নেপাল ক্রিকেটের সবথেকে বড় নাম থেকে বনে গেলেন সবথেকে বড় দুর্নাম। নেপালের ক্রিকেটের পোস্টার বয় খ্যাত সন্দীপ লামিছানে অপার সম্ভাবনার দুয়ারে দাঁড়িয়ে সম্ভবত নিজ হাতেই সব অর্জনে কালিমা মাখলেন। বাইশ বছরের জীবনে এই ক্রিকেটার খেলেছেন বিশ্বের সবচেয়ে জৌলুসে ভরা ফ্রাঞ্চাইজি আসর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল)।
তাছাড়া পিএসএল ও বিপিএলের নিয়মিত মুখ ছিলেন তিনি। খেলেছেন বিগ ব্যাশের আসরেও। কিন্তু অল্প বয়সে এত সব অর্জন সম্ভবত কিছুটা বেপরোয়া করে তুলেছিল এই লেগ স্পিনারকে। তাই হয়তো নিজের সাথে সাথে নিজের দেশের ক্রিকেটকেও কলঙ্কে ডোবালেন। অবশ্য লামিছানের ঘটনায় এখনই এসব সরল ব্যাখ্যায় যাওয়া ঠিক হবেনা। কারণ আপাতদৃষ্টিতে এই অভিযোগকে যতটা সরল মনে হচ্ছে, আদৌও ঘটনাটি ততটা সরল কিনা সেখানে একটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
কারণ সন্দীপ লামিছানে ঘটনায় মোড় ঘুরেছে। অবশ্য লামিছানে আগেই জানিয়েছেন ধর্ষন অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়তে খুব শীঘ্রই দেশে ফিরবেন তিনি। লামিছানে জানতেন দেশে পা রাখার সাথে সাথেই তাঁর হাতে হাতকড়া উঠবে। যেতে হবে শ্রীঘরে। সব জানা সত্ত্বেও ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জ থেকে ঠিকই ফিরেছেন সন্দীপ, ঠিকই পা রেখেছেন নেপালের মাটিতে।
কাঠমুন্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরপরই সন্দীপ লামিছানেকে গ্রেফতার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারের আগে নিজের অফিশিয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লামিছানে জানিয়েছেন যে, ‘তদন্তের সমস্ত পর্যায়ে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবেন তিনি।’
গত ২১ আগস্ট ১৭ বছরের একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীকে নিজের হোটেল রুমে ডেকে এনে দু’বার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে সন্দীপ লামিছানের বিরুদ্ধে। গেল ৮ সেপ্টেম্বর লামিছানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এমনকি নেপাল পুলিশ তাঁকে খুঁজে না পেয়ে ইন্টারপোলের ও সাহায্যও চেয়েছিল। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরপরই জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) তাঁর দল জ্যামাইকা তালাওয়াসও তাঁকে ছেড়ে দেয়। এই অভিযোগের দরুন লামিছানের ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারের ফুলস্টপ ঘটলো বলা যায়।
এদিকে সন্দীপ লামিছানে প্রথম থেকেই ধর্ষণের অভিযোগটি অস্বীকার করে আসছিলেন। তাঁর মতে এটা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। বারবার তিনি ন্যায়বিচার পেলে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
এক ইন্সটাগ্রাম পোস্টে লামিছানে আগে বলেছিলেন, ‘আমি নির্দোষ এবং নেপালের আইনের ওপর আমার পুরো বিশ্বাস আছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সিপিএল থেকে বেরিয়ে যাব ও কয়েকদিনের মধ্যে নেপাল চলে যাব। আমি সব ভিত্তিহীন অভিযোগের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। আশা করি নির্দোষের প্রতি বিচার হবে এবং সঠিক তদন্ত হবে। আশা করব আইন সবার জন্য সমান হবে।’
শেষমেষ লামিছানে তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশে ফিরেছেন। এবং সবাইকে জানান দিয়েই এসেছেন। গ্রেপ্তারের আগে সন্দীপ লামিছানে আরও বলেন, ‘আমি শীঘ্রই আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা অন্যায় মামলা এবং অভিযোগের বিরুদ্ধে আইনি সহায়তা চাইব। আমি নিশ্চিত যে আমি ন্যায়বিচার পাব। আমি আমার প্রিয় দেশের নাম ও খ্যাতি করতে শীঘ্রই ক্রিকেট মাঠে ফিরে আসব। এই মুহুর্তে আমি দ্রুত বিচারের জন্য প্রার্থনা করছি।’