শুক্রবার দিন আপনি হয়তো একটু বেলা অবধি ঘুমিয়ে উঠেছেন। হঠাতই মনে পড়লো আজ তো বাংলাদেশের খেলা। টিভি চালিয়ে স্কোরবোর্ডের দিকে তাকাতেই হতাশ হয়ে পড়লেন। ছুটির দিন সকালে মনটাও খারাপ হলো একটু। তবে আপনার জন্য এক চিলতে হাসি নিয়ে অপেক্ষা করছিল চট্টগ্রামের একটা ছেলে, বাংলাদেশের একটা ছেলে। নাম তাঁর ইয়াসির আলি রাব্বি।
আগেকার দিনের কথা মনে পড়ে যায়। বাংলাদেশ ম্যাচ হারবে সেটাই স্বাভাবিক ঘটনা। তবুও বাংলাদেশের মানুষ খেলা দেখতো কারো একটা ইনিংস দেখার জন্য। কোনদিন আশরাফুল, কোনদিন আবার আফতাব আহমেদ। সেই দিন থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে এসেছে। এখন বাংলাদেশ জয়ের জন্যই মাঠে নামে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স সেই আগেরদিনের মতই। বাংলাদেশ ম্যাচ হারবে সেটাই যেন স্বাভাবিক। তবুও ইয়াসির আলি রাব্বিরা একটু মনের খোরাক জোগায়। ছুটির দিন সকালে উঠেও যারা টিভি সেটের সামনে বসেছেন তাঁদের একটা কিছু উপহার দেন।
ইয়াসির আলি রাব্বি বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই ছেলেটে নিজেকে প্রমাণ করছে। ধীরে ধীরে জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন হয়ে উঠছেন। রাব্বি যে বাংলাদেশের বড় সম্পদ সেটা কেউ অস্বীকার করবেনা। তবুও তাঁকে নিয়ে যেন আমাদের বড্ড অনীহা।
বিভিন্ন ফরম্যাটেই দিনের পর দিন বেঞ্চে বসে কাটিয়েছে। ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন দুই একটা। আবার পারফর্ম করলেও আবার দলে নিজের জায়গা হারিয়েছেন অন্য কাউকে জায়গা করে দিতে গিয়ে। এইবার আবার একটু পুরনো কথাই বলতে হয়।
যে কেউ একবাক্যে স্বীকার করবে মিডল অর্ডারে বাংলাদেশের ভরসা হয়ে উঠতে পারেন রাব্বি। তবে এই মিডল অর্ডারেই তাঁকে খেলানো হয়নি সিনিয়র ক্রিকেটারদের জায়গা করে দিতে গিয়ে। মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের জন্য রাব্বির মত প্রতিভাকে বিসর্জন দিয়েছি আমরা। সেজন্যই রাব্বি এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন।
অথচ সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায় তাঁকে ব্যবহার করলে তিনি এতদিনে দলের দায়িত্ব নিতে পারতেন। অন্তত গত একবছরেও তাঁকে মিডল অর্ডারে নিয়মিত খেলালে এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি মিডল অর্ডারটা সামাল দিতে পারতেন আরো অনেক বেশি অভিজ্ঞ হয়ে।
সেই সৌভাগ্য রাব্বিদের হয়না। তবুও সুযোগ পেলেই নিজেকে প্রমাণের চেষ্টাটা চালিয়ে যান। আজও যেমন দুইশো স্ট্রাইকরেটে খেলা তাঁর ইনিংসটা চোখে লেগে থাকবে অনেকদিন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে, নিউজিল্যান্ডের উইকেটে কীভাবে ব্যাটিং করতে হয় সেটাও বুঝিয়ে দিলেন।
রাব্বি যখন নেমেছে তখন ৯৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ ইতোমধ্যেই হাতের বাইরে। তবুও একপ্রান্ত থেকে বোলারদের নিয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। অন্তত দলকে একটা সম্মানজনক স্কোর এনে দিতে পেরেছেন। এছাড়া ইনজুরি থেকে ফিরেও যে নিজের ব্যাটের ধারটা কমেনি সেটাও প্রমাণ করলেন রাব্বি।
একমাত্র রাব্বির কাছ থেকেই যথার্থ টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংটা দেখা গিয়েছে। মাত্র ২১ বলে করেছেন ৪২ রান। ইনিংসটি সাজিয়েছেন পাঁচটি চার ও দুটি ছয় দিয়ে। তাঁর ইনিংসটাই প্রমাণ করে এই উইকেটে ১৬৮ রান খুব বড় কোন টার্গেট ছিল না। উপরের দিকের ব্যাটাররা একটু দায়িত্ব নিয়ে খেললেই ম্যাচ জিততে পারতো বাংলাদেশ।
ব্যাটসম্যানদের এমন ব্যর্থতার দিনেও রাব্বির কল্যানে বাংলাদেশের স্কোর দাড়িয়েছে ১৪৬। শেষ দুই বলে তাঁর দুই বাউন্ডারির পর বাংলাদেশ ম্যাচ হেরেছে ২১ রানে। রাব্বির এই ইনিংস যেন আক্ষেপ আরো বাড়িয়েছে। টপ অর্ডারে অন্তত একজন বড় ইনিংস খেলতে পারলেও সিরিজটা জয় দিয়ে শুরু করতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু রাব্বিদের উপর যে বড্ড দেরিতে ভরসা করা হয়।