যের পিছনে একটি শক্তিশালী একাডেমি নেটওয়ার্ক তৈরির গুরুত্ব রয়েছে। আর এখন পর্যন্ত এই একাডেমির থেকে তৈরি হয়েছে ফ্রাঙ্কো বারেসি এবং পাওলো মালদিনির মত কিংবদন্তি সহ গত কয়েক বছরে ফুটবলে দাপিয়ে বেড়ানো কয়েকজন সুপার স্টার। এমন কয়েকজনকে নিয়ে এবারের আয়োজন। 

  • পাওলো মালদিনি

কথায় আছে, কিংবদন্তিরা পাওলো মালদিনির চেয়ে বড় হয় না। অর্থাৎ মালদিনি নিজেই কিংবদন্তির মানদণ্ড। নিজের ক্যারিয়ারে জাতীয় দল এবং এসি মিলান উভয় দলে তিনি ছিলেন ডিফেন্স লাইনের মুল ভিত্তি। তাঁর ডাকনাম ছিল এল ক্যাপিতানো (দ্য ক্যাপ্টেন)। মালদিনি তাঁর পেশাদার ক্যারিয়ারের ২৫ বছর এসি মিলানের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।

তিনি দলটির হয়ে মোট ৯০২টি ম্যাচ খেলেছেন, যা একটি ক্লাব রেকর্ড। এছাড়া জাতীয় দলের ক্যারিয়ারে তিনি ইতালির হয়ে ১২৬ বার মাঠে নেমেছেন। পাওলো মালদিনিকে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা লেফট-ব্যাক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আবার তিনিই একই সাথে ছিলেন একজন সলিড সেন্টার-ব্যাক।

ক্যারিয়ারের শেষের দিকে মালদিনিকে এই পজিশনে খেলতে দেখা গিয়েছে। তিনি মিলানকে মোট সাতটি সিরি এ শিরোপা এবং পাঁচটি ইউরোপিয়ান কাপ জিততে সাহায্য করেছেন। 

  • ফ্র্যাঙ্কো বারেসি

ফুটবল ইতিহাসের অন্যমত সেরা সেন্টারব্যাক ফ্র্যাঙ্কো বারেসি ছিলেন এসি মিলানের যুব একাডেমির ছাত্র। আশি, নব্বই দশকে ইউরোপে বেশ নামডাক ছিল তাঁর। সারাজীবন একটি ক্লাবেই খেলেছিলেন বারেসি।

মাত্র বারো বছর বয়সে মিলানের একাডেমিতে ভর্তি হয়েছিলেন বারেসি, পাঁচ বছর পরে জায়গা পান মূল দলে। এরপর দীর্ঘ দুই দশক ধরে ৭১৯ টি ম্যাচে ইতালিয়ান ক্লাবটির রক্ষণ সামলেছেন তিনি ল তার সময় কালে এসি মিলান ছয়টি সিরি এ, তিনটি সিরি বি এবং তিনটি ইউরোপিয়ান কাপ জিতেছে।

  • আলেসান্দ্রো কস্তাকুর্তা

মিলানের সর্বশ্রেষ্ঠ ডিফেন্ডারদের একজন, আলেসান্দ্রো কস্তাকুর্তা। ১৯৮৬ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর তিনি এসি মিলানের হয়ে খেলেছিলেন। মাউরো তাসোত্তি, ফ্র্যাঙ্কো বারেসি এবং পাওলো মালদিনির সাথে মিলে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা রক্ষণভাগ গড়ে তুলেছিলেন কস্তাকুর্তা।

পাওলো মালদিনির অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের জন্য বারেসির মত কস্তাকুর্তাকেও প্রায় লাইমলাইটের বাইরে থাকতে হতো। তারপরও তিনি ইতালি এবং মিলান দুই দলের জন্যই ছিলেন ভরসার জায়গা।

মিলান একাডেমিতে প্রায় সাত বছর কাটানোর পরে সিনিয়র দলের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছিলেন কস্তাকুর্তা। ট্যাকনিক্যালি তিনি ভার্সেটাইল ফুটবলার ছিলেন, ব্যাকলাইনে যে কোনও জায়গায় খেলতে পারতেন এই কঠোর পরিশ্রমী খেলোয়াড়। কস্তাকুর্তা সাতটি সিরি এ শিরোপা এবং পাঁচটি ইউরোপিয়ান কাপ জয়ে সামনে থেকে অবদান রেখেছিলেন।

