মাদুর পেতে প্রতীকী অনশন! কতটা যুক্তিসঙ্গত?

তাতে বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মুশফিকের ফিরে আসার জন্য প্রতীকী অনশন।’ অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অবসরের ঘোষণা বাতিল করে মুশফিকের ফিরে আসার জন্য অনশন করছেন তাঁর একদল ভক্ত-সমর্থকরা। এক ভক্ত তো বলেই দিলেন, ‘মুশফিক বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপে মুশফিক ভাল খেলবে।’

পৃথিবীতে কতো অদ্ভুত ঘটনাই রচিত হয় ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের ঘিরে। ভক্তরা কতো কিছুই না করে তাঁর প্রিয় তারকার জন্য! জন্মদিনের কেক, উপহার পাঠানো থেকে শুরু করে প্রিয় তারকার ভালো- খারাপ সময়ে পাশে থাকার মতো কাজগুলো করে যায় এক্কেবারে অন্তরের অন্ত:স্থল থেকেই। এবার বোধহয় তেমনই ‘মজার’ এক ঘটনার সাক্ষী হলাম আমরা। মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অন্যরকম এক ঘটনাই ঘটলো। মাদুর পেতে স্টেডিয়াম গেটের সামনে বসা একদল যুবককে দেখা গেল। পেছনে ব্যানার টানানো।

তাতে বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মুশফিকের ফিরে আসার জন্য প্রতীকী অনশন।’ অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অবসরের ঘোষণা বাতিল করে মুশফিকের ফিরে আসার জন্য অনশন করছেন তাঁর একদল ভক্ত-সমর্থকরা। এক ভক্ত তো বলেই দিলেন, ‘মুশফিক বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপ মুশফিক ভাল খেলবে।’

গেল চার সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচটি তাঁর সর্বশেষ ম্যাচ ছিলো। বাংলাদেশের হয়ে মোট ১০২ টি ম্যাচ খেলেছেন মুশফিক এই ফরম্যাটে। প্রায় পনেরো বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। টেস্ট ও ওয়ানডে এই দুই ফরম্যাটে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সফল ব্যাটার হলেও, টি- টোয়েন্টি যে খুব একটা খাপ- খাওয়াতে পারতেন নিজেকে তা দাবি করা যাবে না। পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায় এই ফরম্যাটে ১০০ এর বেশি ম্যাচ খেলে অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন মাত্র ছয় বার।

তাঁর সর্বোচ্চ ইনিংসটি ৭২ রানের। আর ১৯.৪৮ গড়ে সর্বসাকুল্যে করেছেন ১৫০০ রান। এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মুশফিকের ঝুলিতে আদতে অভিজ্ঞতার ফাঁকা বুলি ছাড়া আর তেমন বলার মতো অর্জন নেই আদতে। টিটোয়েন্টির মেজাজটা যে তিনি একেবারেই ধরতে পারছেন না, সেটা একটু দেরীতে হলেও শেষমেশ বুঝেছিলেন মুশফিকুর রহিম। বোধোদয় শেষেই টি- টোয়েন্টি ফরম্যাটকে বিদায় জানানোর মতো সিদ্ধান্ত নিলেন। মুশফিকের এই সিদ্ধান্তকে বেশিরভাগ ক্রিকেটভক্তই সাধুবাদ জানিয়েছিলেন।

কিন্তু ভক্ত মানে না কোন যুক্তি। মানে না কোন পরিসংখ্যান। বলা যায় সেই অবস্থা এখন অনশনরত গুটিকয়েক মুশফিক ভক্তের। হয়ত প্রিয় খেলোয়াড়ের বিদায় মেনে নিতে পারছেন না কিছুতেই। তাই ধার ধারছেন না কোন যুক্তি- তর্কের। কিংবা ভাবছেন তাদের ভালোবাসার প্রতিদানস্বরূপ মুশফিক প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নিবেন। প্রিয় তারকার উপস্থিতিই একটি দলের জন্য সবশেষ কথা নয়। পারফরমেন্স অনেক বড় ফ্যাক্টর। মুশফিক অবশ্যই বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক বড় তারকা।

কিন্তু, এটাও ঠিক ততটাই সত্য যে ওয়ানডে আর টেস্টের তুলনায় টি- টোয়েন্টিতে তিনি বেশ মলিন। তাছাড়া মুশফিক সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেই ভাবছেন বেশিরভাগ মানুষ। আমরা চাইলেই আজীবন ‘পঞ্চপাণ্ডব’দের জোর করে ধরে রাখতে পারবো না। যেমনি ‘নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়’, ঠিক তেমনি ক্রিকেটারদেরও একদিন চিরপরিচিত জার্সিকে বিদায় জানাতে হয়। তা আমরা ভক্ত সমর্থকরা সহজভাবে নেই বা না নেই। অন্তৎ তাদের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানানো উচিত।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...