বাংলাদেশ ‘এ’ দল যেন বৃদ্ধাশ্রম

বাংলাদেশে ‘এ’ দল ব্যাপারটার সংজ্ঞাই যেন ভিন্ন। শুধু নাম রক্ষার্থে একটা দল চালানো যেন। উদাসীনতা আছে ক্রিকেট কাঠামোর সর্বস্তর থেকেই। যেন বাংলাদেশ ‘এ’ দল তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছুই না। এই দলটার হয়ে খেলা যেন অনেক ক্রিকেটারের জন্য অসম্মানের। বাংলাদেশে আদৌতে নিজেকে প্রমাণ করার সংস্কৃতিটাই গড়ে উঠেনি। সব কাজ নামেই হওয়া চাই। ফলে বাংলাদেশ 'এ' দল হয়ে উঠেছে এক অপমানের জায়গা। 

একজন ক্রিকেটারের জন্য জাতীয় দলে প্রবেশ করার শেষ ধাপ হলো ‘এ’ দল। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া কিংবা তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে একটা দেশের দ্বিতীয় সেরা স্কোয়াড। যেখানে পুরনো, নতুন সব ক্রিকেটারই নিজেদের প্রমাণের জন্য মুখিয়ে থাকবেন। পারফর্ম করে নিজেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জন্য প্রস্তুত রাখবে।

তবে বাংলাদেশে ‘এ’ দল ব্যাপারটার সংজ্ঞাই যেন ভিন্ন। শুধু নাম রক্ষার্থে একটা দল চালানো যেন। উদাসীনতা আছে ক্রিকেট কাঠামোর সর্বস্তর থেকেই। যেন বাংলাদেশ ‘এ’ দল তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছুই না। এই দলটার হয়ে খেলা যেন অনেক ক্রিকেটারের জন্য অসম্মানের। বাংলাদেশে আদৌতে নিজেকে প্রমাণ করার সংস্কৃতিটাই গড়ে উঠেনি। সব কাজ নামেই হওয়া চাই। ফলে বাংলাদেশ ‘এ’ দল হয়ে উঠেছে এক অপমানের জায়গা।

দায়টা শুধু ক্রিকেটারদের উপর চাপিয়ে দেয়া যায়না। সারা বছর যে ‘এ’ দল নিয়ে ক্রিকেট বোর্ড খুব সচেতন থাকে এমনটাও না। শুধু কোন ছোটখাটো দলের সাথে সিরিজ আয়োজন করতে পারলেই দেখা যায় কয়েকদিনের অনুশীলন।

এই যেমন মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে একটু সকাল সকাল গেলেই দৃশ্যটা চোখে পড়ে ইদানিং। বেশ বড় একটা দল কোচ মিজানুর রহমান বাবুলের অধীনে অনুশীলন করছে। এরমধ্যে কেউ কেউ বাংলাদেশ টাইফার্সের জার্সি পরা। কেউ আবার এসেছেন হাই পারফর্মেন্স ইউনিট থেকে। এই দুইটি দলই মূলত দেশের ক্রিকেটের পাইপলাইন। সেজন্যই কোন সিরিজ আয়োজন করা হলে এই দুই জায়গা থেকেই মিলিয়ে মিশিয়ে গঠন করা হয় ‘এ’ দল।

তেমনই একটি সিরিজ অপেক্ষা করেছে দলটার সামনে। অক্টোবরের নয় তারিখ ভারতে দুটি চারদিনের ম্যাচ ও তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে দেশ ছড়াবেন মুমিনুলরা। ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে মূলত তামিলনাড়ুর বিপক্ষে।

ভারতে ‘এ’ দলের এই সফরে যাবার কথা বাংলাদেশের কয়েকজন বড় ক্রিকেটারেরও। টেস্ট অধিনায়কত্ব হারানোর পর দলেও নিজের জায়গা হারিয়েছেন মুমিনুল হক সৌরভ। ফলে নিজেকে প্রমাণের একটা মঞ্চ খুজছিলেন তিনি। সেই সুযোগটা তিনি পাচ্ছেন ‘এ’ দলের এই সফরের মাধ্যমে।

