ইংল্যান্ড-ভারত পঞ্চম টেস্ট শুরুর আগে টুইটারে সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার ও ধরাভাষ্যকার মাইকেল ভনের একটি টুইট চোখে পড়ল, ‘নো অশ্বিন রবি! রিডিকিউলাস।’ চলমান ভারত-ইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্ট সিরিজে দলে রবিচন্দ্রন অশ্বিন জায়গা না পাওয়াতে সাবেক এই ক্রিকেটার বেশ বিরক্তই হয়েছেন।
অবশ্য, ভারত যখনই দেশের বাহিরে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়া এর সাথে টেস্ট খেলে সেখানে রবিচন্দ্রন অশ্বিন এর দলে জায়গা হয় না- বিষয়টা অনেকটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডানহাতি ব্যাটার ও ডানহাতি অফব্রেক বোলার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। সাম্প্রতিককালে দলে বেশ অবহেলিত একজন ক্রিকেটার তিনি। ইংলিশ অলরাউন্ডার মঈন আলী গেল সপ্তাহে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন এজবাস্টনে মাঠের যে কন্ডিশন তাতে অশ্বিন ও জাদেজা দুইজনকেই ভারতের খেলানো উচিৎ ছিল।
ধারণা করা হচ্ছিল স্পিনের অদম্য সমার্থক রাহুল দ্রাবিড় কোচিংয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর অশ্বিনকে বিদেশের মাটিতে নিয়মিত দেখা যাবে। তাছাড়া ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকসের সাথে অশ্বিনের ইতিহাস মাথায় রেখেও মনে হচ্ছিল এবার বার্মিংহামে ফিরবেন অশ্বিন।
অতীতে বেন স্টোকসকে ১১ বার সাজঘরে পাঠিয়েছিলেন তিনি। ইংলিশদের শক্তিশালী ব্যাটার বেন স্টোকস এর দ্রুত উইকেট ভারতের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এজবাস্টনের মাঠটাও অশ্বিনের বোলিং এর জন্য বেশ উপযোগী। কিন্তু তারপরও অশ্বিনের সুযোগ হয়নি মাঠে নামবার।
২০২১ সালে ভারত যখন ইংল্যান্ডের সাথে সিরিজ খেলতে যায়, সেবার তৎকালীন কোচ রবি শাস্ত্রী অধিনায়ক বিরাট কোহলির সাথে আলাপ-আলোচনা শেষে অশ্বিনকে বাদ দেয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তখন বলা হয়েছিল অশ্বিনের চেয়েও ওই কম্বিনেশনে জাদেজা বেশি ফিট। পাশাপাশি সে ব্যাটিংয়েও ভূমিকা রাখে এবং উইকেট না পেলেও সে ব্যাটারদের সুযোগ কম দিয়ে বোলিং করতে সক্ষম।
যদিও এর জবাবে সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার ও ধরাভাষ্যকার মার্ক বুচার বলেছিলেন, ‘কিন্তু অশ্বিনেরও পাঁচটি টেস্ট সেঞ্চুরি আছে।’ শাস্ত্রী একমত পোষণ করেছিলেন। কিন্তু তাও ওভালের চতুর্থ টেস্টে দলে জায়গা দিয়েও টসের বিশ মিনিট আগে মেঘের দোহাই দিয়ে শার্দুলকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই অশ্বিনের মনঃক্ষুন্ন হয়েছিল সেবারও।
অশ্বিন এই অবধি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৭ টি উইকেট নিয়েছেন। তিনি ভারতের হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হওয়ার রেকর্ড থেকে মাত্র আটটি উইকেট দূরে রয়েছেন। অথচ এবারের বার্মিংহাম টেস্ট সহ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গত চারটি টেস্টে তিনি ছিলেন দলের বাহিরে । আইপিএল শেষে মুম্বাইয়ের একটি প্রমোশনাল ইভেন্টে এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন অশ্বিন।
গেল বছর ঝুলে থাকা ভারত বনাম ইংল্যান্ডের পঞ্চম টেস্ট ম্যাচ ইতোমধ্যেই মাঠে গড়িয়েছে। করোনার জন্য গত বছর শেষ টেস্টটি না খেলেই দেশে ফিরে এসেছিল কোহলিরা। সেই টেস্ট ম্যাচটি এবার হচ্ছে এজবাস্টনের মাঠে।
পঞ্চম টেস্টেও দলে নেই রবিচন্দ্রন অশ্বিন। পাঁচ টেস্টের প্রথম টেস্ট ম্যাচটি হয়েছিল ড্র । সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ভারতীয় দলের জন্য তবুও শুভকামনা রাখছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। সুযোগ না দেয়ায় ক্ষোভটা টিম ম্যানেজমেন্ট এর প্রতি। কিন্তু দেশ তো! দেশ হেরে যাক তা চান না।
অশ্বিন বলেন, ‘আমি চাই ভারত ৩-১ এ জিতুক। কারণ তখন আমি পেছনে ফিরে বলতে পারবো আমি এই ভারতীয় দলের অংশ ছিলাম, যারা অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের সাথে জিতেছিল, যদিও আমরা দক্ষিণ অফ্রিকার সাথে জিততে পারিনি।’
অশ্বিন কি কেবল পরিস্থিতির বলি নাকি তাঁর দলে জায়গা না পাওয়ার পেছনে কাজ করছে নিখুঁত কোন রাজনীতি? সে যাই হোক। অশ্বিন শীঘ্রই হয়ত ফিরবেন মাঠে, ক্রিকেটের মাঠে ছড়িয়ে যাক রবির দ্যুতি।