মানুষ তাঁর স্বপ্নের সমান বড়, কথাটির প্রমাণ যেন প্রতি ম্যাচেই দিয়ে যাচ্ছেন আফগান দলপতি রশিদ খান। একজন পুরোদস্তুর স্বপ্নবাজ তরুণ তিনি। স্বপ্ন দেখেছেন, স্বপ্ন দেখিয়েছেন আর বর্তমানে সেই স্বপ্ন সুখ পুরো দলকে নিয়ে উপভোগও করছেন। আফগানদের অসাধারণত্বের অন্যতম কাণ্ডারি রশিদ খান, দ্য বিলিভার, দ্য অ্যাচিভার।
রশিদ খান আরমান, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের নানগার্হার অঞ্চলে জন্ম নেয়া এই যুবক এখন দেশের রত্নে পরিণত হয়েছেন। আফগান যুদ্ধের সময়টায় তাঁর পরিবারসহ পাকিস্তানে পালিয়ে যায় এবং সেখানেই বসবাস করতে শুরু করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারে স্বদেশে ফিরে আসেন, ধীরে ধীরে নিজেকে ঘিরে ফেলেন ক্রিকেটের চাদরে।
এবারের বিশ্বকাপে তাঁর নেতৃত্বেই শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে বিশ্বমঞ্চে পরাজয়ের স্বাদ দিয়েছে। তাঁদের সবশেষ ম্যাচে বাংলাদেশ তো অসহায় আত্মসমর্পণই করে বসলো রশিদ বাহিনীর কাছে। দলের এই সাফল্যের পিছেন যে তাঁর রয়েছে বেশ ভূমিকা। ব্যাট, বল কিংবা ফিল্ডিং সবখানেই ছিল এই ডান হাতি অলরাউন্ডারের ছোঁয়া।
রশিদ খান বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের জন্য কতটা মরিয়া ছিলেন, তা একটি ছোট্ট ঘটনাতেই স্পষ্ট। ইনিংসের শেষ ওভারে দুইটি রান নিতে সতীর্থ করিম জানাতকে প্রান্ত বদলের ইশারা করেন। তবে করিম অসম্মতি জানালে, তিনি ক্ষোভে তাঁর ব্যাট ছুঁড়ে ফেলেন।
কেননা রশিদই বুঝেছিলেন ঐ মুহুর্তে রান বাড়ানো কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বড় শট খেলতেই মূলত তিনি স্ট্রাইকে যেতে চেয়েছিলেন। যদিও দিনশেষে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে আফগান বাহিনী।
২০১৫ সালে প্রথমে ওয়ানডে আর তারপরেই টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় এই তরুণ আফগানের। দেশের জার্সিতে ছাড়াও, তিনি খেলেছেন বিশ্বের নামিদামী সব ফ্রাঞ্চাইজি লিগে। ম্যাচে নামলেই চোখে-মুখে তাঁর সতেজ আত্মবিশ্বাস স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
রশিদকে দলে ভেড়ালেই যেন ষোল আনাই লাভ। ২০১৮ সালে তো বনে গেলেন বিশ্বের এক নাম্বার অলরাউন্ডার। সেটা শেষ নয়, বরং সেখানেই শুরু হয় রশিদ খানের যাত্রা। বাকিটা ইতিহাস। শহিদ আফ্রিদি এবং এবি ডি ভিলিয়ার্স যার আদর্শ, তাঁর কাছ থেকে এমন অসাধারণ পারফর্ম্যান্স তো প্রত্যাশিত। আফগানিস্তানের সামনে এখন প্রোটিয়া বাঁধা, তারপরেই স্বপ্নের ফাইনাল।
রশিদ খান স্বপ্ন দেখেছেন, বিশ্বাস রেখেছেন নিজের সামর্থ্যের উপর। আর ফলাফলটা ইতিমধ্যেই পেতে শুরু করেছেন। বিশ্বকাপের শিরোপা ছুয়ে দেখার ইচ্ছা তবে বাস্তবে পরিণত করতে চলেছে স্বপ্নবাজ এই আফগান।