  • দেমেত্রিও আলবের্তিনি

এসি মিলানে নিজের যুব ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় কাটানোর পর, ১৯৮৮/৮৯ মৌসুমে ১৭ বছর বয়সে দেমেত্রিও আলবের্তিনি মূল দলে জায়গা করে নেন। সবমিলিয়ে আলবের্তিনি সান সিরোতে ১৪ বছর কাটিয়েছেন। এইসময় তিনি পেয়েছিলেন দুর্দান্ত সাফল্য; হয়ে উঠেছিলেন তার সময়ের সেরা মিডফিল্ডারদের একজন।

মিলান অধ্যায় শেষে তিনি অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, ল্যাজিও, আটলান্টা এবং বার্সেলোনার মতো দলে যোগ দিয়েছিলেন। তবে এর আগে মিলানকে পাঁচটি সিরি এ শিরোপা এবং তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি জিততে সাহায্য করেছিলেন।

আলবের্তিনি ইতালি জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন, তাঁর দুর্দান্ত ক্যারিয়ারে দেশের হয়ে মোট ৭৯টি ম্যাচ খেলেছিলেন।  

  • জিয়ানলুইজি ডোন্নারুম্মা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসি মিলানের একাডেমি থেকে তৈরি হওয়া খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতি পেয়েছেন জিয়ানলুইজি ডোন্নারুম্মা। প্রতিভাবান এই গোলরক্ষক ২০১৩ সালে প্রথম রোজোনেরিদের একাডেমিতে যোগদান করেছিল। দুই বছর পরে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তাঁর সিনিয়র-টিমে অভিষেক হয়।

আর এর মধ্য দিয়ে তিনি ইতালীয় ফুটবলের ইতিহাসে দ্বিতীয় কনিষ্ঠ গোলরক্ষক হয়েছিলেন। আবার ১৭ বছর বয়সে ইতালি দলে খেলার সুযোগ পাওয়ায় ডোনারুমা জাতীয় দলের সর্বকনিষ্ঠ গোলরক্ষক হয়ে যান। 

ডোনারুমা মিলানের প্রথম দলে ছয় বছর কাটিয়েছেন এবং চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে ২০২১ সালে পিএসজি শিবিরে চলে যান। সর্বশেষ ইউরোতে ইতালির জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ডোন্নারুম্মা – টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত করা হয়েছিল তাঁকে। 

  • পিয়েরে-এমরিকে আউবামেয়াং

বরুশিয়া ডর্টমুন্ড আর আর্সেনালের হয় খেলে জনপ্রিয়তা পাওয়া পিয়েরে-এমরিকে আউবামেয়াং মূলত এসি মিলান একাডেমির ছাত্র। তবে তিনি কখনো দলটির মূল স্কোয়াডে জায়গা করে নেয়ার সুযোগ পাননি। আউবামেয়াং ২০০৭ সালে মিলানের যুব দলে যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু এরপর তাকে লিঁলে এবং মোনাকোতে লোনে পাঠানো হয়। শেষপর্যন্ত ২০১১ সালে সেন্ট এঁতিয়েনের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল এই গ্যাবন তারকাকে।

এই স্ট্রাইকার লিগ ওয়ানে নিজের প্রতিভার প্রমাণ দেন। ২০১৩ সালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড তাকে নিজেদের করে নেয়। পাঁচ বছর সেখানে খেলার আউবামেয়াং আর্সেনালে চলে যান এবং ২০১৮/১৯ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন। বর্তমানে এই ফুটবলার বার্সেলোনার হয়ে খেলেন।

এদের ছাড়াও সান্দ্রো সালভাডোর, ফ্রান্সেস্কো তোল্ডো, আলবেরিকো ইভানি, জিয়ানলুকা পেসোটো, ম্যানুয়েল লোকাতেলি, মাতেও ডারমিয়ান এর মত চমৎকার সব ফুটবলার তৈরিতে অবদান রেখেছে এসি মিলানের যুব একাডেমি। 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...