বাংলাদেশকে স্পিন খনি বললে খুব একটা ভুল বলা হয় না নিশ্চয়ই। ওয়াহিদুল গনি থেকে শুরু করে ক্রমে ক্রমে মোহাম্মদ রফিক, আবদুর রাজ্জাক, সাকিব আল হাসানরা নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলিং ইউনিটের।
তাদের সাথে কালেভদ্রে যুক্ত হয়েছেন সোহাগ গাজী, আরাফাত সানি, এনামুল হক জুনিয়র সহ আরও বহু স্পিনার। এতসব নাম নিশ্চয়ই খনি থেকেই উঠে আসা সম্ভব।
তবে সব সম্পদই হারিয়ে যেতে পারে। যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর নজিরও রয়েছে প্রচুর। কারণটাও বেশ স্পষ্ট, সঠিক পরিচর্যা করা হয়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার তাড়নার অভাব। ঘরোয়া ক্রিকেটের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে দাপট দেখানোর মত শৈলী না থাকা।
সেই বিষয়গুলোই হয়ত অনুধাবন করতে পেরেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। তাইতো তিনি জাতীয় দল ও এর আশেপাশে থাকা স্পিনারদের নিয়ে আয়োজন করেছেন দুইদিনের ভেরিয়েশন ক্যাম্প। তেমনটিই জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের টিম ম্যানেজার নাফিস ইকবাল।
তিনি এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘পাইপলাইনের যে স্পিনাররা আছে তাদের সাথে ন্যাশনাল টিমের স্পিনারদের নিয়ে হবে স্পিন ভেরিয়েশন ক্যাম্প। আমরা জানি যে একটা ক্যাম্প হবে। সে জন্যে যা যা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
২৯ মে শুরু হয়েছে এই অনুশীলন ক্যাম্প। মূলত জাতীয় দলের রাডারে থাকা স্পিনারদের স্কিল উন্নয়নের প্রচেষ্টাই চালাবেন হেরাথ। সে লক্ষ্যেই হাই পারফরমেন্স দলের থাকা চার স্পিনারকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে হেরাথের এই বিশেষ ক্যাম্পে।
মিরপুর একাডেমি মাঠে স্পিনারদের নিয়ে অনুশীলনে ভীষণ ব্যস্ত থাকতেই দেখা গেছে সাবেক এই বা-হাতি স্পিনারকে। প্রতিটা খেলোয়াড়ের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়েছেন। ভেরিয়েশন রপ্ত করতেও দিয়েছেন টোটকা। নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি উপুড় করে দেশের স্পিনারদের বিলিয়ে দিচ্ছেন লঙ্কান এই কোচ। বাংলাদেশের স্পিনারদের নিজেদের মাঠের সর্বোচ্চ ফায়দা তুলে নেওয়ার পথই যেন বাতলে দিচ্ছিলেন হেরাথ।
পুরো ক্রিকেট বিশ্বের লেগ স্পিনারদের বেশ একটা দাপট চলছে বর্তমান সময়ে। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম জাম্পা তো রীতিমত ওয়ানডে সুপার লিগের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার। অন্যদিকে আফগানিস্তানের রশিদ খান, নুর আহমেদরা মিলে যেকোন শক্ত প্রতিপক্ষের ব্যাটিং ইউনিট নিমিষেই গুড়িয়ে দিতে সক্ষম।
তাছাড়া বাকি দেশগুলোতেও বেশ কার্য্যকর লেগ স্পিনারদের আবিভার্ব ঘটতে শুরু করেছে। সেদিক থেকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। তাইতো দেশের ফিঙ্গার স্পিনারদের বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় প্রয়োজন হবে বিচিত্র সব স্পিন কৌশলের। রঙ্গনা হেরাথ অন্তত এই বিষয়টি বোঝেন। তার সমসাময়িক সময়ে মুত্তিয়া মুরালিধরণের উত্থান কিছুটা হলেও তো তার ক্যারিয়ারকে প্রভাবিত করেছিল।
সেই চিন্তা থেকেই হয়ত কোচিং ক্যারিয়ারে কোন ক্ষুত রাখতে চাননা হেরাথ। যতদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে রয়েছেন, ততদিন যেন স্পিনারদের সাফল্য দেখে যেতে পারেন, সে প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন রঙ্গনা। তাছাড়া সাকিব আল হাসানের উত্তরসূরীও তো খুঁজে বের করা প্রয়োজন।
হয়ত মেহেদী হাসান মিরাজ সেই জায়গাটা নেবেন। তবে তাকে সঙ্গ দিতেও তো আরও বেশ ক’জন বিশ্ব মানের স্পিনার থাকা প্রয়োজন পাইপলাইনে। যাতে করে সংকটে না ভুগতে হয় টাইগারদের। তেমনই চিন্তা-ভাবনা থেকে সামনে স্পিনারদের নিয়ে আরও আয়োজনের আভাসও মিলছে। হেরাথের অধীনেই হয়ত স্পিনের নববিপ্লবের সাক্ষী হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট।