দলে বিশ্ব ক্রিকেটের বড় বড় নাম। তারপরও এবারের এশিয়া কাপে মোটাদাগে ব্যর্থ টিম ইন্ডিয়া। প্রথম পর্বে পাকিস্তানকে হারিয়ে উড়তে থাকা সুপার ফোরে এসেই দেখাল নিজেদের শোচনীয় অবস্থা। পাকিস্তানের পর শ্রীলঙ্কার সাথে হারের পর তাই উড়ন্ত ভারত এখন প্রায় নীড়ের পথে। অনেক ‘যদি’ ‘কিন্তু’র উপরে টিকে আছে ভারতের এশিয়া কাপ যাত্রা। তবে এশিয়া কাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের এমন অবস্থার কারণ কি? সেটিই খুঁজে দেখা যাক।
- ব্যাটিং অর্ডারে অতি মাত্রায় পরীক্ষা নিরীক্ষা
এশিয়া কাপ শুরু হওয়ার আগে ভারতের খেলা শেষ ১০ টি ম্যাচে একটু নজর দেওয়া যাক। এ সময়ে ভারত সিরিজ খেলেছে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তবে অবাক করা ব্যাপার হলো, এই ১০ ম্যাচে ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট ভিন্ন ভিন্ন ছয়টি ওপেনিং জুটিকে নিরীক্ষা করেছে। একদিন দিপক হুডা-ইশান কিষাণ ওপেনিংয়ে, তোর আরেকদিন রোহিত শর্মা-সুরিয়াকুমার যাদব ওপেনিংয়ে। অর্থাৎ, এশিয়া কাপে আসার আগে ভারত নির্দিষ্ট কোনো ব্যাটিং জুটিকেই কাজে লাগায়নি।
এর ফল ভোগ করতে হয়েছে এশিয়া কাপেও। প্রতি ম্যাচেই ব্যর্থ হয়েছে ভারতের উদ্বোধনী জুটি। এ ছাড়া যে দিপক হুডাকে এশিয়া কাপের আগে খেলানো হয়েছিল টপ অর্ডারে। এ পজিশনে খেলে তিনি একটি সেঞ্চুরিও পেয়েছিলেন। কিন্তু এশিয়া কাপে কোনো এক অজানা কারণে হুডাকে ফিনিশিং রোলে ব্যাট করানো হয়। যে জায়গাটার জন্য আবার দিনেশ কার্তিককে এতদিন ধরে প্রস্তুত করা হয়েছিল। অথচ সেই কার্তিক একাদশেই সুযোগ পান না।
আইপিএলের সফলতার জেরে দলের অটোমেটিক চয়েস ছিলেন লোকেশ রাহুল। কিন্তু এশিয়া কাপের আগে ভারতের হয়ে তিনি শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন প্রায় ১০ মাস আগে। এত লম্বা গ্যাপের কারণে হঠাৎ দলে এসে তিনি বরং ভারতের টপ অর্ডারে চাপই বাড়িয়েছেন ৷ তাঁর অ্যাঙ্কর রোলে ব্যাট করার কারণে বলা যেতে পারে টিম কম্বিনেশনই নষ্ট হয়েছে। সেটা চোখে পড়েছে ম্যাচেও। তিনে খেলা বিরাট কোহলিও রয়ে শয়ে খেলেন। আর আরেক ওপেনার রোহিত শর্মা শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগে বেশ কিছদিন ধরেই ছিলেন অফফর্মে। এজন্য ভারতের ব্যাটিং অর্ডারে প্রথম তিনটি পজিশনে বড় নাম থাকলেও প্রত্যাশিত ফল আসে নি।
এর চেয়ে বড় কথা টপ অর্ডারে ব্যর্থতার কারণে মিডল অর্ডারে পুষিয়ে দেওয়ার মতো যে ধরনের ব্যাটার লাগবে সেটির অনুপস্থিতিও ভারতের এ দলটায় মিলেছে। এক সুরিয়াকুমার বাদে অন্য কোনো ব্যাটারই চাপ সামাল দিতে পারেননি। হার্দিক পান্ডে প্রথম ম্যাচজয়ে অবদান রাখলেও পরে আর তাঁর সেই রূপ দেখাতে পারেননি। আর ঋষাভ পান্ত এই ফরম্যাটেই অফফর্মে রয়েছেন বেশ কিছুদিন ধরে।
মূলত টিম ম্যানেজমেন্টের অধিক পরীক্ষা নিরীক্ষার কারণেই ভারত দল হয়ে খেলতে পারেনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একক আধিপত্যে কিছু ম্যাচ জেতা যায়। কিন্তু একটা শিরোপা জিততে হলে খেলতে হয় টিম পারফরম্যান্স দিয়ে। এবারে ভারতের এই দলে সেটিরই দেখা মেলেনি।
- বোলিং দুর্বলতা
বুমরাহর না থাকা, এটা ভারতের জন্য বড় একটা ক্ষতি হয়েছে এবারের এশিয়া কাপে। এ ছাড়া জাদেজা ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়া ঐ চাপটা আরো বেড়েছে ভারতের জন্য। বোলিং অ্যাটাক বলতে আছেন শুধু ভুবনেশ্বর কুমার। আর স্পিন ডিপার্টমেন্টে রবি বিষ্ণয় কিছুটা চমক দেখালেও ব্যর্থ ছিলেন যুজবেন্দ্র চাহাল। সব মিলিয়ে বোলিং শক্তির দিক দিয়ে ভারত একটু পিছিয়েই ছিল। প্রতিপক্ষকে ভয় ধরানোর মতো ছিল না কোনো পেসার। একই সাথে দলে দু’জন লেগ স্পিনার থাকলেও সেই স্পিন প্রতিপক্ষের জন্য ত্রাস হওয়ার মতো ছিল না। এজন্য ভারত টানা দুই ম্যাচে ১৮০ এর বেশি রান স্কোরবোর্ডে জমা করলেও ডিফেন্ড করতে পারেনি।
ভারতের যেমন রিসোর্স আছে তাতে ২/৩ টা একাদশ তৈরি করা যায়, এমন কথা প্রায়শই শোনা যায়। কিন্তু সেই ২/৩ টা একাদশ তৈরির লক্ষ্যে অধিক পরীক্ষা নিরীক্ষায় যে ভারত তাদের প্রধান একাদশটার সমন্বয় করতে পারছে না তা এবারের এশিয়া কাপে স্পষ্ট হয়েছে। আর এ কারণেই তাদের ভরাডুবি হয়েছে। তবে এখান থেকে পরিত্রাণের উপায়টাও নিশ্চয় জানার কথা তাদের। ভারত তো আর ব্যর্থতায় আঁটকে থাকা কোনো দল না।
- বিচ্ছিন্ন দল
ভারতের ম্যানেজমেন্ট কিংবা ক্রিকেটাররাও বলেন, ভারতে যে পরিমান ফর্মে থাকা ক্রিকেটার আছেন – তাঁদের দিয়ে তিনটা আলাদা আলাদা দল বানানো সম্ভব। সেটা কোনো কথার কথাও নয়। রীতিমত একই সময়ে দু’টি ভিন্ন দেশে ভিন্ন দুই ফরম্যাটে ভিন্ন দু’টি ভারতীয় দল খেলার নজীর একাধিক আছে সাম্প্রতিক সময়ে। নিজের শক্তিমত্তা যাচাইয়ের এই পন্থা খারাপ না, তবে এর ফলে দলটাকে থিতু হতে দেওয়া হয় না। যার প্রভাব পড়ে মাঠে। আর এজন্যই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এশিয়া কাপেও ব্যর্থ ভারত। এবার কি অস্ট্রেলিয়ায় ভাগ্য সহায় হবে? – উত্তরের জন্য করতে হবে সময়ের অপেক্ষা।