এছাড়া টেস্টের নিয়মিত ওপেনার ও ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালেরও যাওয়ার কথা ছিল এই সফরে। কেননা লম্বা সময় ধরেই টেস্ট ম্যাচ খেলছেনা বাংলাদেশ। এছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কারণে ওয়ানডে ম্যাচও খেলা হচ্ছেনা। ফলে তামিম ইকবাল অনেকদিন ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন না।

ফলে মাঝের এই সময়টা তিনি কাজে লাগাতে পারতেন ‘এ’ দলের হয়ে ভার‍ত সফরে গিয়ে। দলের বাকি সদস্য এবং তামিম ইকবালের নিজের জন্যও যা ফলপ্রসূ হতে পারতো। তবে শেষ পর্যন্ত তামিম বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে খেলছেন না। বরং দেশে জাতীয় ক্রিকেট লিগ খেলাকেই বেঁছে নিয়েছেন তিনি।

ওদিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও টেস্ট ক্রিকেট ছেড়েছেন অনেকদিন হলো। অফফর্মের কারণে টি-টোয়েন্টি দলেও নিজের জায়গা হারিয়েছেন। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটটা এখনো খেলছেন তিনি। সেজন্য তাঁকেও প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল ‘এ’ দলের হয়ে খেলার। তিনি খুব সম্ভবত ব্যাপারটা ভালো করে নেননি।

যদিও ওয়ানডে ফরম্যাটেও তাঁর ব্যাট খুব একটা হাসছেনা। ফলে এই ফরম্যাটেও খুব বেশিদিন জায়গাটা পাকা ভাবার কারণ নেই। নিজের জায়গাটা ধরে রাখার জন্য সেরা প্রস্তুতিটাই প্রয়োজন ছিল রিয়াদের। ফলে ‘এ’ দলের সফরে যেতে রাজি না হবার ব্যাপারটা একটু বিস্ময়করই। এমনকি এবার জাতীয় ক্রিকেট লিগেও খেলছেন না তিনি। ফলে ক্রিকেট থেকে মোটামুটি একটা বিরতিই নিয়ে নিলেন রিয়াদ।

একইচিত্র আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের বেলায়। কথিত আছে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে সেটা নাকি হাতছাড়া করেননা মুশফিকুর রহিম। তবে  ম্যাচটা ‘এ’ দলের হয়ে খেলতে হলে বোধহয় অবস্থানটা এক থাকেনা মুশফিকের। কেননা তিনিও ‘এ’ দলের হয়ে না খেলে জাতীয় লিগের ম্যাচ খেলতেই বেশি ইচ্ছুক।

আরো অবাক করা বিষয় ঘটলো রাসেল ডোমিঙ্গোকে নিয়ে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন এই কোচ। ফলে এই সময়টায় ‘এ’ দলের সাথে থাকার কথা ছিল তাঁর। অথচ তারও নাকি এবার পড়ে গেল ব্যক্তিগত কাজ। যদিও ‘এ’ দলের সফরসঙ্গী হতে ভীষণ আগ্রহী হতে দেখা গিয়েছিল এই প্রোটিয়া কোচকে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি দুবাই যাব। এ দলের সফরে তামিম-মমিনুলের মতো বেশ কয়েকজন টেস্ট ক্রিকেটারও থাকবে, যারা বেশ কিছুদিন ধরেই ম্যাচ খেলছে না। এই সফরটি ওদের নিয়ে কাজ করার দারুণ সুযোগই করে দেবে।’

সব মিলিয়ে তামিম, মুশফিক, রিয়াদ কিংবা কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো সবার মধ্যেই যেন একটা উদাসীনতা। অথচ ফাঁকা এই সময়টায় ‘এ’ দলের হয়ে খেলার জন্য মুখিয়ে থাকতো যেকোন দেশের ক্রিকেটাররাই। অথচ বাংলাদেশ ‘এ’ দল যতটা না প্রমাণের কিংবা ঝালাই করে নেয়ার মঞ্চ তারচেয়ে অনেক বেশি যেন লজ্জার এক স্থান।

এত কিছুর পরও বাংলাদেশের ‘এ’ দলে তেমন কোনো তারুণ্য নেই। ১৪ জনের দলে টেস্ট অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নয় জন আছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত এবারও অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন। তিনিও বেশ সিনিয়র। ফলে, ‘এ’ দলকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা না বলে বৃদ্ধাশ্রমও বলা যায়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...