একটি বাউন্ডারি, তিনটি বছর, একজন কানিতকার

কারণ ৩ বছরের ছোট্ট ক্যারিয়ারে মনে রাখার মতো বেশি কিছুই দিতে পারেননি তিনি। নব্বই দশকের শেষ দিকে সম্ভাবনা দেখিয়েই এসেছিলেন জাতীয় দলে। মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ছিলেন একজন অফস্পিনারও।

১৮ জানুয়ারি, ১৯৯৮। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপের ফাইনালে ভারত-পাকিস্তানের ফাইনালে তখন টান টান উত্তেজনা। ভারতের ডাগ আউটে শচীন-সৌরভদের কপালে চিন্তার রেখা। শেষ দুই বলে প্রয়োজন তিন রান। গ্যালারি ভর্তি দশকদের চাপা উৎকণ্ঠা।

স্ট্রাইকে তরুণ হৃষিকেশ কানিতকার, বল হাতে সাকলাইন মুশতাক। লেগ স্টাম্পের উপর বল করলেন সাকলাইন! মিড উইকেটের উপর দিয়ে বাউন্ডারি মেরে শ্বাসরুদ্ধকর এক জয় তুলে নেয় ভারত। তিন উইকেটের দুর্দান্ত জয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে শিরোপা জয় করে ভারত। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে তখন উন্মত্ত-উৎফুল্ল দর্শক। সেসময় এটি ছিল রান তাড়া করার রেকর্ড! হৃষিকেশের বাউন্ডারিতে ৪৮ ওভারে ৩১৫ রান তাড়া করে রেকর্ড গড়ে জয় পায় ভারত।

কানিতকারের ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত ছিল নি:সন্দেহে। কারণ ৩ বছরের ছোট্ট ক্যারিয়ারে মনে রাখার মতো বেশি কিছুই দিতে পারেননি তিনি। নব্বই দশকের শেষ দিকে সম্ভাবনা দেখিয়েই এসেছিলেন জাতীয় দলে। মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ছিলেন একজন অফস্পিনারও। সাথে তাঁর দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের জন্য বিশেষভাবে নজর কেড়েছিলেন। অলরাউন্ডার হিসেবে লম্বা সময় টিকে থাকার সম্ভাবনাও ছিলো কিন্তু জাতীয় দলের জার্সি গায়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি।

কানিতকার স্পোর্টস ফ্যামিলি থেকেই উঠে আসেন। বাবা হিমান্ত কানিতকার মহারাষ্ট্র এবং ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন। তাঁর ভাই আদিত্য ছিলেন একজন গলফ প্লেয়ার। কাকতালীয়ভাবে হৃষিকেশের মতো তার বাবা হিমান্ত ভারতের হয়ে মাত্র দুই টেস্ট খেলেছেন! ক্রিকেটে বাবা-ছেলের জুটিতে একই পরিমাণ টেস্ট খেলার এক নজিরবিহীন ঘটনাও এটি!

১৯৯৪ সালে বোম্বের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় কানিতকারের। ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খেলেন ৪৪ রানের ইনিংস, বল হাতেও শিকার করেন ১ উইকেট। ঘরোয়া ক্রিকেটে শুরু থেকেই ছিলেন দুর্দান্ত। বোলিং, ব্যাটিং এবং ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ছিলেন দাপুটে।

ভারত এ দলের হয়ে তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলছিলেন কানিতকার। হুট করেই জাতীয় দলের অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য অজয় জাদেজার ইনজুরিতে ভাগ্য খুলে যায় তার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই টেস্টের জন্য পেয়ে যান সু্যোগ। এরপর ১৯৯৭ এর ডিসেম্বরে জাতীয় দলে যাত্রা শুরু করেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক হলেও বাজে পারফরম্যান্সে দুই টেস্টেই শেষ হয় লাল বলের ক্যারিয়ার।

তিন বছরের ছোট্ট ক্যারিয়ারে ৬ টেস্ট ও ৩৪ ওয়ানডে খেলেন তিনি। টেস্টে ১৮.৫০ গড়ে ৭৪ ও ওয়ানডেতে ১৭.৮৪ গড়ে ৩৩৯ রান করেন তিনি। বল হাতে ওয়ানডেতে ১৭ উইকেটও নিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। ঘরোয়া ক্রিকেটে মহারাষ্ট্রের হয়ে প্রায় ১৪ মৌসুম খেলার পর মধ্যপ্রদেশের হয়ে নাম লেখান তিনি। পরবর্তীতে তার নেতৃত্বে পর পর দুইবার রঞ্জি ট্রফির শিরোপা জেতে রাজস্থান। ঘরোয়া ক্রিকেটের বড় তারকা ছিলেন তিনি।

ঘরোয়া ক্রিকেটে ৫২ গড়ে ১৪৬ ম্যাচে করেছেন ১০ হাজারের বেশি রান। জাতীয় দলে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারলেও ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবদন্তি হিসেবে শেষ করেছেন ক্রিকেট ক্যারিয়ার। রঞ্জি ট্রফিতে ১০৫ ম্যাচে করেছেন ৮০৫৯ রান! অবসরের পর ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচিং করান। এছাড়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) নবম আসরে রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টসের হয়ে ফিল্ডিং কোচের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

অবসরের পর অবশ্য ইচ্ছে ছিলো ধারাভাষ্যকার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়বেন। এক সাক্ষাৎকারে কানিতকার বলেছিলেন, ‘আমি ক্রিকেট অ্যনালাইস করতে পছন্দ করি। আমি সুযোগ পেলে ধারাভাষ্যে কাজ করব।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...