১৯৯৮ সালের ঘটনা, ঢাকা লিগে মুখোমুখি আবাহনী ও মোহামেডান। তখন আবাহনী বনাম মোহামেডানের ম্যাচ মানে টানটান উত্তেজনা। সেই ম্যাচটি আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে ভিন্ন একটি কারণে। কারণটি হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটার রমন লাম্বার মৃত্যু।
সেদিন ম্যাচের শেষের দিকে আবাহনীর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট রমন লাম্বাকে ফরোয়ার্ড শট লেগে ফিল্ডিংয়ে নিয়ে আসেন। অধিনায়ক তাঁকে হেলমেট পরতে বললেও, তিন বলের খেলা বলে তা উড়িয়ে দেন লম্বা। লম্বার পরনে সেদিন না ছিল হেলমেট, না ছিল গার্ড।
কেন সেদিন এমনটা করেছিলেন ভারতীয় এই ক্রিকেটার, তা অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে।
সেদিন রমন লাম্বার এই পাগলামি দেখে অবাক হয়েছিলেন মোহামেডানের ব্যাটসম্যান পারভেজ আহমেদ। মেহরাব হোসাইন অপির সাথে সেদিন উইকেটে ছিলেন তিনি। শর্ট লেগে ব্যাটসম্যানের এতো কাছে গিয়ে কোনো সুস্থ মানুষ দাঁড়াবে না বলে মনে করেন সিলেটের এই ক্রিকেটার। ব্যাটসম্যান খেলতে গেলে ব্যাট তার শরীরে লেগে যাওয়া সম্ভবনা ছিল অনায়সে। সেদিন কেন এমন কাজ করতে গিয়েছিলেন এই প্রশ্নের উত্তর খুজে পান না পারভেজ আহমেদ, সেদিন মৃত্যুই তাকে এতো কাছে নিয়ে এসেছিল বলে মনে করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে পারভেজ আহমেদ বলেন, ‘আমি অবাক হয়েছিলাম রমন লাম্বার মত একজন ক্রিকেটার এতো কাছে গিয়ে ফিল্ডিংয়ে দাড়াতে দেখে, অন সাইডে শট খেলতে গেলে ব্যাট তার শরীরে আঘাত হানত। আসলে সেদিন মৃত্যু তাকে এতো কাছে টেনে নিয়ে এসেছিল, নতুবা কোনো সুস্থ মানুষ এভাবে ফিল্ডিংয়ে দাঁড়াত না।’
সেদিন শর্ট বলে মেহরাব হোসেন অপি পুল করলে বলটি খুব কাছে দাঁড়িয়ে থাকা রমন লাম্বার মাথায় লাগে। ১০ গজ দূরে খালেদ মাসুদ পাইলট সেই বলটি ধরেন। বলটি কতটুকু জোরে মাথায় আঘাত হানার পর ১০ গজ দূরে যায় তা এ থেকে অনুমান করা যায়। মেহরাব হোসেন অপি আউট হন, ম্যাচও জিতে আবাহনী। কিন্তু আর ফিরে আসেননি রমন লাম্বা। তিন দিন অচেতন থাকার পর তিনি হাসপাতালে মারা যান।
সেদিন ম্যাচের শুরু থেকেই খুব বেশি এগ্রেসিভ ছিলেন রমন লাম্বা, ফিল্ডিংয়ে মাঠে তিনি প্রচুর স্লেজিং করে যাচ্ছিলেন। তখন ক্রিজে ছিলেন পারভেজ আহমেদ। রমন লাম্বা সেদিন খুব কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, ব্যাটসম্যান ব্যাট চালাতে গেলে তার শরীরে লাগাবে, এমনি ছিল অবস্থা। এমন জায়গায় দাঁড়িয়েও স্লেজিং করছিলেন রমন লাম্বা। তা শুনে যে কেউ উত্তেজিত হয়ে কিছু একটা করতে পারে।
পারভেজ আহমেদ বলছিলেন, ‘আমি তখন ক্রিজে ছিলাম, রমন লাম্বা আমাকে এসে বলছে, ‘এ্যা বাচ্চা ক্যায়া মারেগা, উসকতো ব্যাটিং করনোকা নেহি আতা।’ তিনি এভাবে স্লেজিং করে যাচ্ছিলেন, তারপরে হেলমেট ছিল না পরনে, গার্ডও ছিল না। একজন টেস্ট খেলোয়াড় কিভাবে এতো কাছে এসে ফিল্ডিং করেন আমি বুঝতে পারি না।’
মাঠে মাথায় আঘাত পাওয়ার পর ড্রেসিং রুমে এসে বমি করেছিলেন রমন লাম্বা। মাথা আঘাত পাওয়ার পর বমি হলে বেচে থাকার সম্ভাবনা খুব কম। আসলে সেদিন মৃত্যুই থাকে এতো কাছে নিয়ে এসেছিল বলে মনে করেন পারভেজ আহমেদ।
পারভেজ আহমেদ ক্রিকেট জীবনে দু’টি মৃত্যু ঘটনা দেখেছেন খুব কাছ থেকে। একজন রমন লাম্বা, আরেকজন কোচ দৌলতুজ্জামান। কোচ দৌলতুজ্জামান মাঠে স্টোক করেন, হাসপাতাল যাওয়ার পথে গাড়িতে মারা যান। এই দুই দুর্ঘটনা এখনো মনে পড়ে, মাঝে মাঝে তাঁর অন্তরকেও নাড়া দেয়। তিনি যে এমন দুর্ঘটনা থেকে বেচে আছেন, সেজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন, ‘এই ঘটনাগুলো আমার মনে পড়ে অনেক সময়, নিজে যে এখনো বেচে আছি সেজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি সব সময়।’